রাহমান চৌধুরীর দীর্ঘকবিতা ‘খুনি’
প্রকাশিত : মে ২৩, ২০২৪
কফি খাবার মতো একটা সন্ধ্যা খুঁজছিলাম তার সঙ্গে
যদিও যোগাযোগটা প্রথম সে-ই করেছিল
ভিতরে ভিতরে দ্বিধান্বিত ছিলাম আমি
প্রায় বিশ বছর পর সে এলো সেই সন্ধ্যায়
দুজনে কুশল বিনিময় করলেও ভিতরে ভিতরে নির্বাক ছিলাম
বিশ বছর পর দেখা হওয়ার প্রথম বিস্ময় কেটে গেল
বহু কথা জমে ছিল দুজনের মনের ভিতরে
দামি কফি শপের নিরিবিলি একটা টেবিলে বসলাম আমরা
নিজে সে দেখতে আগের চেয়ে আরো বেশি সুন্দর হয়েছে
সবকিছু পরিপাটি এবং চৌকষ প্রতিটি ভঙ্গি
কিন্তু আগের দিনগুলির মতন টিপ নেই তার কপালে
হঠাৎ সহজ হবার চেষ্টা করলো সে
বললো, কতেদিন পর দেখা, তুমি কিন্তু আগের মতোই নিজের কম যত্ন নিচ্ছ।
বিশ বছরের অপরিচিত দেয়ালটা যেন ভেঙে দিল সে একটা বাক্য দিয়ে
জানতে চাইলাম, তোমার কি মনে আছে সেইসব দিনের কথা?
কিছু কিছু মানুষের কথা সময় কখনো ভুলিয়ে দিতে পারে না
মনের জানালায় থেকে থেকে উঁকি দেয় তারা
হ্যাঁ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমরা দুজন খুব ভালো বন্ধু ছিলাম।
পড়াশুনা শেষ হলো একদিন
পরে স্বাভাবিক নিয়মেই যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল
কিন্তু মাঝখানের কিছুটা গল্প বাদ দিয়ে গিয়েছো তুমি
পড়াশুনা শেষে একদিন আমার বিয়ে হলো
বিয়ের দিন আমার সব বন্ধুরা এসেছিল, তুমি আসোনি
কিন্তু বিয়েতে একটা উপহার পাঠিয়েছিলে।
জানিয়েছিলে বিশেষ একটা কাজে রাজধানীর বাইরে যাচ্ছ।
কিন্তু আমি জানতাম, তুমি তখনো চাকরিতে যোগ দাওনি
খুব সামান্য একটা বিরতি নিয়ে সে জানতে চাইলো,
সত্যি কথাটা বলবে আজ? সেদিন কোথায় ছিলে?
রাজধানীতেই ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ সন্ধ্যার দিকে
হ্যাঁ, একটা ট্রেনে চেপে বসেছিলাম অজানার উদ্দেশে
হঠাৎ অমনটা করেছিলে কেন? কী মনে হয়েছিল সেদিন?
দয়া করে আজ শুধু সত্যি কথাটা বলো
মনে হয়েছিল তোমার বিয়ের পর
হয়তো তোমার সঙ্গে আর সেই সহজভাবে মেলামেশা করতে পারবো না
মনে হয়েছিল, না, থাক সেসব কথা
থাকবে কেন? বলো, বলো আজ, আমার শুনতে ভালো লাগবে
সব কথা শুনবো বলেই এসেছি
মনে হয়েছিল তোমার উপর আগে যতেরকম অধিকার খাটাতাম
সেটা আর তোমার বিয়ের পর খাটানো যাবে না
বিয়ের আগে সেটা আমায় বলোনি কেন যে আমার ওপর কিছু অধিকার খাটাতে চাও
বিয়ের আগে যখন বন্ধু ছিলাম বুঝতেই পারিনি যে, তোমার ওপর নানারকম অধিকার খাটাতাম
সেই অধিকারটা যে পরেও খাটাতে চাই, তখন বুঝতাম না।
কত রকম অধিকার আমিও খাটাতাম তখন
কতে রকম বায়না ধরতাম। পরীক্ষার সময় আমাকে নোট দিতে বাধ্য করতাম
রাত জেগে জেগে তা করতে তুমি, কিন্তু আমাকে সেজন্য কম বকতে না
কিন্তু তুমি কতে রকম ঘুষ দিতে আমাকে অন্য বন্ধুরা যা জানতো না।
যখন আমাদের পড়াশুনা প্রায় শেষ সেবার ঈদে হঠাৎ আমাকে একটা ঘড়ি উপহার দিয়েছিলে
ভিতরে ভিতরে আমি খুব বিস্মিত হয়েছিলাম
বিস্মিত হয়েছিলে? কেন?
জানি না। কিন্তু ঘড়িটা আজও রাখা আছে সযত্নে আমার সব কাপড়চোপরের সঙ্গে
বিশ বছর আগের কথা। সেটা এখনো রেখে দিয়েছো?
