শ্রেয়া চক্রবর্তীর খুদে গল্প ‘একটি ছলনাময় রূপকথা’
প্রকাশিত : আগস্ট ২২, ২০২৩
এক বনে এক মায়াবী রাক্ষসী থাকতো। বনের পথে চলা অশ্বারোহীদের বিভ্রান্ত করার জন্য সে সুন্দরী নারীর রূপ ধরতো। কেউ কেউ বিভ্রান্ত হলেও জঙ্গলের পথে এই অচেনা নারীর কথায় চালিত না হয়ে শেষ পর্যন্ত ঘোড়া ছুটিয়ে চলে যেত।
একদিন বনের পথে দেখা গেল এক রাজপুরুষকে। সাদা রঙের ঘোড়ার ওপর তার রূপ আর বেশভূষা দেখে রাক্ষসীর লোভের সীমা থাকলো না। সে মনে মনে ভাবলো, এই যদি হয় রাজরূপ তাহলে রাজপ্রাসাদটি না কত সুন্দর হবে! ভেতর ভেতর লালায়িত হয়ে রাক্ষসী সেই মুহূর্তে সুন্দরী নারীর রূপ ধরে তরুণ রাজার সামনে আবির্ভূত হলো। রাজা তো যুদ্ধ থেকে ফিরছিলেন। এমনিতেই তিনি ক্ষুধার্ত ও পিপাসায় কাতর।
বনের পথে অপরূপার রূপে রাক্ষসী সুরেলা কণ্ঠে বলে উঠলো, রাজপুরুষের সেবায় সে প্রস্তুত।
রাজার মন খুব ভালো। ভাবলেন, নিশ্চয়ই এই নারী যে-সে নারী নয়। তিনি ঘোড়া থেকে নেমে পড়লেন। ক্লান্ত রাজাকে নিজের কুটিরে নিয়ে গিয়ে তুললো রাক্ষসী। এরপর এমন গান শোনালো এমন নাচ দেখালো আর সেবা করলো যে, রাজা খুশি হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কী বর চাই?
সুন্দরীর বেশে রাক্ষসী বললো, আমাকে আপনার স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করুন রাজন।
রাজা তখন বেজায় খুশি। রাক্ষসীকে সুন্দরী গুণবতী নারী ভেবে বিয়ে করে রাজপ্রাসাদে নিয়ে এলেন।
রাজপ্রাসাদ খুব সুন্দর। কিন্তু সেখানে মন টেকে না রাক্ষসীর। জঙ্গলের পথ আর জানোয়ারের গন্ধ না নিয়ে সে বেশিদিন থাকতে পারে না। এরপর চাই তার কাঁচা মাংস। সুন্দরীর বেশ ধরলেও রাক্ষসীর স্বভাব সে কতদিন আর লুকিয়ে রাখবে!
তাই এক রাতে স্বয়ং রাক্ষসীর বেশে সে রাজার সামনে আবির্ভূত হয়ে বললো, রাজবংশের স্ত্রী হওয়ার লোভে আমি রাক্ষসী হয়েও সুন্দরীর বেশ ধরেছিলাম। কিন্তু এই রাজকীয় ঐশ্বর্যের মাঝে কাঁচা মাংস না খেয়ে এই রাজবেশ ধরে আমি থাকতে পারবো না। আমি জঙ্গলে চললাম। খেয়েদেয়ে পেট ভরলে আবার রাজপ্রাসাদে এসে ঘুরে যাব।
রাজা খুব রেগে উঠে বললেন, এত বড় দুঃসাহস! এই ভয়ংকর ছলনার জন্য আজ থেকে তোমার সঙ্গ ত্যাগ করলাম।
রাক্ষসী হা হা করে হেসে সুন্দরীর রূপ ধারণ করে বললো, আপনি আমার সঙ্গ ত্যাগ করতেই পারেন কিন্তু আমাকে ত্যাগ করতে পারবেন কি?
রাজা জিজ্ঞেস করলেন, কেন নয়?
নুপূরের শব্দ তুলে রাজপ্রাসাদ থেকে জঙ্গলের পথ ধরার আগে রাক্ষসী দুটো কষদাঁত বের করে বললো, কারণ আমার পেটে আপনার সন্তান। সেই পূর্ণিমার রাতে আমার কথাতেই আপনি অসাবধানী হয়েছিলেন। সেটাই ছিল আমার মোক্ষম ছলনা। আজ আরেক অমাবস্যা।
রাজপ্রাসাদের পিছনে যে নুড়িপথ জঙ্গলে গিয়ে মিশেছে, শূন্য চোখে রাজা সেই অন্ধকারের দিকে চেয়ে রইলেন। আর মনে মনে ভাবলেন, সারা জীবন ধরে অস্ত্রাগারে এত অস্ত্র সংগ্রহ করেছেন তিনি। অথচ... ছলনা...