শ্রেণিবিভক্ত সামাজিক সমস্যার স্বরূপ ও শ্রেণিতাত্ত্বিক সমাধান

হাসান সিদ্দিক

প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৮

শ্রেণীবিভক্ত সমাজ, রাষ্ট্রে যেকোন পরিস্থিতি ও সমস্যাকে বিচার করতে হয় শ্রেণীগত অবস্থান থেকেই। কেউ সে কাজটি করেন সচেতনভাবে, কেউ করেন অসচেতনতার সাথে। চুড়ান্ত বিচারে কোন মানুষের বিশ্লেষণ তার শ্রেণীগত পরিচয়ই তুলে ধরে। দুই শ্রেণীর দৃষ্টিভঙ্গী যেমন আলাদা তেমনই সমাধানের লক্ষ্যও অভিন্ন নয়। ধর্ষক আর সকল নর এক কথা নয়। ধর্ষক এর অতীত ইতিহাস, বেড়ে ওঠা, খোজ নিলেই বোঝা যায় এই সমাজ, রাষ্টই এদের জন্য অভয়ারণ্য গড়ে তুলেছে।

 

প্রশ্ন উঠতে পারে তবে কেন একই সমাজ, রাষ্ট্রে বেড়ে উঠে সংখ্যাগরিষ্ঠগণ বিপথগামী হয় না? পরিবারের সদস্যদের ভূমিকাই এক্ষেত্রে প্রধান। যারা পরিবার থেকে সঠিক দিকনির্দেশনা, ভালবাসা পায় না তাদের পক্ষেই সুযোগ থাকে বখাটেপনা করে বেড়ানোর।

 

সেসব পরিবারের সদস্য কেন তাদের সন্তানের সঠিক যত্ন নিতে ও সময় দিতে পারে না? কর্মজীবী পিতামাতা এবং দেখাশোনা করার জন্য অন্য কোন নিকট বয়োজ্যেষ্ঠ কেউ না থাকা । বিদ্যমান আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় একজনের আয়ে পরিবারের সকলের সব দায়িত্ব পালন করা যায় না। মুষ্টিমেয় যে গোষ্ঠীর সে সুযোগ আছে তাদের কথা আলাদা। যাদের বাড়ি,গাড়ি, অফিস, ক্লাব সর্বত্র শীতাতপনিয়ন্ত্রিত সেই গোষ্ঠী আমাদের তালিকায় নেই। সেটা অন্য আলোচনা। তাদের সমস্যা নিয়ে এখানে আলোকপাত করতে চাই না।

 

নির্মূল করতে হলে অনেক গভীরে যেতে হবে, জোরালো আঘাত করতে হলে, সর্বাত্মক কর্মসূচি চাই, রাষ্ট্র কে সংস্কার এর আশা বাতুলতা। সমাধানের পথ গুলো তাই শ্রেণীগত রাজনৈতিক প্রশ্ন । রাজনীতি কে বাদ দিয়ে, পাশ কাটিয়ে যারা শুভ ইচ্ছা পোষণ করেন,তাদের কাছে এসব নাপসন্দ।

 

`বদলে যাই, বদলে দিন` এই শ্লোগান মানুষকে অরাজনৈতিক হতে উদ্বুদ্ধ করে। যারা এসবের উদগাতা ও প্রচারক তারা জেনে শুনেই সেটা করে। কেন করে? সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদেরকে শ্রেণীবিভক্ত সমাজ, রাষ্ট্র এবং শ্রেণিগত পরিচয়ে কে কি কি চারিত্রিক গুণাবলী, বৈশিষ্ট্যাবলী ধারণ করেন, সেসব অধ্যয়ন করা,উপলব্ধি করা অবশ্যকর্তব্য।

 

সামাজিকীকরণ তাই এত দরকার। পুঁজিবাদ কিভাবে মানুষকে সমাজচ্যুত করে সে ইতিহাস জানা বোঝা খুব দরকার আমাদের। বিচ্ছিন্নতা তত্ত্ব কথাটা এজন্যই এত প্রাসঙ্গিক। Theory Of Alienation এর কথা যারা জানেন, তারা ভাল বুঝবেন।

 

দৈনন্দিন জীবনে আমরা এত এত সমস্যা ও সংকটের মুখোমুখি হই যার সূতিকাগার আসলে পুঁজিবাদ। এই সত্যটা আমাদের ক`জনের নিকট পরিষ্কার তার ওপরই নির্ভর করছে কে কতটা সচেতন নাগরিক। কে কোন স্তরের/ মাত্রার সচেতন,সেটাও বোঝা যাবে কে কিভাবে এসব সমস্যার সমাধান হওয়া সম্ভব বলে মনে করেন। সামাজিক ব্যবস্থার কি কি উপকারিতা সেসব অনুধাবন করা কর্তব্য। সমাজকে ফিরিয়ে আনতে হলে সামাজিক ব্যবস্থা ও নিয়ম কানুন প্রতিষ্ঠা করতে হয়। আর সেই কাজ করতে হলে প্রধান যে বাধা, তাকে পরাজিত করা চাই। প্রধান বাধা কি ?

 

আমরা বলি রাষ্ট্র যা পুঁজিবাদের মাধ্যমে চলে। অর্থাৎ পুঁজিবাদী রাষ্ট্র । এখন কোন পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে সামন্তবাদের অবশিষ্ট রেশ থাকে, একেবারে অতীত অবস্থার নির্মূল/বিলুপ্তি ঘটে না। আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক পরিবর্তনের ধরণই এমন, এগুলো ধীরেধীরে রূপান্তরিত হতে থাকে সময়ের পরিক্রমায়। তাই একটি রাষ্ট্রের কত শতাংশ জনগোষ্ঠী সামন্তবাদী অধঃক্ষেপণ এর সাথে জড়িত, আর কত শতাংশ পুরোপুরি পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় নিমগ্ন সে পরিসংখ্যান জানা দরকার। রাষ্ট্রের স্বরূপ সঠিক দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী উপায়ে নিরূপণ করা আবশ্যক। তারপরই আসে রাষ্টকে বিলুপ্ত করার আয়োজন কি ও কেমন হওয়া উচিৎ।