লুডউইগ বিটোফেনের একটি প্রেমের চিঠি

ভাষান্তর: হৃদ্য আবদুহু

প্রকাশিত : জানুয়ারি ১৬, ২০২৩

যোহান ভ্যান বিটোফেন ও মারিয়া ম্যাগডালেনা কেভেরিচ দম্পতির সন্তান হিসেবে ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে লুডউইগ বিটোফেনের জন্ম। বিটোফেনের প্রথম সঙ্গীত শিক্ষক ছিলেন তার পিতা। অল্প বয়সেই তার সঙ্গীত প্রতিভার বিকাশ ঘটে। ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে তার মা মারা যান। পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সঙ্গীতজ্ঞ বিটোফেনের জীবন ছিল দুঃখকষ্টে জর্জরিত। এজন্য অবশ্য তার লাগামছাড়া আবেগ ও রুক্ষ মেজাজ অনেকটা দায়ী। ১৮ বছর বয়সে তিনি শ্রবণশক্তি হারান। পরবর্তী জীবনে নানা রোগশোকে তিনি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েন। বিটোফেন ছিলেন অবিবাহিত ও নিঃসঙ্গ। খুব বেশি নিঃসঙ্গ। মারা যান ১৮২৭ খ্রিস্টাব্দে। তার বইপত্রের ভেতর তিনটি প্রেমের চিঠি পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, যার উদ্দেশ্যে সেগুলো লেখা শেষমেষ তাকে আর পাঠানো হয়নি। সেই তিনটি চিঠির একটি এখানে দেয়া হলা:

 

প্রিয়তমা আমার, সর্বস্ব আমার, হে আমার অস্তিত্ব, আজ কয়েকটি মাত্র কথা, তাও তোমার পেনসিল দিয়ে লেখা, আগামীকাল আমার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা ঠিকঠাক না হওয়া পর্যন্ত, শুধু এইটুকুই। এইসব আজেবাজে সময় নষ্ট কী ঘৃণ্য, যেখানে প্রয়োজন সবার আগে সেখানে কেন এই গভীর বেদনা? ত্যাগ না করে কিংবা সবকিছু দাবি না করে আমাদের এই প্রেম কি বাঁচতে পারে? তুমি আমার জীবনের সবকিছু নও, আমিও তোমার জীবনের সবকিছু নই, ইচ্ছে করলেই কি তুমি এটা ফেরাতে পারো? পরিপাটি ওই প্রকৃতির দিকে তাকাও। যা ঘটবেই তার জন্য নিজেকে তৈরি করো। প্রেমের দাবি হচ্ছে, সবকিছুই দিতে হবে। আসলেই তাই। আমার জন্যে তুমি তাই, তোমার জন্যে আমি তাই, কেবল তুমি সহজেই ভুলে যাও, তোমার জন্যে এবং আমার নিজের জন্যে আমাকে বাঁচতে হবে। আমরা যদি পরিপূর্ণভাবে মিলিত হতে পারতাম তাহলে এই বেদনা আমি যত কম অনুভব করি, তুমিও তাই করতে।

 

আমার এবারের যাত্রাটি খুবই ভয়ঙ্কর। ঘোড়া কম থাকায় আমাদের গাড়িটাকে অন্যপথে ঘুরে যেতে হয়েছে। কী ভয়ঙ্কর সেই পথ! শেষের স্টেশনের আগের স্টেশনে ওরা আমাকে সাবধান করে দেয় আমি যেন রাতে বিশেষ একটি ঝোপের পাশ দিয়ে না যাই। কিন্তু এতে আমার আগ্রহ আরও বাড়লো। আমি ভুলই করলাম। কারণ, ওই দুর্গম ভয়ঙ্কর পথের মাঝখানে অন্ধকার রাতে আমাদের গাড়ি ভেঙে চৌচির। ভাগ্য ভালো যে, রাস্তায় ছিটকে পড়িনি। কপাল জোরে যে বেঁচে গেছি, এতেই আমি খুশি। চিরকাল যেমনটা হই। এসব ছেড়ে এবার আসল কথায় আসি। খুব তাড়াতাড়িই হয়তো আমাদের দ্যাখা হবে। আমার জীবন সম্পর্কে একদিন যেসব কথা আমি ভেবেছি তা আজও তোমাকে জানাতে পারছি না। আমরা যদি হৃদয়ের দিক দিয়ে আরও কাছাকাছি থাকতাম তাহলে হয়তো এই সঙ্কোচ থাকতো না। তোমাকে সব কথা বলার জন্যে আমি ব্যাকুল হয়ে উঠেছি। আবার কখনো কখনো মনে হয়, আমাদের কথার কীইবা দাম! উৎফুল্ল হও। আমি যেমন তোমার সবকিছু, হৃদয়ের ঐশ্বর্য, তেমনই তুমিও আমার সেরকম হয়ে ওঠো। বাকিসব ভবিষ্যতের ওপর ছেড়ে দাও। আমাদের যা হবেই, তা হতে দাও।