হ্যাঁ। কেন রেখে দিয়েছি জানি না
কিন্তু আমরা দুজন অসম্ভব ভালো বন্ধু ছিলাম।
হ্যাঁ, ঠিক, আমরা দুজন ভালো বন্ধু ছিলাম, সত্যি ভালো বন্ধু ছিলাম
কথাটা বলতে বলতে হঠাৎ তার দুচোখ জলে ভরে যায়।
কি হয়েছে তোমার? এমন করছো কেন?
না কিছু হয়নি। চোখ মুছে ফেললো সে। বললো, প্রায় বিশ বছর পর আবার তোমাকে দেখতে পেলাম
জানতে চাইলাম, কেমন আছো?
ব্যঙ্গ স্বরে বললো, খুব ভালো।
দেখতেই পেয়েছো তুমি কত দামি গাড়ি থেকে নামলাম
প্রচুর ক্রয় ক্ষমতা এখন আমার
চাইলে তোমাকে একটা দামি গাড়ি উপহার দিতে পারি
সত্যি বলছি, দিতে পারি
খানিকটা থেমে জানতে চাইলো আমার কাছে,
যদি দেই নেবে?
না, থাক। সেই ঘড়িটা, তার মূল্য অনেক বেশি আমার কাছে।
কিন্তু তুমি কখনো ঘড়ি পরতে না। মনে হয়েছিল আমার দেয়া ঘড়িটা সেই ঈদে পরবে
নিশ্চয় তুমি জানতে, ধর্মের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল না
ফলে ঈদ উৎসব আমার জন্য আলাদা কিছু ছিল না।
হ্যাঁ, জানতাম। খুব উচ্চস্বরে তুমি সর্বক্ষণ জানান দিতে তোমার সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক নেই।
কিন্তু তোমাকেই আমি সবচেয়ে মুগ্ধ হয়ে দেখতাম
ধর্ম মানে না তখন আর তেমন কাউকে চিনতাম না
ধর্মকর্ম এখন তুমি নিজেও যে খুব করছো তাও মনে হয় না।
সঙ্গদোষ বলতে পারো। কিন্তু তুমি বিয়ে করনি কেন?
বিয়ে করার সিদ্ধান্ত আসলে কখনোই ছিল না আমার।
বল কি? কবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলে?
যখন তোমার সঙ্গে পরিচয়, বন্ধুত্ব, ঘনিষ্ঠতা তখনি
হঠাৎ কেন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলে?
কারণ আমি বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম
কাউকে তাই আমার বিপদজ্জনক জীবনের সঙ্গে জড়াতে চাইনি
বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোড় ছাত্রটি তাহলে রাজনীতি করতো?
কখনোই তা আগে জানতে পারিনি
বলতে পারো রাজনীতিই আমাকে তুখোড় বানিয়েছিল
ভিন্ন ধরনের এক রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম তখন
মনে হচ্ছে মনের গহীনের বহু প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাব আজ
কতদিন সেইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়িয়েছি
দাঁড়াও আগে কফির কথা বলি, সঙ্গে কী খাবে?
যা কিছু তোমার পছন্দ, এটা তোমার দেশ
বিদেশি এখানে আমি।
খাবার কোনটা ভালো হবে তুমিই বলতে পারবে
কিন্তু খুব সামান্য খাব আমি
জানো তো একটু পরেই নৈশভোজের নিমন্ত্রণ আছে
ঠিক আছে সামান্য কিছুই বলছি
কফির কথা বলে আমার দিকে ফিরে তাকালো সে
বললো,
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে ঝগড়া বাঁধিয়ে পরীক্ষার ফলাফলটা খারাপ হয়েছিল তোমার
কখনো তা নিয়ে মন খারাপ বা দুঃখ করিনি আমি
হ্যাঁ, মাথা উঁচু করে হাঁটতে চেষ্টা করেছো, খুব ভিন্ন রকম ছিলে তুমি
কৃত্রিমতা পছন্দ করতে না,
সকলেই তোমাকে খুব সমীহ করতো
কিন্তু আমাকে কেন এত পাত্তা দিতে?
