অলঙ্করণ: মারিয়া সালাম
লেখিকার প্রেমিকেরা
মারিয়া সালামপ্রকাশিত : জুন ২৯, ২০১৯
বইয়ের কাটতি যতই ভালো হোক, আপনার বিরুদ্ধে কিন্তু আমার খুব বড় একটা অভিযোগ আছে, প্রকাশক সাহেব খুব আহ্লাদের সুরে কথাগুলো বললেন।
সায়েরা ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যের একটা হাসি এনে আনমনে নিজের সদ্য প্রকাশিত বইয়ের পাতা উল্টে চলেছে। নবীন লেখকদের মধ্যে সায়েরা এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি আলোচিত। লেখালেখির শুরুটা বেশ আগে হলেও, সায়েরার বই বাজারে এসেছে মাত্র বছর তিনেক আগে। ব্যতিক্রমী থিম, প্রাঞ্জল ভাষাশৈলী আর দারুণ রোম্যান্টিশিজম— এই অল্প সময়েই তাকে বেস্ট সেলারের কাতারে নিয়ে এসেছে।
আপনার প্রতিটি বইয়ের ভাঁজে ভাঁজে রোমাঞ্চ আর সাসপেন্স, উফ কিভাবে বলি আপনি কতটা ভালো লেখেন! গল্পগুলো পড়তে যেমন আনন্দ... আমি বলে রাখলাম, এসব নিয়ে নাটক সিনেমা বানালে সেগুলো একদম ফাটাফাটি হিট হবে। প্রকাশক সাহেব নিজের মনেই বলে যাচ্ছেন। তবে মনে কষ্ট একটাই, ছেলেগুলোকে মেরে ফেলছেন কেন? কোনোভাবেই কি ওদের বাঁচিয়ে রাখা গেল না?
হাতের বইটা বন্ধ করে সায়েরা এবার প্রকাশকের দিকে ঘুরে তাকালো। চোখের রোদ চশমাটা খুলে একটা কৌতুকের দৃষ্টি ছুড়ে দিল প্রকাশকের দিকে। আরে ভাইয়া, আপনাকে নতুন করে আমি কি বুঝাব? আপনি এই লাইনে অভিজ্ঞ লোক, বুঝেনই তো! শুধু শুধু ছেলেদের, বিশেষ করে প্রেমিকদের মেরে ফেলতে কার ভালো লাগে? তবে, এদের মেরে ফেলি বলেই না বইগুলো বিক্রি হয়! মুখে কৃত্রিম হাসি টেনে এক নাগাড়ে কথাগুলো বলল সায়েরা। গল্পের মধ্যে হৃদয় দুমড়ে মুচড়ে দেয়া দীর্ঘশ্বাস, চাপা কান্না, না পাওয়ার বেদনা, এসব না থাকলে পাঠক কেন টাকা দিয়ে বই কিনবে বলুন? সায়েরা প্রকাশকের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে পাশের স্টলের দিকে হাঁটতে থাকে।
হ্যাঁ, সব লেখকেরই নিজস্ব বলে কিছু একটা থাকে, আপনার হলো মৃত্যু, প্রকাশক আগের মতো নিজেকেই নিজে বুঝ দিলেন।
এবার বইমেলায় সায়েরার উপন্যাস, ছোটগল্প আর মোটিভেশনাল লেখাসহ পাঁচটি বই বের হয়েছে। প্রকাশনা সংস্থা ভিন্ন ভিন্ন হলেও বইয়ের কাটতি প্রায় সব স্টলেই একই রকম। বেশ বিক্রি হচ্ছে। মেলার দশদিন যেতে না যেতেই ছোটগল্পের বইটা বেস্ট সেলার। খুব রোমান্টিক ধাঁচের বারোটি ছোটগল্প। প্রতিটি গল্পই নিখাঁদ প্রেমের গল্প, তবে গতানুগতিক প্রেম নয়। এই সময়ের তরুণদের ধরে রাখতে সায়েরা আশির দশকের প্রেমিকদের সামনে এনে লিখেছে গল্পগুলো, কী দারুণ মিষ্টি আর মন নরম করে দেয়া একেকটি গল্প!
