লোকসাহিত্য সংগ্রাহক মুহম্মদ মনসুর উদ্দিনের আজ জন্মদিন
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : জানুয়ারি ৩১, ২০২৫
লোকসঙ্গীত, লোকসাহিত্য সংগ্রাহক ও লোকসাহিত্যবিশারদ মুহম্মদ মনসুর উদ্দিনের আজ জন্মদিন। ১৯০৪ সালে পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার মুরারিপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম জায়দার আলী, মাতার নাম জিউয়ারুন নেসা।
১৯২১ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে তিনি প্রবাশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯২৬ সালে বিএ পাস করেন। ১৯২৮ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্ডিয়ান ভার্নাকুলার্সে প্রথম শ্রেণিতে তৃতীয় স্থান অধিকার করে তিনি এমএ পাস করেন।
তার আগে আর কোনো মুসলিম ছাত্র প্রথম শ্রেণি পায়নি। দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি লোকসাহিত্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। লোকসাহিত্য সংগ্রহে মুহম্মদ মনসুর উদ্দীনের আত্মনিবেদন ঘটে প্রবাসী পত্রিকা পাঠে, যা কলকাতা থেকে প্রকাশিত হতো এবং পত্রিকাটির ওই সংখ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংগৃহীত লালনের গান ছাপা হয়, যা কিশোর কবি মুহম্মদ মনসুর উদ্দীনকে লালনের গান সংগ্রহে অনুপ্রেরণা জোগায়।
পরবর্তী সময়ে প্রত্যক্ষ অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছ থেকে। তিনি কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৩১ সালে সরকারি চাকরি দিয়ে, স্কুল সাব ইন্সপেক্টর রূপে। বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনার পর চাকরি শেষ করেন ১৯৫৯ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রফেসর হিসেবে। ১৯৫২ সালে সরকারি মাসিক পত্রিকা মাহে নও এর সম্পাদক ছিলেন ছয় মাসের জন্য।
মুহম্মদ মনসুর উদ্দীনের প্রথম সংগ্রহ ছিল নিজ গ্রাম পাবনার মুরারীপুরের প্রেমদাস বৈরাগীর কাছ থেকে সংগৃহীত লালনের একটি গান পাঠিয়ে দেন প্রবাসীতে, যা ছাপা হয় ১৩৩০ সালের আশ্বিন সংখ্যায়। তার মাধ্যমে আমরা পেয়েছি ত্রয়োদশ খণ্ডে হারামণির মতো লোকসংগীতের অমূল্য সংগ্রহ। এছাড়া তিনি লিখেছেন বাংলা সাহিত্যে মুসলিম সাধনার মতো তিন খণ্ডে বিভক্ত গবেষণাগ্রন্থ।
তার রচিত গ্রন্থসংখ্যা ৪২টি। অমূল্য সব কাজের স্বীকৃতি হিসেবে দেশে-বিদেশে পেয়েছেন অনন্য সব সম্মান, স্বীকৃতি, সংবর্ধনা, পদক। তার জীবনের শতাব্দীর কয়েক দশক তিনি কাটিয়েছেন রাজধানী ঢাকাতে। তার ছিল হুঁকোবিলাস, জুতা ও ইংরেজিপ্রীতি। তিনি আসলে ছিলেন এক বিশ্ব মানব। বাউল-ফকিরদের সঙ্গে তার ছিল নিবিড় যোগাযোগ।
সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৬৫ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ১৯৮৪ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার এবং শিক্ষায় অবদানের জন্য ১৯৭৬ সালে একুশে পদক লাভ করেন।
১৯৮৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।