পাত্তা দিতাম কোথায়, পাত্তা নিতাম।
কত ছাত্র এবং তরুণ শিক্ষক তখন তোমার পিছনে ঘুরে বেড়াতো
কত সময়ে তোমার সঙ্গ পেতে চাইতো
কিন্তু তুমিই আমাকে সর্বক্ষণ তোমার সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে
নানাভাবে আমাকে খুব উজ্জ্বীবিত রাখতে
কথাটা আমার জন্যই বেশি সত্যি, জীবনের কত কিছুই জানতাম না।
মানুষের স্বাধীনতার গল্প শোনাতে আমাকে তুমি সারাদিন
বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলিকে আমার রাঙিয়ে দিতে
নতুন কত কথা বলতে যার সবটা আমি বুঝতামও না
বাসা থেকে তুমি আমার জন্য এটা ওটা খাবার নিয়ে আসতে
কিংবা কোনো রেস্টুরেন্টে জোর করে নিয়ে যেতে
টগবগ করতে তুমি কিছু একটা করার জন্য
ইচ্ছা হতো আমার সারাক্ষণ তোমার সঙ্গেই হাঁটি
কিন্তু উপায় ছিল না, হঠাৎ হঠাৎ আমাকে ছেড়ে যেন কোথায় চলে যেতে তুমি
কিছুই বলতে না সে-সম্পর্কে
হঠাৎ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সে তাকালো আমার দিকে
কফি এসে গেছে ততক্ষণে আমাদের জন্য, সঙ্গে সামান্য খাবার
কফির কাপ এবং খাবার সে এগিয়ে দিলো আমার দিকে
বললো, হে তুখোড় বন্ধু মন খুলে কথা বলো
যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধু ছিলাম সবসময় মন খুলেই কথা বলেছি তোমার সঙ্গে
রাজনীতির ব্যাপারটাই গোপন রেখেছিলাম দলের নির্দেশে
না হলে আর কিছুই লুকাইনি
না তা বলছি না। ভিন্ন কিছু প্রসঙ্গ এসে যাচ্ছে মনের ভিতরে
যা জানতে চাইছো বলো। কিছুই লুকাবার নেই তোমার কাছে আজ।
কী হয়েছিল, কেন আমার বিয়েতে আসোনি সেদিন?
খুব মন খারাপ ছিল
বলতে পারো আগের রাতটা কিছুতেই ঘুমাতেই পারিনি
বারান্দায় বসে ছিলাম একা একা
কিন্তু কেন?
বললাম তো
জানতাম বিয়ের পর তোমার সঙ্গে আমার আর আগের মতো সম্পর্ক থাকবে না
দূরত্ব বেড়ে যাবে
খুবই খারাপ লাগছিল সে কথা ভেবে
কিন্তু বিয়ের আগে সে কথাটা তুমি আমাকে বললে না কেন?
বলিনি। বললে কী লাভ হতো? আমি তো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কখনো বিয়ে করবো না
ঠিক আছে। তবুও বলতে তে পারতে আমাকে
কখনো আমার বিয়ে হয়ে গেলে তোমার খুব খারাপ লাগবে
কথাটা জানাতে পারতে আমাকে
বললে কী হতো? প্রশ্ন করলাম আমি
খুব নিস্পৃহভাবে বললো সে, তাহলে বিয়েটা আমিও করতাম না।
বিয়ে করতে না মানে? বিয়ে তো তোমাকে করতেই হতো
যদি জানতাম আমি বিয়ে করলে তুমি কষ্ট পাবে তাহলে আমি বিয়ে করতাম না
না হয় তোমার মতন তুখোড় যুবকের জন্য অবিবাহিত থেকে যেতাম
কী সব বলছো তুমি!
বিয়াল্লিশ বছর বয়সে আমার কথাটা বলি এবার, শোনো
বলো,
যখন বন্ধু ছিলাম কখনো তোমাকে স্পর্শ করিনি
না তুমি, না আমি। দরকারও হয়নি
কিন্তু তোমার হাতটা আজ স্পর্শ করি?
করো।
ভয় নেই
চারদিকে বসে থাকা লোকরা আশা করি কিছু মনে করবে না
করলে কিছু যায় আসে না
টেবিলে রাখা আমার হাতটা স্পর্শ করলো সে, নিজের হাতের মধ্যে টেনে নিল
বললো,
যাক, বহুদিন একটা হিসাব মিলছিল না
মিলে যাচ্ছে এখন
কী সেটা?
বিয়ে করবে না বলেই আমার সঙ্গে বন্ধুত্বের চেয়ে বেশি আগাতে চাওনি
তাই না?
ঠিক। কিন্তু আমাদের সম্পর্কটা কি বন্ধুর চেয়েও বেশি কিছু ছিল না?
ছিল। কিন্তু তার চেয়ে বেশি যেতে চাওনি তুমি
নিজে বিয়ে করবে না বলে আমার বিয়েতে বাধা দাওনি
কিন্তু মন খারাপ করেছো
হ্যাঁ, ঠিক তাই।
কিন্তু তুখোড় যুবক, যখন আমরা ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলাম তখন কথাটা আমাকে বলতে পারতে
বলতে পারতে তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও না, আবার আমাকে হারাতেও চাও না
বিস্মিত আমি
কিছুক্ষণ কথা খুঁজে পেলাম না
সময় পার হচ্ছিল নীরবে
হাতটা জোরে চাপ দিয়ে ফিসফিস কণ্ঠে সুধালো,
সত্যিটা সেদিন বললে কী ক্ষতি হতো তোমার?
বিয়ে করতাম না কখনো আমি। দুজনে আমরা বন্ধু থেকে যেতাম
সম্ভব ছিল কি সেটা?
