শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের চারটি কবিতা

প্রকাশিত : নভেম্বর ২৫, ২০২০

বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের আজ জন্মদিন। ১৯৩৩ সালের ২৫ নভেম্বর দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বহড়ু গ্রামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে তার লেখা চারটি কবিতা পুনর্মুদ্রণ করা হলো:

দাঁড়াও

মানুষ বড় কাঁদছে, তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও
মানুষই ফাঁদ পাতছে, তুমি পাখির মতো পাশে দাঁড়াও
মানুষ বড় একলা, তুমি তাহার পাশে এসে দাঁড়াও।

তোমাকে সেই সকাল থেকে তোমার মতো মনে পড়ছে
সন্ধে হলে মনে পড়ছে, রাতার বেলা মনে পড়ছে
মানুষ বড় একলা, তুমি তাহার পাশে এসে দাঁড়াও।

এসে দাঁড়াও, ভেসে দাঁড়াও এবং ভালোবেসে দাঁড়াও
মানুষ বড় কাঁদছে, তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও
মানুষ বড় একলা, তুমি তাহার পাশে এসে দাঁড়াও।

যেতে পারি, কিন্তু কেন যাব?

ভাবছি, ঘুরে দাঁড়ানোই ভালো।
এত কালো মেখেছি দু’হাতে
এতকাল ধরে!
কখনো তোমার কোরে, তোমাকে ভাবিনি।

এখন খাদের পাশে রাত্তিরে দাঁড়ালে
চাঁদ ডাকে: আয় আয় আয়
এখন গঙ্গার তীরে ঘুমন্ত দাঁড়ালে
চিতাকাঠ ডাকে: আয় আয়
যেতে পারি
যেকোনো দিকেই আমি চলে যেতে পারি
কিন্তু, কেন যাব?
সন্তানের মুখ ধরে একটি চুমো খাব

যাব
কিন্তু, এখনি যাব না
একাকী যাব না অসময়ে

চাবি

আমার কাছে এখনো পড়ে আছে
     তোমার প্রিয় হারিয়ে যাওয়া চাবি
কেমন করে তোরঙ্গ আজ খোলো?

থুতনিপরে তিল তো তোমার আছে
     এখন? ও মন নতুন দেশে যাবি?
চিঠি তোমায় হঠাৎ লিখতে হলো ।

চাবি তোমার পরম যত্নে কাছে
     রেখেছিলাম, আজই সময় হলো–
লিখিও, উহা ফেরত চাহো কিনা।

অবান্তর স্মৃতির ভিতর আছে
     তোমার মুখ অশ্রু-ঝলোমলো
লিখিও, উহা ফেরত চাহো কিনা।

অবনী বাড়ি আছো?

দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া
কেবল শুনি রাতের কড়ানাড়া
‘অবনী বাড়ি আছো?’

বৃষ্টি পড়ে এখানে বারোমাস
এখানে মেঘ গাভীর মতো চরে
পরাঙ্মুখ সবুজ নালিঘাস
দুয়ার চেপে ধরে–
‘অবনী বাড়ি আছো?’

আধেকলীন হৃদয়ে দূরগামী
ব্যথার মাঝে ঘুমিয় পড়ি আমি
সহসা শুনি রাতের কড়ানাড়া
‘অবনী বাড়ি আছ?’