রিফাত বিন সালামের ৫ কবিতা

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২৩

আমরাও তো নক্ষত্রচূর্ণ

 

আমরাও তো নক্ষত্রচূর্ণ, আমাদের জন্ম বিগব্যাংয়ের সময়ে
কোটি কোটি নক্ষত্রের মধ্যে আমারাও ছিলাম!
তোমার মনে নেই? একসাথেই ছিলাম মিলেমিশে
অণু-পরমাণু হয়ে, কার ভেতরে কে, কীভাবে, সে চিন্তা করিনি
এরপর আমরা দ্রুত সম্পসারিত হচ্ছিলাম, আজকেও হচ্ছি।
তবে তখন আমাদের সম্প্রসরণ হচ্ছিল
আর এখন হচ্ছে আমাদের আত্মার!
১৫০০ কোটি বৎসর ধরে নানাভাবে বিবর্তন হয়েছে আমাদের।
যাতে আমরা নিজেদের ভিন্নতা পাই,
যাতে আমি যা পারি না, তুমি তা পার।
আর তুমি যা পাওনি আমি তা পাই।
যাতে আমরা একে অন্যের সহযোগিতার জন্য যোগ্য হই।
অবশেষে এইখানে এলাম, আমাদের দেখা হলো
দেখা হলো কারণ, আমাদের পরস্পরকে পরস্পররের সামনে দাঁড় করিয়ে
দেয়ার জন্যই এত কিছুর আয়োজন ছিল!
না হলে অহেতুক মহা-বিস্ফরণের দরকার হলো কেন?
কিংবা অকারনেই বিবর্তন হতে যাবে কেন?
অর্থাৎ আমাদের উদ্দেশ্য একই ছিল,
তা হলো, একে অন্যের জন্য বেঁচে থাকা।
কিন্তু ১৫০০ কোটি বছরে তুমি সব ভুলে গেছ,
কিছুই মনে নেই তোমার।
তাই আবার আরেকটা বিগব্যাং হবে!

সহজ মৃত্যুর প্রস্তাব

 

একটা সহজ মৃত্যুর প্রস্তাব ছিল।
আমি তার মুখে ঘৃণা ভরে থুতু ছুড়ে দিয়েছি।
প্রস্তাব ছিল, মমতায় ভরা হাত মাথায় বুলিয়ে
পরিবার গড়ার ন্যাকামি হবে
প্রেমের নামে আজীবন পাশে থাকার কাহিনি বলে আর বলে
প্রতিনিয়ত পিষে ফেলা হবে হৃদয়-
কিংবা শাসকের দালাল হয়ে গ্রহণ করতে হবে
নিরাপদ জীবন!
আমি থুতু দিয়েছি সবক’টার মুখে।
হাস্যকর ন্যাংটা সমাজ যেখানে
পরিবারের ভিত্তি শুধুই বাসস্থান,
ভালবাসার নামে আস্ত ঘাড়ে চেপে বসার ধান্দা
কিংবা শাসকের দেয়া নিরাপত্তার নামে খোঁজা
অথবা যৌনদাসী হয়ে হাসি মুখ।
আমি একটাতেও রাজি ছিলাম না,
মৃত্যু এত সহজ হতে পারে না।
প্রতিটি প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ঘৃণা আর নিন্দা জানিয়ে
সবকটার মুখে থুতু দিয়ে বিদায় করেছি।

মেঘগুলো কাকে দেব

 