সম্ভব ছিল। বিয়ে করতে না চাইলে বাবা মা আমাকে জোর করতেন না
কিন্তু আমার জীবন ছিল তখন অনিশ্চিত এবং বিপদসংকুল
বিপদসঙ্কুল তোমার পাশেই না হয় দাঁড়াতাম বা তোমার জন্য অপেক্ষা করতাম
ঠিক বুঝতে পারছি না তোমার কথা
বলছি তুমি বিয়ে করতে না, আবার আমিও করতাম না
জীবন তো সেভাবেও কাটানো যায়
বিয়ে করলে কেন তবে তুমি?
কখনো এ কথাটা তুমি আমাকে বলনি, আমি পাশে না থাকলে তুমি কষ্ট পাবে
বলনি কখনো, আমাকে হারালে তুমি বিষণ্ণ হবে
সত্যি বলছি বিয়ে করে একজন স্বামী পেতে চাইনি আমি
বরং তেমন একজনকেই চেয়েছিলাম
শুধু আমাকে হারালে যে কষ্ট পাবে।
হয়তো তোমার বিয়ে হয়ে যাবার আগে আমি নিজেই সেভাবে বুঝতে পারিনি
তোমাকে হারালে এতটা কষ্ট পাব
কফির কাপে সে চুমুক দিল। বললো,
কিন্তু আমি জানতাম তোমাকে হারালে আমি কষ্ট পাব
কখনো কি সেটা তুমি বুঝতে পারনি?
ছাত্র জীবন হারালেই হঠাৎ একদিন যে তোমাকেও হারাবো মাথার মধ্যে তা ছিল না
কিন্তু আমার ছিল
যখন মাঝে মাঝে তোমাকে হারাবো বলে শঙ্কা হতো আমার
চলে গেছি তোমার কাছে
কতো কাছে যাবার চেষ্টা করেছি নীরবে
কিন্তু মনে হতো আমাকে হারালে তোমার কিছু যাবে আসবে না
সত্যি! তাই ভেবেছিলে?
বিয়ের দিন যখন তুমি আসলে না, তখনই বুঝলাম কিছু একটা ভুল হয়ে গেছে
কখনো তারপর গত বিশ বছরে তুমি আমার সঙ্গে দেখা করোনি
কফির কাপে চুমুক দিলাম
কথা বলার ভাষা ছিল না আমার
বললো সে, এবার যদি সেমিনারে যোগ দিতে বিদেশের মাটিতে না আসতে
যদি খবরটা আমি না জানতাম
হয়তো আগামী বিশ বছরেও আর দেখা হতো না তোমার সঙ্গে
চুপ করে রইলাম আমি। সে জিজ্ঞেস করলো,
রাজনীতির জন্যই যখন বিয়ে করোনি
কিন্তু সেই রাজনীতি কি করছো এখনো?
রাজনীতি করছি। সেই দলটা করছি না আর
না কেন?
থাক সেসব কথা।
থাকবে কেন? এখনো একঘণ্টা সময় আছে আমাদের হাতে
রাজনীতি ছেড়ে দিলাম কারণ দলের অনেক নেতা তখন বিক্রি হয়ে গেছেন
সর্বত্রই তাই হয়। রাজনীতির জন্য তুমি প্রেম বিসর্জন দিলে
কিন্তু নেতারাই বিক্রি হয়ে গেলেন
কিন্তু ত্যাগী মানুষরা এখনো আছেন। সংখ্যায় কম।
যারা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অকাতরে জীবন দেন মানুষের জন্য
পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ঘটনা সেটাই
বিপ্লব নিয়ে তোমার পরবর্তী জীবনে লেখা দুটা বই আমি সারা রাত জেগে পড়েছি
নিশ্চয় সে খবরটা তোমার জানা নেই
বইগুলো পাঠ করতে গিয়ে নতুন করে চিনেছি তোমাকে
কম বয়সে বিপ্লব যত সহজ মনে হয়েছিল, বিপ্লব করা তার চেয়ে বহু গুণ কঠিন কাজ ছিল
হ্যাঁ, তোমার লেখার মধ্যে সে কথাগুলো রয়েছে
বিশ্ববিদ্যালয় চার বছর পড়াশুনা করে যতটা ইতিহাস বুঝেছি
বিপ্লব সম্পর্কে তোমার লেখা বই দুটো পাঠ করে তার চেয়ে অনেক গভীরভাবে ইতিহাসকে জেনেছি
বইগুলো কি এখানেই বিক্রি হয়? মানে এদেশের গ্রন্থাগারে?
হয় কখনো কখনো,
বই দুটো তোমার নাম দেখেই কিনেছিলাম
দলের ভিতরে রাজনৈতিক নেতাদের গোঁড়ামি ও লোভ সম্পর্কে লিখেছো তোমার বইয়ে
রাজনীতি ছেড়ে কি তাই শিক্ষকতায় ঢুকলে?
বলতে পারো।
প্রশ্ন করবো একটা? সঠিক উত্তর দেবে?
