শুভ জন্মদিন লেনিন
রিফাত বিন সালামপ্রকাশিত : এপ্রিল ২২, ২০১৯
আজ লেনিনের জন্মদিন। রুশ বিপ্লবকে শুধু রাশিয়ার বিপ্লব হিসেবে দেখলে একটু ভুল হবে। মার্কিন অধ্যপক রিচার্ড পাইপস-এর মতো লেখকদের মিথ্যাচার পড়ে অনেকেই রুশ বিপ্লবকে "ক্যু" মনে করে। শুধু কট্টোর ডানপন্থীরাই না, হাল আমলের পাতি নিয়ো-লিবারেল পড়ুয়ারও এসব অখাদ্য খেয়েই বেড়ে উঠছে। আর এই নিয়ো-লিবারেলদের নিয়ে আবার মার্ক্সবাদের ছাত্রদের নানা রঙ্গ! ফেসবুকের সুবাদে সেটা চোখেও পড়ছে রোজ রোজ। এই হচ্ছে আমাদের জ্ঞান চর্চার বর্তমান নমুনা।
আজ শ্রীলঙ্কা থেকে আফ্রিকা পর্যন্ত ধর্মের নামে আমরা যে হানাহানি দেখছি তার অন্তর্নিহিত কারণ আসলে পুঁজিবাদ। লেনিনের নেতৃত্ব রুশ বিপ্লব আমাদের পুঁজিবাদ থেকে মুক্তির পথ দেখিয়েছে। কিন্তু লেনিন পরবর্তী বলশেভিক পার্টির নানা অবান্তর-অন্যায়ের কারণে সে বিপ্লব আর টিকতে পারেনি। এতো ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যবাদী দুনিয়ার কাছে এই বিপ্লব দুর্বল হয়ে গেছে। তার দায় যেমন পুঁজিবাদের, সমান দায় সমাজতন্ত্রীদেরও। তবে আদর্শ টিকে থাকলে আবার শক্তিশালী হয়ে আবার ফিরে আসবে সে। বিপ্লব পরবর্তী সোভিয়েত নীতি নিয়ে সমালোচনা করা অন্যায় না বরং তা থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি, নিজেদের ভুল বুঝতে পারি। কিন্তু রুশ বিপ্লবকে "ক্যু" বলা বা শুধুমাত্র একটা পার্টির ক্ষমতা দখল করা হিসেবে দেখার অর্থ অজ্ঞতা। ইতিহাসের বই আমাদের তথ্য দেয় কিন্তু সে তথ্যকে দেখতে হবে ইনসাফের চোখে।
ভ্লাদিমির লেনিন (Владимир Ильич Ленин), গ্রামসির ভাষায় বলা যায় "অরগানিক ইন্টেলেকচুয়াল"। তাকে ছাড়া রুশ বিপ্লব সম্ভব ছিল না। লিয়ন ট্রটস্কি এবং জোসেফ স্ট্যালিনের অবদানও সমান। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল লেনিনের। জন্ম ২২ এপ্রিল ১৮৭০,আজকের দিনে। মাত্র ৫৩ বছর বয়সে ২১ জানুয়ারি ১৯২৪ তার মৃত্যু হয়।
প্রায় ১৫ কোটির সোভিয়েত ইউনিয়নে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ হাজার মানুষ (শ্রমিক-বলশেভিক কর্মী-সেনা) যখন ক্ষমতা দখল করে, তখন বুঝতে হবে এটা "বিপ্লব"। ১৯১৮ হতে ১৯২৩ সাল পর্যন্ত গৃহযুদ্ধের কবলে পড়ে সোভিয়েত ঐক্য, তারপরেও তা টিকে গিয়েছিল। ১৯২৩ সালে নবগঠিত সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর বলশেভিকদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা লাভের মধ্য দিয়ে যুদ্ধের অবসান ঘটে। কিন্তু শুধুমাত্র "ক্যু"করেই ১৪/১৫টা সাম্রাজ্যবাদী দেশের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় টিকে থাকা যায় না, এই সাধারণ জ্ঞানের বড়ই অভাব আমাদের।
নতুন করে কিছু বলার নাই। লেনিন বা রুশ বিপ্লবের নানা আলোচনা-সমালোচনা জরুরি। কিন্তু তা সত্য নির্ভর হলেই সবার মঙ্গল। লেনিনের পূজা-আর্চনা না করে তার অবদান এবং আদর্শ আমাদের বারবার পড়তে হবে সাথে তার পার্টির ভুল পদক্ষেপ নিয়েও আলাপ করতে হবে। এই বিপ্লবের সাফল্য বিষয়ক একটা লেখার সামান্য অংশ আমাদের সবার পড়া উচিত-
গৃহযুদ্ধের পর এক দশকের মধ্যে নিরক্ষরতা দূরীভূত হয়েছিল।
সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়েছিল। সেই সঙ্গে সাত বছরের সর্বজনীন শিক্ষা এবং ১০ বছরের সর্বজনীন মাধ্যমিক শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছিল। অথচ সেই সময়ে ইউরোপের অন্য কোনো দেশ তা চালু করতে পারেনি।
জমিদারি প্রথার বিলুপ্তি ঘটে এবং গরিব কৃষক ও খেতমজুরদের যৌথ খামার এবং সমবায়ে অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
বিপ্লবের পরেই সব নাগরিকের বিনা খরচে চিকিত্সা সেবা নিশ্চিত করা হয়।
বেকারত্ব দূর করে সবার জন্য কাজের ব্যবস্থা নিশ্চিত হয় এবং ১৯৩৬ সালের মধ্যে সব এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।
নতুন সরকারের প্রথম পদক্ষেপ ছিল মহিলাদের সমানাধিকার, ভোটের অধিকার, সমান মজুরি, মাতৃত্বকালীন অধিকার এবং বিবাহবিচ্ছেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা সুনিশ্চিত করা।
রাষ্ট্রীয় খরচে বিভিন্ন বইপত্র, তার সঙ্গে চলচ্চিত্র, সংগীত ও শিল্পকলা নিয়ে প্রকাশনা ও পরিবেশনা উন্মুক্ত করা হয়েছিল।