রুচি নিয়ে কিঞ্চিৎ খোঁচাখুঁচি
হামীম কামরুল হকপ্রকাশিত : জুন ২৫, ২০১৮
রুচির অবস্থা মুচির মতো। কোনো এক কোণে তার ঠাঁই। নীরব চুপ রুচি। হৈ হৈ করে কাউকে ডাকে না। আসেন ভাই আসেন, এখানে অনেক মজা— বলে না।
কারো স্বভাবের জুতা ছিঁড়ে গেলে তার কাছে গেল কী গেল না। বেচারা রুচি একা একা কীসের যে জুতা সেলাই করে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। তাতে কার কী?
জয়নুল আবেদিন বলেছিলেন, চারদিকে ভয়াবহ রুচির দুর্ভিক্ষ। তাও তো হয়তো তখন কিছু পাওয়া যেত। এখন রুচি? সুন্দর করে বাংলায় কথা বলা, সুন্দর করে বাংলা লেখার চেষ্টা কিম্বা সাধনা তো লেখকরাই বাদ দিয়ে দিয়েছে।
গ্রীষ্মের চেয়ে সামার তাদের প্রিয়। তার ফ্রাইডেতে ফ্রি, শুক্রবার তাদের একদম পছন্দ না। এজন্য আসলে কিছুই আর বার হচ্ছে না। যেখানে অন্যভাষা অনিবার্য নয়, তার বদলে যত্রতত্র ইংরেজি, ফরাসি, যবনিমিশাল, সো বাট, মেই বি, অ্যাচুয়েলি— এসব বলা মাত্র লোকজনকে এবং নিজেও যদি বলি, তা এত অরুচিকর ও নিজেকে এত অশিক্ষিত লাগে, কী বলব!
হায় বাংলাভাষা এ কার পাল্লায় পড়ল! নিজের দেশের মানুষই এই ভাষাকে তার উচ্চাশার ভাষা ও সৃজনভূমি করতে তুলতে আগ্রহী নয়। তার বদলে কত নিচে একে নামিয়ে নেয়া যায়, হয়া, খায়া, যায়, গিয়া মার্কা খচ্চরের মতো বাংলা লেখাটা রীতিমতো ফ্যাশান হয়ে উঠছে। কিন্তু এতে কেউ কোনো লিখনশৈলী/স্টাইল তৈরি করতে পারছে না।
শিল্পীরা অত্যন্ত গ্রাম্যভাষায় কথা বলে। তারা যদি পাক্কা আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতেন, তা ভালো। আপনি বলুন, কেউ যদি চট্টগ্রামের ভাষার সঙ্গে বগুড়ার ভাষা মিশিয়ে বলে অশ্লীল লাগবে না? এখন ঢাকায় কী বিচ্ছিরি ভাষা, টিভিতে মানুষ কথা বলে! শিল্পীরা মনে করে, এটা তারা সাধারণ মানুষের ভাষায় কথা বলছে। বাস্তবতা হলো শিল্পীরা কখনো তা নন।
তাহলে কষ্ট করে শিল্প করার দরকার কী! বাস্তব জীবনে কি একটা লোক নির্জন হেঁটে গেলে কেউ বেহালায় কোনো সুর তুলে দেয়? জানি না, কীসের ভেতর পড়তে যাচ্ছি আমরা। বাংলাভাষাকে কত বার নষ্ট করার চেষ্ট করা হয়েছিল, সবাই জানেন। আরবি হরফে বাংলা, রোমান হরফে বাংলা। সেটা ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। কিন্তু তাদের প্রেতাত্মারা চেষ্ট চালিয়ে যাচ্ছে। এখন তারা বাংলা হরফে ইংরেজি লিখছে— ফ্রেন্ডস ছাড়া লাইফ ইম্পসিবল।
জগতের কোনও ইংরেজিভাষী এ কথাটা বুঝবে না। কিন্তু আমরা বুঝি। আহা, কী এক বাঙালিই না হলাম আমরা। তলে তলে তাদের গোপন হিংসা আর কপট সাহিত্যপ্রীতি তারা নিজেরাই যদি বুঝত!
লেখক: কথাসাহিত্যিক