বিশ বছর পার হয়ে গেছে, এখনো কি কখনো কখনো আমার কথা মনে করো?
করি।
হারাবার ব্যথা অনুভব করো?
ঠিক এতদিন পরে তা হয়তো করি না
কিন্তু তোমার সেই অনুভূতিগুলো আর কখনো পাইনি অন্য কারো কাছে
মনে হয় তোমার সঙ্গে আমার একটা ভিন্নরকম অনুভূতির ভিন্ন রকম চাওয়া পাওয়ার জগৎ ছিল
ঠিক আমিও তাই ভাবি। কিন্তু তোমাকে আমি ভুলিনি।
বিয়েতে তোমার না আসাটা আমার মনের ভিতরে একটা প্রশ্ন তৈরি করে রেখেছিল
নিজে তুমি মুক্ত থেকে আমাকে বিয়ের শৃঙ্খলে বেঁধে দিয়ে গেলে
সত্যিই কি এটা আমার বিরুদ্ধে তোমার কোনো অভিযোগ?
না অভিযোগ নয়।
কিন্তু বিয়ের আগে যদি একবার বলতে আমাকে হারাতো চাও না তুমি
বিয়ে করতেও চাও না
সত্যি বলছি বিয়ে না করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিতাম তোমার সঙ্গে
ঠিক বলছো কি না জানি না।
যদি ঠিক না বলে থাকি, আমার আজকের অনুভূতিটা ঠিক তাই
বিয়ের বন্ধনের চেয়ে মুক্তভাবে ভালোবাসতে পারা বহু গুণ আনন্দের
বিয়ে নামক একটা `রাত্রিদিন` যাপন করছি এখন আমি
কফি শেষ করলাম
বললাম, হাতে আধাঘণ্টা সময় আছে, চলো বাইরে গিয়ে পথে একটু হাঁটি দুজনে।
জানতে চাইলো সে
রাতের নৈশভোজ আজ কতক্ষণ চলবে তোমার?
ঠিক জানি না।
কাল ভোরের বিমানে দেশে ফিরে যাবে তাই তো?
হ্যাঁ।
যদি একটা প্রস্তাব রাখি? শুনবে?
বলো,
নৈশভোজ শেষ করে রাতে আজ আর না ঘুমালে
চলো আসো সারা রাত শহরের পথে পথে হাঁটবো দুজনে
সেই অতীত দিনের মতো
দরকার হলে এখানে সেখানে কফি খাব
সঙ্গে গাড়িও থাকবে
সকালে তোমাকে আমি বিমানবন্দরে নামিয়ে দিয়ে আসবো
চমৎকার প্রস্তাব।
মনে হচ্ছে সেই অতীতের দিনগুলিতে ফিরে যাচ্ছি।
ঠিক আছে
যতটা সম্ভব খুব তাড়াতাড়ি আমি নৈশভোজ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসবো
জানি, তুমি খুব সাত্ত্বিক মানুষ, বদভ্যাস নেই তেমন এখানো।
পড়াশুনার মধ্যে ডুবে থাকো
কী করে জানলে এত খবর?
কিছুটা খোঁজ রাখার চেষ্টা করি তোমার, না রেখে পারি না
নিশ্চয় তুমি আমার চেয়ে অনেক দায়িত্ববান
খুব হৃদয়বান একজন মানুষ
হ্যাঁ, তবে সেটা কেবল তোমার জন্য। তুমি অদ্বিতীয় একজন আমার জীবনে
মানে?
নিশ্চয় টের পেয়েছো আমার ক্রয় ক্ষমতা কতটা
যাকে তুমি চিনতে এখন সেই পুরানো বালিকা আমি নই
শহরের সবাই জানে আমি এখন এক চরম ভোগী মহিলা।
বিলাসী
প্রচুর টাকা উড়াবার ক্ষমতা এখন আমার হাতে
সারা রাত কোথায় কোথায় কাটাই চিন্তাও করতে পারবে না
সামান্য বিরতি দিয়ে বললো,
কিন্তু যতক্ষণ তোমার সঙ্গে আছি, মনে রেখো আমি সেই বালিকা
যাকে তুমি চিনতে প্রথম যৌবনে
কিন্তু দূর থেকে যদি দূরবীন দিয়ে দেখো আমাকে
সামান্য তাহলে আর চিনতে পারবে না
জানি না কেন এসব কথা বলছো আমাকে
পার্থ অবশ্য বলেছিল, তোমার সঙ্গে আর আমার দেখা না করাই ভালো
ঠিকই বলেছে সে। আজ তোমার সামনে এসে দাঁড়াতে আমাকে অভিনয় করতে হয়েছে
বহুবার মহড়া দিয়েছি
মহড়া দিতে দিতে তোমার সঙ্গে নিজের অতীতটা ঝালিয়ে নিতে চেষ্টা করেছি
কাল সকালে তোমাকে বিদায় দেবার পর আমার এ রূপটা থাকবে না
পরম মমতায় ওর হাতটা আমার হাতের মধ্যে নিয়ে বললাম
কী বলছো তুমি। কিছু বুঝতে পারছি না ঠিকমতো
কী হয়েছে তোমার? বলো, কিসের কষ্ট তোমার?