কিন্তু প্রতিটি গল্পেই শেষে নায়ককে মেরে ফেলা হয়েছে। গল্প শেষ হলেও তার রেশ থেকে যাবে অনেকক্ষণ, কী একটা না পাওয়ার দুঃখ কুড়ে কুড়ে খাবে পাঠকের কোমল মন, নিজের অজান্তেই বুকের গভীর থেকে বের হয়ে আসবে লম্বা দীর্ঘশ্বাস। গল্পগুলো নিয়ে সায়েরা অনেকদিন কাজ করেছে। রাতের পর রাত জেগে প্রতিটি চরিত্র নিখুঁতভাবে এঁকেছে নিজের কল্পনার জমিনে। একেকটি নায়ককে কল্পনা থেকে টান দিয়ে বের করে এনে দাঁড় করিয়েছে নিজের সামনে। গল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত সারাদিন একেকজন নায়ককে নিজের সাথে নিয়ে ঘুরেছে। প্রতিটি কথোপকথন চালিয়ে গেছে বহুবার, নিখুঁত বুনন আসার আগপর্যন্ত এক কথা বলে গেছে হাজারোবার। কল্পনায় প্রতিটি প্রেমিকের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চালিয়ে গেছে ভালোবাসার আলাপ, রাগ হয়েছে, অভিমান চলেছে, তুমুল ঝগড়া করেছে আবার নিজেই কেঁদে কেঁদে বুক ভাসিয়েছে।
প্রথম গল্পের প্রেমিককে মেরেছে আততায়ীর গুলিতে, সে ছিল রংবাজ। আশির দশকের রকে আড্ডা দেয়া প্রেমিক। পরের গল্পের নায়ক চোখে চশমাপরা নীরিহ ছেলে। বাবা-মায়ের মুখের উপরে কথা বলতে না পেরে যে প্রেমিকার বিয়ের দিনে বিষ খেয়ে মরে। তৃতীয় গল্পের ছেলেটা ভুল সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। প্রেমে পড়ে ভয়ানক খুনী-সাইকো এক নারীর, যার শখ প্রেমিকদের ভুলিয়ে এনে খুন করা। বারোটি গল্পের প্রেমিকরা বারো রকম।
সায়েরা আপা, আপা, এই যে এদিকে, হঠাৎ ভিড়ের ভেতর থেকে ডাক আসায় সায়েরার চিন্তায় ছেদ পড়ল। পাশে ঘুরে তাকাতেই ভিড় ঠেলে এগিয়ে এলো একটা রোগাপাতলা পাঞ্জাবি গায়ে দেয়া ছেলে। আপা, আমাকে আপনি ঠিক চিনবেন না, তবে আমি আপনাকে খুব ভালো করে চিনি।
বাঁকা হাসি ছড়িয়ে গেল সায়েরার মুখে। পাগলটা বলে কি! সায়েরাকে চিনে না এরকম কেউ আছে এই বইমেলায়? সেটা এমন ডেকে ঢোল পিটিয়ে বলার কি আছে? ছেলেটা বলল, আপা, আমি আপনার কয়েক ব্যাচ জুনিয়র, আমরা একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। রহস্যময় একটা হাসি তরুণটির ঠোঁটে। আমি চায়ের দোকানে বসে আপনার অনেক গল্প শুনেছি। আপনি মুখে মুখে অনেক গল্প বলতেন, আমরা সেগুলো শোনার লোভে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে আপনাদের বিল্ডিংয়ের সামনে এসে বসে থাকতাম।
সায়েরা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে ছেলেটির দিকে। সত্যি? বাহ, আমার খুব ভালো লাগছে তোমার কথা শুনে। কি বলে যে ধন্যবাদ দেব, তুমি আমাকে মনে রেখেছ, এই বড় পাওয়া! মনে মনে হাসছে লেখিকা, আমাকে মনে রাখবে না! তাই আবার হয়েছে কোনোদিন!
