ছবিটা ২০১৫ সালের। শিল্পী জহুরের আঁকা শিবের অনুকরণে..
শিব বনাম পুঁজিবাদ
রিফাত বিন সালামপ্রকাশিত : মার্চ ০৪, ২০১৯
শিব...
ভারতীয় দর্শনের সবচেয়ে বড় ক্ষতি সম্ভবত ব্রিটিশদের হাতেই হয়েছিল। অন্তত আমার পড়া ইতিহাস তাই বলে। কারণ সাম্রাজ্যবাদের আঘাত বড়ই নির্মম। অন্য সকল অর্থনৈতিক কাঠামো নানা শতাব্দীতে আঘাত করেছে মানুষের ইতিহাসের উপর, কিন্তু পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক কাঠামো সামান্য কিছু কালেই তার অধিক আঘাত এনেছে। তাই তার পতন একইভাবে হবে, দ্রুত।
ফলে এই অঞ্চলে দর্শন পাঠ বা দর্শন চর্চার আর তাগিদ নাই। দর্শন মানেই যেন অহেতুক অথচ দর্শনই দুনিয়া শাসন করে। দর্শন থেকেই শ্রেণী চিন্তার জন্ম আর শ্রেণীর দ্বন্দ্ব।
শিব মূলত কৃষি ও পশুপালনের দেবতা (আরো নানান মতামত আছে। সেগুলো দুর্বল)। মহেঞ্জোদাড়োয় খননকার্য চালানোর সময়ও যে সিলমোহর আবিষ্কৃত হয়, তাতেও শিবকে একইভাবে দেখা গেছে। তবে ধর্মে শিবকে সে রূপ থেকে সরিয়ে নিয়েছে, কারণ সেটা লেখা হয়েছে উচ্চ শ্রেণীর দ্বারা। ফলে রাখাল শিব ধীরে ধীরে আজকের শিব হয়ে উঠলেন।
শিবের নারী/পুরুষ ধারণা পরিস্কার হওয়া জরুরি। অর্ধনারীশ্বর বেশে শিব অর্ধেক পুরুষ অর্ধেক নারীদেহধারী। এই রূপের অপর একটি নাম হল "তৃতীয় প্রকৃতি" (এসব সাধারণ তথ্য)। এলান গোল্ডবার্গের মত সম্পর্কে উইকি বলছে, "হিন্দু দর্শনে এই রূপের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, এই বিশ্বের পবিত্র পরমাশক্তি একাধারে পুরুষ ও নারীশক্তি।"
শিবলিঙ্গ একটি গোল কিম্বা উপবৃত্তাকার যা কোন বৃত্তাকার ভূমি (base) কে কেন্দ্র করে স্থাপিত। এই গোল ভূমি কে আদি পরশক্তি বা চূড়ান্ত শক্তি। আর সেই গোল কিম্বা বৃত্তাকার অংশ দ্বারা অসীম কে বোঝান হয় যার কোন আদি অন্ত নেই অর্থাৎ যা সর্ববিরাজমান। সর্ববিরাজমান অর্থ হল যা সব জায়গায় অবস্থিত। তাই শিবলিঙ্গ ধারনাটি সাধারণত infinity বোঝাতে কিম্বা জীবনের continuation বোঝাতে অবতারণা করা হয়।
আর - "মহাশিবরাত্রি বা শিবরাত্রি" হচ্ছে হিন্দু শৈব সম্প্রদায়ের নিকট একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান। এই মহাশিবরাত্রি ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী তিথিতে পালিত হয়। মহাশিবরাত্রি হল হিন্দুধর্মের সর্বোচ্চ আরাধ্য দেবাদিদেব মহাদেব ‘শিবের মহা রাত্রি’। অন্ধকার আর অজ্ঞতা দূর করার জন্য এই ব্রত পালিত হয়। (সাধারণ তথ্য)
এই বাক্যটা দিয়েই আলাপ শেষ করা যায় "অন্ধকার আর অজ্ঞতা দূর করার জন্য এই ব্রত পালিত হয়।" অথচ সেই সম্পুর্ণ শিব আজ শুধু পুরুষ রূপে হাজির হয়েছে। যেভাবে দর্শন থেকে পুরাণ থেকে ধর্মের জন্ম হয়। প্রাচীন ভারতীয় দর্শন আর চর্চা হয় না। কারণ দর্শন পাঠ এবং সেই পাঠ ধারনের জন্য যে মস্তিষ্ক জরুরি তা পঁজিবাদী যুগে প্রায় বিরল হয়ে উঠছে। এই অঞ্চলে শত শত বিশ্ববিদ্যালয় আছে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে যে গুরুত্বপূর্ণ কাজ অর্থাৎ "গবেষণা" সেটা হচ্ছে না। ফলে আমার মতো ব-গবেষক মানুষ এসব লিখছে, কারণ আর কেউ লিখছে না! ভারতীয় দর্শন নিয়ে নতুন কোনো কাজের সন্ধান জানা নাই। আছে, হয়তো অনেক আছে, কিন্তু হয়তো সহজলভ্য না। ফলে এই জাত, জাতি, অঞ্চলের মানুষ আরো ধীর করে তুলছে নিজ মুক্তি।