কখনো ঠকাইনি তোমাকে আমি। সামান্য ঠকাইনি
জানি।
হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে সে হঠাৎ উঠে দাঁড়ালো
দাঁড়িয়ে পড়লাম আমিও
ঠিক আমার মুখোমুখি হলো সে
বললো তারপর,
হত্যা করেছো তুমি আমাকে, আমার প্রথম জীবনটাকে।
খুনি তুমি আমার, তুমি একটা খুনি
বলতে বলতে সে আমার বুকে মুখ লুকিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকলো
কিছু না বুঝলেও আমি পরম মমতায় তার মাথায় হাত রাখলাম
বলতে পারলাম না, `কখনো তোমাকেও ঠকাইনি আমি`
চারদিকের সকলেই তাকিয়ে দেখছিল আমাদের নীরবে
কিন্তু কিছুই আর আসে যায় না তখন তাতে
নিজের দুরন্ত রাজনৈতিক জীবনের কথা মনে পড়লো
সেই পুরানো দিনেই যেন ফিরে গেলাম
ফিসফিস করে তার কানে কানে বললাম, চলো কাল সকাল পর্যন্ত তোমার এই খুনির সঙ্গেই কাটাবে
নরকে যাক আমার আজকের নৈশভোজ
জীবনের সবচেয়ে সুন্দর এবং সেরা দিনটি আজ তোমার সঙ্গেই কাটাবো
চলো বেরিয়ে পড়ি এখান থেকে
টাকাপয়সা মিটিয়ে দিয়ে আমরা গাড়িতে গিয়ে বসলাম
চালকের আসনে বসলো সে
জিজ্ঞেস করলো আমাকে, কোনদিকে যেতে চাও?
বললাম,
প্রশ্ন করো না, যে দিকে দুচোখ যায় চলো
নিয়ে যেতে চাও তুমি যেখানে সেখানেই যেতে প্রস্তুত সুন্দরী
কটাক্ষ করে বললো,
ছাত্র জীবনে এ কথাটাই বহুবার বলেছো আমাকে
বললাম, আমি আজও সেই মানুষটাই আছি
কিন্তু আমি তো নেই।
গাড়ি চলতে আরম্ভ করলো। দ্রুত গতিতে সে শহরের বাইরে চলে এলো
জানতে চাইলাম সত্যিই কি সেই বালিকাকে হত্যা করেছি আমি?
হ্যাঁ।
যদি আমি হত্যা করে থাকি, তাহলে আমি আবার জীবনও দিতে পারবো তোমাকে
মুখটা ঘুরিয়ে জানতে চাইলো সে, কেমন করে?
কারণ এই যে আমাদের দেখা হলো, এই যে তুমি আমার বুকে মাথা রেখে কাঁদলে
খুন হয়ে যাওয়া মেয়েটি এবার বেঁচে উঠবে
হায়! আমি যেন আবার বেঁচে উঠি। সমুদ্রের দিকে যাচ্ছি কিন্তু আমি
নরক সমুদ্র পাহাড় যেখানে খুশি আমাকে নিয়ে চলো
খুনি তোমাকে আজ তোমার জীবন ফিরিয়ে দেবে
ঠিক তো?
হ্যাঁ। মনে রাখবে শুধু যতদূরে থাকি তোমাকে হারালে আমি কষ্ট পাবো
মনে রেখো, একজন মানুষ তোমার খারাপ কিছু হলে কষ্ট পাবে
মনে রেখো সেদিনের দিনগুলো, স্মরণে রেখো আজকের সময়গুলো
কিন্তু তুমি তো আজকের আমাকে সঠিকভাবে চেনো না
চিনলে আর দেখা করতে চাইবে না
মনে রাখতে চাইবে না আমাকে বরং ঘৃণা করবে
মনে করবে আমি মরে গেছি
মনে মনে বললাম, তুমিও আমাকে সবটা জানো না হে
শ্রেণীশত্রু খতমের দিনগুলিতে ভুল রাজনীতির স্বীকার হয়ে রক্তাক্ত করেছি এই হাত
কিন্তু তোমার প্রতি আমার অনুরাগ এবং আন্তরিকতায় ফাঁকি ছিল না সামান্য
ঠিক যেমন তুমি ছিলে সেদিনগুলিতে আমার প্রতি
মনে মনে ভাবলাম, আসলেই আমি একজন খুনি দুইভাবে
বললাম তাকে, হ্যাঁ, আমিই তোমার খুনি। কিন্তু তোমার জীবন ফিরিয়ে দেয়ার জন্যই তো খুনি তোমার সঙ্গে চলেছে।
প্রায় আবৃত্তির ঢংয়ে বললো সে-
খুনির সঙ্গে তবে দেখা হলো এতাদিন পর, খুনির সঙ্গেই তবে পথ চলছি।
খুনি হে বন্ধু আমার
হাসলো সে। দৃঢ় কণ্ঠে বললো-
যতোই বলো জীবন ফিরিয়ে দিতে পারবে না আর আমাকে
টাকার ক্ষমতা অনেক এ বিশ্বে, তোমার ভালোবাসা সেখানে ম্লান হয়ে যাবে
কিছুই ফিরিয়ে দিতে পারবে না আর আমাকে
শুধু আজকের এই স্মৃতিটুকু নিয়ে চলে যাবো আমি
খুব কঠিন করে এসব কথা বলছো কেন?