তবে, শুধু মুখে মুখে গল্প শুনলেই হবে না বই কিনে পড়তে হবে, হাসি মুখে সায়েরা ছেলেটির দিকে নিজের নতুন উপন্যাসের বইটা বাড়িয়ে দেয়।
আমি প্রথমদিনই কিনেছি। পাঁচটি বইই আছে আমার কাছে। সব গল্পই পড়ে ফেলেছি। তবে, আমি হতাশ। আপনার সবচেয়ে সুন্দর গল্পটাই অসমাপ্ত রয়ে গিয়েছে, সেটা কবে আসবে?
সায়েরার গল্প পড়েও কেউ হতাশ হবে, সেটা কেমন কথা! তীব্র বিরক্তি নিয়ে সায়েরা তাকায় ছেলেটির দিকে, কোন গল্পটা বলো তো? ছেলেটা বলল, সেই গল্পটা সেটা আপনি চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে টুকরো টুকরো করে বলতেন। এক প্রেমিকের গল্প, সেই অদ্ভুত ছেলেটির গল্প, যার চোখে চোখ রাখলেই আপনার চোখে অশ্রু এসে যেত, যার পুরো গল্পটা আপনি কখনোই বলেননি। বলেছিলেন, তাকে নিয়ে উপন্যাস লিখবেন।
সায়েরা কপাল কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে ছেলেটির দিকে। এই ছেলেটি হঠাৎ করে এসে এমন একটা বিষয়ে কথা বলে ফেলেছে, যেটা নিয়ে সে নিজেই ভাবছে আজ কয়েকদিন ধরে। বইগুলোর ভালো কাটতি হবার সাথে সাথে সায়েরার উপরে প্রকাশকদের বেশ চাপ তৈরি হয়েছে। আরো তিনটি প্রকাশনী এই মেলাতেই নতুন বই চেয়ে বসেছে। সায়েরা কয়েকদিন থেকেই ভাবছে, রায়হানকে নিয়ে উপন্যাসটা লিখেই ফেলবে এবারের বইমেলায়। সায়েরার অন্যসব নায়ক চরিত্রের মতো রায়হানও একজন। সায়েরার সবচেয়ে দীর্ঘদিনের কাল্পনিক প্রেমিক। বহুবছর ধরে কল্পনায় বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে রায়হানকে। তবে গল্পটা লেখা হচ্ছে না একটা ভয়েই। সায়েরার নায়কদের মরতে হয়, আর রায়হানকে মারতে ওর হাত কাঁপে। কল্পনায় যত প্রেমিক ছিল, সবাইকে মেরেছে একে একে। রায়হানকে মারলে, ওর আর কি থাকবে?
বাবা-মাহীন চরম নিঃসঙ্গ জীবন কেটেছে চাচাদের বাড়িতে আশ্রিতা হিসেবে। প্রাচুর্যের অভাব ছিল না সেখানে, বাবা রেখে গিয়েছিলেন অঢেল সম্পদ। তার উপরে মামাবাড়ির লোকেরাও সারা মাসেই কিছু না কিছু পাঠাতেই থাকতো। বড় হয়েছে রাজকন্যাদের মতো বিলাসবহুল পরিবেশে। তবে কাছের বলতে কেউ ছিল না, মাথায় হাত বুলিয়ে কেউ আদর করার ছিল না, উপরন্ত ছিল কাকিদের ভ্রুকুটি। নিজেকে ওর রাপাঞ্জেলের মতো প্রাসাদে বন্দি রাজকন্যা মনে হতো। ভাবতো, কোনো একদিন এক রাজপুত্র এসে ঠিক ভালোবেসে নিয়ে যাবে।