পকেট হাতড়ে দেখি, পকেট ভর্তি মেঘ!
কোন ফাঁকে ঢুকে গেছে অফিসের ব্যাগেও।
আসমান ভেঙে দিয়েছে কারো তীক্ষ্ণ আবেগ,
শহর ভাসিয়ে দিয়েছে সে অপরাধী?
আমার কি দোষ ছিল
অহেতুক আমাকে ভেজালো।
এই মেঘ আমার কিবা কাজে দেবে
যতসব বিরক্তিকর স্যাঁতস্যাঁতে রোমান্টিজম
হাত তুলে ভিক্ষে চাইছে বৃদ্ধ ভিখিরি
তাকে কি দেয়া যায়?
নাহ, বেচারা সারাজীবন ধরে ভিজছে।
নাকি একা ক্যাফেতে বসে থাকা মেয়েটাকে দেব?
কারো কথা ভেবে মনের মধ্যে মেঘের দেশে ভাসছে,
না তার ঘোর কাটানো ঠিক হবে না।
সেই মিশরের প্রাচীন রাস্তার মতো এখানেও গলির দুধারে
ক্যাফেগুলোতে আলোর ভেতরে গরম চায়ের কাপ হাতে
পৃথিবীর সাতশো কোটি মানুষ।
কিন্তু একজনকেও দেয়া যাবে না।
কারণ কোনো নেফারতিথিকে আমি দেখছি না ভিড়ে।
চাকরিজীবী, কর্মকর্তা, চাঅলা, বাসচালক ও হেলপার
বন্ধু, বান্ধবী, সহকর্মী কিংবা বিপ্লবী,
একজনকেও দেয়া যাবে না এই মেঘ
বাদল দিনের প্রথম মেঘ সবাইকে দেয়া অন্যায় হবে
বিশ্ব ধ্বংস হয়ে যাবে ভুল হাতে দিলে।
পরিবার-পরিচিতদেরও দেয়া যাবে না।
এমন একজনকে খুঁজছি আমি যার সামনে গিয়ে
তার মাথার ওপর সব মেঘ ঢেলে দেব
যে আনন্দে চুপসে যাবে ভিজে।
আমার দিকে ভয়ানক চোখে তাকিয়ে
বলবে, ছাতাটা ফুটানোর সময় দিলে না?
আমি বোকার মতো হাঁ করে দেখবো,
আহা! সে কী দৃশ্য, সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে মহাপ্রলয় হবে বুঝি এখনি।
আজই বুঝি সৌরজগতের শেষ দিন।
আমি ঈশ্বরকে হুমকি দেব
আজই ধ্বংস করে দাও সব, তাতে আমার কিচ্ছু যাই আসে না,
এরপ হুট তার হাতে ধরিয়ে দেব বৃষ্টি ভেজা আস্ত চাঁদখানা।

 

ব্যবচ্ছেদ ১

 

ঠিক তোমার বাম বক্ষ বরাবর ছুরি মেরে-
বুক ফুঁড়ে বের করে নেব আস্ত হৃদয়!
আমার সেটাই চাই।
সেটা সমেত গা-ঢাকা দেব
নিরুদ্দেশ হয়ে যাবো
স্রষ্টা থেকে দেশের নিরপত্তা কর্মীরা
সমালোচনার ঝড় তুলে দেবে
কুচ্ছিত ছবি দিয়ে "মোস্ট ওয়ান্টেড" পোস্টার ছাপাবে।
সুশীলরা থুতু দেবে
আর স্বৈরাচার সরকার আমার ইস্যুতে আরও-
কয়েক বছর টিকে যাবে ক্ষমতায়।
আমার নামেও দেশ-বিদেশে হুলিয়া জারি হবে
টেনশনে সিগারেটের উপর সিগারেট খেয়ে খেয়ে-
শহীদ হবে গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা।
মন্ত্রী-মোল্লারা মুক্তমনাদের সাথে জোট করে-
আবার ফাঁসির ফতোয়া দিবে
কোটি কণ্ঠে "ফাঁসি চাই" অনুষ্ঠান আয়োজন করে
গিনেস বুকে নাম লেখানোর নামে লুটপাট চালাবে।
দেশের নাগরিকত্ব বাতিল করে দেবে সরকার,
আত্মঘাতী হামলার যুক্তিতে ঠায় দেবে না
উচ্চ থেকে উন্নত রাষ্ট্র বলয়
"বিশ্বের কুখ্যাত ফেরারি" শিরোনামে
ডকুমেন্টরি চলবে ডিসকভারি চ্যানেলে
তবুও আমি তোমার বাম বক্ষ বরাবর ছুরি মেরে-
বুক ফুঁড়ে বের করে নেব আস্ত হৃদয়!
আমার সেটাই চাই।

 

ব্যবচ্ছেদ ২

 

একটা নিখুত আঘাতে তোমার করোটি ভেঙ্গে
তার ভেতরে ঝাঁপ দেব
তোমার মস্তিষ্কে দুঃসাহসিক অভিযান চালাবো।
ভেতরে ভেতরে কত নোংরা গলি
অন্ধকার নর্দমার নগরী গড়েছ-
তার একটা মানচিত্র আঁকা দরকার
কোন কোণে কার ভেতরে কি আছে
কত কোটি আলোকবর্ষ জুড়ে
দম বন্ধ হওয়া অন্ধকারে-
কার সাথে কি আতাত চলে
মশাল জ্বেলে আলোকিত করে
সব গোপন নথি ফাঁস করে দেব
তারপর পরদিন পত্রিকায়
"ব্রহ্মাণ্ডের চমকপ্রদ আবিষ্কার" শিরোনামে
বিস্তারিত প্রতিবেদন সমেত ছাপা হবে
প্রয়োজনে আয়োজন করে গঠন-
করা হবে বিশেষ ট্যাইবুনাল
তদন্ত কমিটি বানিয়ে থার্ড ডিগ্রী টর্চার চালানো হবে
জবাব চাই, জবাব দিতে হবে
হিসেব ছাড়া একচুলও ছাড় হবেনা।