কাল সকালে তোমাকে বিদায় জানাবার পর আমি ভিন্ন মানুষ হয়ে যাবো
কিছুটা সময়ের জন্য শুধু নিজেকে পাল্টে নিয়েছি
কিছুটা সময়ের জন্য পুরানো অতীতে ফিরে যেতে চেয়েছি
যতক্ষণ তুমি সঙ্গে আছো হে চৌকষ যুবক ততক্ষণই আমি আমার অতীত
না না এরকম করে বলবে না। কখনো কখনো আমিও কষ্ট পাই
যখন জানবো তুমি ভালো নেই কষ্ট হবে আমার
মন খারাপ করো না তুমি আমার জন্য
সামনের রাতেই আবার আমি ফিরে যাবো স্বরূপে যার আছে প্রচুর ক্রয় ক্ষমতা
সবাই যাকে বিলাসী, ক্ষমতালোভী, ভোগী হিসেবে জানে
নতুন পরিচয় এটাই আমার
টাকা মানুষের জীবনকে পাল্টে দেয়
টাকার ক্ষমতা যাদের গ্রাস করে না তাদের কি দেখা পাওনি কখনো?
হ্যাঁ, পেয়েছি এবং তাকে একনজর দেখার জন্য আজ ছুটে এসেছি
সব খবর রাখি আমি তোমার
সবাই বলে চরিত্র পাল্টায়নি তোমার সামান্য
কিন্তু তোমার চিন্তাচেতনা আগের চেয়ে পাল্টে গেছে অনেক
কী কী খবর রাখো তুমি আমার?
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তুমি কফির টেবিলে আড্ডা দিয়ে বেড়াও
শিক্ষার্থীরা তোমাকে ঘিরে থাকে সারাক্ষণ
খুব সাধারণ জীবন যাপন করো।
মানুষের মুক্তির পক্ষে লেখালেখি করো
খবরগুলো কার কাছে পাও?
পাই-
কিন্তু আমি তোমার বিরুদ্ধ পক্ষ, যাদের বিরুদ্ধে তুমি লড়ছো আমি রয়েছি তাদের সঙ্গে
সর্বক্ষণ তাদের সঙ্গে চলে আমার লেনদেন
সকলেই সমাজের পাণ্ডা তারা
বহু পাণ্ডা আবার আমার হুকুমে এ প্রান্ত ও প্রান্ত ছুটে বেড়ায়
খুব অবাক হচ্ছো আমার কথা শুনে
যতোটা অবাক হচ্ছি তার চেয়ে কষ্ট অনুভব করছি বেশি
পার্থ বলেছিল তোমার সঙ্গে আমাকে যোগাযোগ না করতে
কিন্তু তোমার সঙ্গে আমার এ দেখা হওয়াটা
খুবই জরুরি ছিল
হ্যাঁ, আমিও তাই মনে করি
কিন্তু দেখা হওয়ার পরেও আমরা সীমা লঙ্ঘন করবো না
তাও জানি
কারণ তোমার সঙ্গে আমার সম্পর্কটার বন্ধন অনেক জোরালো
কিছুতেই তাকে আমি কলুসিত হতে দেবো না
প্রাণঢালা ধন্যবাদ তোমাকে, দেখা হওয়ার এই আয়োজনটা তুমিই করেছিলে
না হলে তোমার সঙ্গে দেখাই হতো না আর
সত্যিই তুমি আমার খুনি এবং সামাজিক রাজনৈতিকভাবে বর্তমানে আমার শত্রুপক্ষ
কিন্তু তোমার সঙ্গেই আমার এমন একটা অতীত ছিল যা আমি কিছুতেই অস্বীকার করতে পারছি না
যখন আমি ফিরে যাবো তোমার সঙ্গে কি আর আমার যোগাযোগ থাকবে না?