নিঃসঙ্গ ভাবে বেড়ে উঠেছে বলেই হয়তো কারো সাথেই মিলে যেতে পারেনি, কাউকে বিশ্বাসও করে উঠতে পারেনি। বাড়িতে একা একা বসে বসে পড়ে গেছে গাদা গাদা বই। মানুষকে চিনেছে বই পড়ে, তাই বাস্তবের মানুষগুলোকে ওর ভালো লাগেনি কোনোদিন, এড়িয়ে চলেছে সবসময়। বিরক্ত হয়ে নিজের মতো গড়ে নিয়েছে কল্পনার মানুষ, প্রেমিক। বাস্তবের প্রেমিকদের মতো নয়, ডমিনেটিং প্রেমিক নয়। গল্পের বইয়ের মতো রোম্যান্টিক প্রেমিক, যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা চালিয়ে যেতে পারে, যাদের শব্দের ভাণ্ডার কিছুতেই ফুরিয়ে যায় না, যারা গভীরভাবে চোখের দিকে তাকিয়ে একশোটা কবিতা বলে যেতে পারে অবলীলায়।
আপা, কি সত্যি তো? তাহলে সেই অপেক্ষার পালা কি এবারই শেষ হবে, ছেলেটির কথায় সায়েরার চিন্তায় ছেদ পড়ে।
হ্যাঁ, পাবে আশা করি।
জীবনের সব উপেক্ষা আর অবহেলা পুষিয়ে নিতে নিজের কল্পনার প্রেমিকদের একে একে শেষ করে হয়ে উঠেছি নামকরা লেখিকা। আজ সবার চোখ কেবল আমাকেই খোঁজে, নিজের মনেই বিড়বিড় করে বলে সায়েরা।
ছেলেটিকে বিদায় জানিয়ে ব্যস্ত পায়ে আরেকটি স্টলের দিকে যেতে যেতে ভাবল, আজ রাতেই লেখার কাজে হাত দেবে। সাতদিন সায়েরার ভীষণ ব্যস্ত সময় গেছে। নতুন উপন্যাসের কাজ প্রায় শেষ। রায়হানকে আবার নতুন করে বাস্তবে টেনে বের করে এনেছে সে। গল্পগুলো বহু আগে থেকেই সাজানো ছিল মাথায়। হাতে সময় খুবই কম, সেগুলো শুধু একেরপর এক লিখে গেছে নতুন করে। প্রতিটি ঘটানার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছে। নিজের কল্পনার সব সৌন্দর্য মিলিয়ে এঁকেছে রায়হানের অবয়ব। সেই উদাস বুদ্ধিদীপ্ত চোখ, অবিন্যস্ত চুল, একহারা গড়ন, গভীর দৃষ্টি। সেই প্রাণখোলা হাসি। কল্পনার যত গভীরে ডুব দেয় সায়েরা, মনটা ততই নরম হয়ে ওঠে, চোখে অশ্রু টলমল করে। কম্পিউটারের কী-বোর্ডটা মাঝে মাঝেই ঝাপসা হয়ে ওঠে।
চোখ বন্ধ করে একবার দেখে নেয় প্রেমিককে। রায়হান উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে। হালকা আকাশি হাফহাতা শার্ট আর ধূসর গ্যাবাডিনের প্যান্ট, শার্টের একটা অংশ উদাসীনভাবে ঝুলে আছে প্যান্টের উপর দিয়ে। অবিন্যস্ত চুল আর নাম না-জানা পারফিউমের ঘ্রাণ। দ্রুত টাইপ করতে থাকে ও। কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে, এখন একটাই কাজ বাকি। রায়হানকে মেরে ফেলার কাজ। গতকাল রাতে শেষের অংশটা লিখতে বসে সায়েরার হাত কেঁপে উঠেছে বারবার। গলার কাছে দলা দলা কষ্ট আর চোখ উপচে পড়া অশ্রুর কাছে হার মেনে বিছানায় এলিয়ে পড়েছে। তবে আজ রাতে মনকে বুঝ দিয়েছে, রায়হানকে মরতেই হবে, নতুন উপন্যাস যেভাবেই হোক হিট হতেই হবে মেলায়। সায়েরার অনেক অনেক অনেক মানুষের মনোযোগ দরকার, সত্যিকার মানুষের ভালোবাসা দরকার। কল্পনা নিয়ে খেলতে খেলতে ওর আজকাল খুব ক্লান্ত লাগে। ওর মতো করে না, সায়েরা চায় কেউ একজন তার মতো করে সায়েরাকে ভালোবাসুক। অন্তত সেই জন্য হলেও রায়হানকে বিদায় নিতে হবে। আজ রাতে রায়হানের রোড অ্যাক্সিডেন্টে মৃত্যু হবে। তার আগে সবচেয়ে প্রিয় প্রেমিকের সাথে অনেক কথা বলবে সায়েরা। আজ কপালে আলতো করে একটা চুমুও খাবে বলে ঠিক করে রেখেছে।
