রাহমান চৌধুরীর নাটক ‘ক্রীড়নক’
শেষ পর্ব
প্রকাশিত : আগস্ট ১৯, ২০২১
বাংলা একাডেমি থেকে ১৯৯৪ সালে পুস্তক আকারে নাটকটি প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পরপরই নাটকটি দেশের সুধীমহলের দৃষ্টি কাড়ে। নাটকটার পটভূমি প্রাচীন যুগের কাল্পনিক এক গ্রীকরাষ্ট্রকে ঘিরে। থিউস রাষ্ট্রটাই কাল্পনিক, ভিতরের বাকি সার কথাগুলোর প্রায় সম্পূর্ণটাই ঐতিহাসিক। মহাত্মা আহমদ ছফা নাটকটি পাঠের পর মন্তব্য করেছিলেন, ‘বহুদিন পর আমি গ্রিক ধ্রুপদী নাটক পাঠ করার আনন্দ পেয়েছি। নাটকটা আমি ইংরেজিতে অনুবাদ করাবো। সারা বিশ্বকে আমি নাটকটা পড়াতে চাই, বাঙালিরা যে নাটক লিখতে জানে, সেটার প্রমাণ দিতে চাই।’ ছাড়পত্রের পাঠকদের উদ্দেশ্যে নাটকটি পুনর্মুদ্রণ করা হলো:
হলোফার: ব্রাসিডাস! তুমি! পৃথিবীতে তাহলে একমাত্র কুকুরগুলোই কখনো তাদের প্রভুদের কামড়ায় না।
জেকোনেত্তা: হলোফারনেস। তোমার অহংকারের পতন হলো।
(ব্রাসিডাস হলোফারনেসকে পর পর আরো কয়েকবার আঘাত করলে সে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে)
হলোফার : সুন্দর একটা মৃত্যুও হলো না এ জীবনে। মৃত্যুর আগে তাহলে আমাকে একজন বিশ্বাসঘাতকের মুখ দেখেই মরতে হলো।
(হলোফারনেসের মৃত্যু। হালোফারনেসের দুজন দেহরক্ষীকেও ধরে এনে সৈন্যরা হত্যা করে।)
জেকোনেত্তা: ব্রাসিডাস, সৈন্যদের ঘোষণা দিতে বলুন, রাজা হলোফারনেস দেহরক্ষীদের হাতে নিহত। কাল সন্ধ্যায় সসম্মানে তার দেহ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সৎকার করা হবে। তার অবর্তমানে ক্ষমতায় বসবেন মান্যবর ক্রোনাস।
(সবাই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। পেছনে থেকে একটি ঘোষণা শোনা যায়।)
ঘোষেণা: পৃথিবীর ইতিহাস, একটি দীর্ঘ ইতিহাস। সে ইতিহাসের কোনো একটি ক্ষণে আপনার জন্ম। জন্মের পর আপনিও সে ইতিহাসকে দেখলেন, জানলেন এবং মারা গেলেন। কিন্তু ইতিহাস থেমে নেই। সে এগিয়েই চলছে সামনের দিকে, মানুষের কাঁধের ওপর ভর দিয়ে। আর আমাদের মনে রাখতে হবে, সামাজিক মানুষের তৈরি ইতিহাসের কাছে ব্যক্তি মানুষ সর্বদাই এক ক্রীড়নক মাত্র।