লাশটার বাড়ি ফেরা জরুরি

রাজীব জবরজং

প্রকাশিত : জানুয়ারি ২৩, ২০১৮

শুরুটা মধ্যরাতে বান্দরবানের একটা পাহাড়ে। আমরা মহুয়া খাইছি। এরপর আরও কী কী যেন খাইছ। খাইয়া তো টাল।
হঠাৎ আমি বকবক শুরু করলাম আমার মতো। আমি এর মাঝে বকবক শুরু করলাম মৃত্যু নিয়ে। আত্মহত্যা। আমি সবাইকে বিশ্বাস করাচ্ছিলাম, আত্মহত্যা একটি মধুপাখির উড়ালের মতো সুন্দর। ফুল, উড়াল আর মধু, এরপর আবার পাখি।

কী কী যেন বলছিলাম। শিমুল বাশার কথার ভেতর বাগড়া দিচ্ছেন ম্যাটেরিয়েলিস্টিক স্বভাবে। আরেকটা কে যেন চুপচাপ শুনতেছে আর মাঝে মধ্যে এটা সেটা একটু একটু কয়। ইসমাইল হোসেন পুরাই চুপ। কিন্তু আমি বলেই যাচ্ছি, যেন আমরা এখানে এসেছি আত্মহত্যার মধু খেতে। বলতে বলতে প্রায় ভোর। আমরা ক্লান্ত হতে শুরু করলাম।
আমি দেখছি শিমুল বাশারের হাতের সিগারেটটাও কেমন জানি ক্লান্তিতে পানসে হয়ে যাচ্ছে। সূর্যটা পাহাড়ে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাহাড়টা কেমন করে জানি কাঁদছিল। আমি সবাইকে বললাম, চলেন মরে যাই।
শিমুল বাশার আমাকে বললো, না না চল উড়ে যাই।
তারপর ওখানে দাঁড়িয়েই দেখছি, আমি আর শিমুল বাশার মরে পড়ে আছি। দাঁড়িয়েও আছি, আবার একইসাথে মরেও পড়ে আছি!

একটু পর ইসমাইল হোসেন বলে বসলো, রাজীব খেয়াল করেছেন, আমার লাশটা কিন্তু দেখা যাচ্ছে না।
আমি অবাক হয়ে শিমুল বাশারকে বললাম, ইসমাইল ভাই তো মরে নাই। অথচ সে বলছে, তার লাশ দেখা যাচ্ছে না।
শিমুল ভাই বললো, তুই  কি বেঁচে আছিস?
আমি বললাম, বুঝতে পারছি না। তবে লাশ তো দেখতে পাচ্ছি।
শিমুল ভাই বললো, তাহলে বেঁচে নেই তুই। আমিও নেই সম্ভবত।

আমরা কেমন জানি চুপসে গেলাম। পাহাড়টা কেঁদেই যাচ্ছে। সূর্যের পাহাড়ে ওঠার প্রস্তুতিও প্রায় শেষের দিকে।
শিমুল ভাই হঠাৎ বললো, আচ্ছা আমাদের লাশগুলোর কি হবে রে?
ইসমাইল ভাই বললো, আমার লাশ আমি কাঁধে করে নিয়ে যাব।
শিমুল ভাই কী করবে, সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। আমি মনে মনে ভাবছিলাম, আমার লাশটা আমি রেখে যাব।
এর মধ্যে ইসমাইল ভাই তার লাশ নিয়ে যাবার জন্য নিজের কাঁধে তুলে নিল। শিমুল ভাই ইসমাইল ভাইকে বললো, এত ভারি একটা লাশ কাঁধে করে নিয়ে  যাবার কোনও মানে হয়? আমারটা আমি লাথি মেরে পাহাড়ের নিচে ফেলে দেব।
ইসমাইল ভাই বললো, আমার এই লাশটার একটা বাড়ি আছে। তার বাড়ি ফেরা জরুরি।