আজ রাতে তুমি কি আমাকে খুন করবে? টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে আছে রায়হান। সায়েরা হঠাৎ একটু অবাক হয়, রায়হান কেন তার বেডরুমে আসবে! তার বেডরুমে কারো আসার সুযোগ নাই, এখানে সব একান্তই তার ব্যক্তিগত।
হ্যাঁ, তোমাকে মেরে ফেলবো, কিন্তু সেটা তোমার জানার কথা না। আর বড় কথা হচ্ছে, তুমি আমার রুমে আসবে কেন? তোমাকে তো আমার রুমে কোনোভাবেই আনব না আমি।
মারা যাবার আগে ভাবলাম তোমার সাথে একবার সত্যি সত্যি দেখা করি, তাই চলে এসেছি।
না, এটা তুমি পারো না রায়হান, সায়েরার কণ্ঠস্বর কঠিন শোনায়। সে ক্ষমতা তোমার নাই। তুমি একটা কল্পনার অংশ আর তুমি চাইলেই যা ইচ্ছা তা করতে পারো না। তুমি এক্ষুণি চলে যাবে।
যাবার আগে কিছুক্ষণ গল্প করতে চাই।
না, তুমি নিজে থেকে গল্প করতে পারো না, আমি তোমাকে যা বলতে বলব, তুমি কেবল তাই বলবে।
যেভাবে হুট করে থেকে এসেছিল, সেভাবেই হুটকরে শূন্যে মিলিয়ে গেল রায়হান।
লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে মনটাকে হালকা করতে চেষ্টা করলো সায়েরা। কয়েকদিনের টানা রাত জাগার ফল এসব, নিজেকে বুঝ দিল। সেই সাথে দ্রুত হাত চালাতে লাগল। রাতের মধ্যেই গল্পটা প্রুফ দেখার জন্য পাঠাতে হবে। শেষ অংশটুকু লিখে ঘুমাতে যাবে সায়েরা, কাল্পনিক জগৎটাকে আজ রাতেই বিদায় জানাবে।
‘রায়হানের নিথর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে মাশার মনে হল, আমারতো ওর কপালে আলতো করে একটা চুমু দেবার কথা ছিল।’ শেষ লাইনটা লিখে, ফাইলটা দ্রুত সেন্ড করে দিল প্রকাশককে। হঠাৎ মনে হলো, রায়হানকে একটা শেষ চুমু দেবার কথা ছিল ওর, সেটা দেয়া হলো না শেষপর্যন্ত। কথাটা মনে হতেই সীমাহীন হতাশা পেয়ে বসল ওকে। নিজের অজান্তেই চোখ বেয়ে টপটপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। অসহায়ভাবে বেশ কয়েকবার ডাকলো, রায়হান, রায়হান। খুব শক্ত করে রায়হানের হাতটা ধরতে ইচ্ছা হচ্ছে ওর। ডিম লাইটের নীল আলোয় নিজের ঘরটাকে সায়েরার লাশকাটা ঘরের মতো হিম আর নিঃসঙ্গ মনে হলো। ডুকরে কেঁদে উঠল ও। ঝাপসা দৃষ্টিতে টেবিলের উপরে ফলের ঝাকায় রাখা চকচক করতে থাকা ছুরিটার দিকে হাত বাড়াল জনপ্রিয় লেখিকা সায়েরা শবনম।