যদি তুমি যোগাযোগ রাখতে চাও, অবশ্যই থাকবে
বর্তমানের জীবনের চেয়ে কখনো কখনো অতীতটাই প্রবল হয়ে ওঠে
ঘটনা আজ আমাকে এমন এক জায়গায় নিয়ে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে
সত্যি কথাটা বলি, তোমার বর্তমান বাস্তবতা সম্পর্কে আমি জানি না
কিন্তু আগের চেয়ে দেখতে তুমি আরো সুন্দর হয়েছো
প্রবল ব্যক্তিত্ববান হয়েছো তুমি
ব্যক্তিত্ববান বলতে তুমি যা বুঝিয়েছো তা হলো নারী হিসেবে আমি আমার সক্ষমতা অর্জন করেছি
ঠিক সেই সঙ্গে আবার
থামলে কেন? কথাটা শেষ করো।
হায়!
প্রিয় চৌকষ যুবক, তোমার সঙ্গে দেখা হয়ে আজ আমার লাভ হলো কতটুকু জানো?
কাঁদতে ভুলে গিয়েছিলাম বহুদিন, মাঝে মধ্যে এখন কান্নার একটা কারণ খুঁজে পাবো
টাকার ক্ষমতা অনেক। কিন্তু কান্নার শক্তি তার চেয়েও বেশি
বিষন্ন মন আমার, কতো রকম কথা মনে পড়ছিল
জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলাম
মুখে কথা জোগালো না
জানতে চাইলো সে
কী ভাবছো এতো?
ঠিক বলেছো তুমি
খুন করেছি তোমাকে
সুখে আছো জেনে কখনো তোমার খোঁজ নিতে চাইনি পর্যন্ত
কিন্তু মনের অন্তঃস্থল বহুবার নিশ্চয় ভেবেছো আমার কথা
বিষন্ন রাতে কিংবা জ্যোস্নার আলোতে।
হ্যাঁ, আমার বিয়ে হয়ে যাওয়ায়
কষ্ট পেয়েছো
কিন্তু কাঁদতে পারোনি, কারণ ওটা তোমার আসে না
সত্যি বলেছো তুমি।
কখনো কখনো হয়তো ভুলে যেতে চেয়েছো আমাকে তাই না?
কিন্তু পারোনি পারোনি পারোনি!
যা যা বললে তার একটাও ভুল বলোনি
সবচেয়ে বেশি কে চেনে তোমাকে আমার চেয়ে?
সত্যি বলছি, খোলস নেই কোনো তোমার
সেখানেই তুমি অদ্বিতীয়
সবসময় তোমার সরলতা সাহস এবং অকৃত্রিম ভঙ্গি আমাকে দুনির্বারভাবে আকর্ষণ করতো
কিছুতেই এড়াতে পারতাম না
নিজের আবেগ এবার রোধ করতে পারলাম না
বললাম-
সত্যি খুন করেছি আমি তোমাকে
না, তুমি বেঁচে নেই
কিন্তু খুন করে তোমাকে আমি হায় মহানন্দে বিপ্লবী সেজে বেঁচে আছি
কথাটা যে তুমি বুঝতে পেরেছো এটাই আমার
সবচেয়ে বড় পাওয়া
মানছো তাহলে যে, তুমি আমার খুনি?
হ্যাঁ।
দ্রুতবেগে গাড়ি চালাতে চালাতে মিষ্টি হেসে বললো সে
খুনির হাতটা যে এখন শক্ত করে ধরতে ইচ্ছা করছে খুব।
বললাম
ধরো। নিষেধ কে করেছে? তার আগে গাড়িটা রাস্তার পাশে থামাও।
না হলে পথের দ্রুতগতির অন্য খুনিরা হঠাৎ তোমার আর আমার উপর চড়াও হবে।
রাত গভীর হয়েছে অনেক।
সমুদ্রের কাছে নিরিবিলি স্থানে হাতটা শক্ত করে ধরে আছে সে এখনো
কিছুক্ষণ কান্নাকাটি করে সে চুপ মেরে গেছে
কথা বলছি না কেউ
হঠাৎ বললো সে, কাঁদছি শুধু এ কারণে নয় যে তোমাকে পাইনি
সত্যি বলছি তোমাকে না পেয়েও অনেক পেয়েছি আমি
কাঁদছি শুধু এ কারণে যে তোমাকে অনেক কিছু দেবার ছিল
যা দিতে পারিনি
নিঃসঙ্গ সময় কাটিয়েছো তুমি
কিন্তু কতো কিছু পাবার ছিল তোমার আমার কাছে।
মাঝে একবার শুধু বলেছি
দূরালাপনে কথা হবে তোমার সঙ্গে মাঝে মাধ্যে, যোগাযোগ থাকবে
কথা নেই তার কণ্ঠে। সব কথা তার এখন চোখের চাহনিতে
হাতটা সে আরো শক্ত করে ধরার চেষ্টা করছে
বাইরে মৃদুমন্দ বাতাশ বইছে
ধ্রুব তারাটাকে এখন দেখতে পাচ্ছি আকাশে
ধ্রুব তারার দিকে তাকিয়ে আমার কেবলই মনে হচ্ছে
সকালটা এতো দ্রুত এগিয়ে আসছে কেন?
সময়টা যদি সত্যি স্থির হয়ে যেতো কিছুদিনের জন্য