রাহমান চৌধুরীর গদ্য ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট না হয়’
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : নভেম্বর ২৭, ২০২৪
ভারতে যে মুসলিমরা রয়েছে, মুসলিমদের কোনো সংগঠন কখনো তাদেরকে নিরাপত্তা দিতে পারবে না, যদি ভারতের বৃহত্তর জনগণ তাদের পাশে না দাঁড়ায়। ভারতের মুসলমানদের বিপদে ভারতের বৃহত্তর জনগণই সবসময় দৃঢ়চিত্তে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এটাই ভারতের দীর্ঘ ইতিহাসের সত্য।
বাংলাদেশেও হিন্দুদের নিরাপত্তা দেবে হিন্দুদের কোনো সংগঠন নয়, বৃহত্তর জনগোষ্ঠী। বৃহত্তর জনগোষ্ঠী সাম্প্রদায়িক নয়, সকল ক্ষেত্রে তারাই সুরক্ষা দেয় সংখ্যালঘুদের। বাংলাদেশ ও ভারতের ইতিহাসে বারবার এই সত্য লক্ষ্য করা গেছে। সাধারণ মানুষের প্রতি তাই সকলকে আস্থা রাখতে হবে।
ভারতে গরুর মাংস খাওয়ার জন্য যখন মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে, তখন তার বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিবাদ করেছে বৃহত্তর হিন্দু জনগোষ্ঠী। রাষ্ট্রের সর্বস্তরে তাদের প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে। এই সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই। বাংলাদেশে যখন পূজামণ্ডপে হিন্দুদের দেবদেবির মূর্তি ভাঙা হয়েছে, সকল স্তরের মুসলমানরা ছুটে গেছে তার প্রতিবাদ জানাতে।
বারবার এই সত্য দেখা গেছে এ দেশেও। এই সত্য অস্বীকার করা অন্যায়। মানুষের ভিতরকার সেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন কারো উস্কানিতে নষ্ট না করা হয়। যদি তা করা হয় রক্তপাতের দিকে ঘটনা গড়াবে, তাতে হিন্দু-মুসলমান কারো লাভ হবে না। লাভ হবে কেবল ক্ষমতালোভী উস্কানিদাতা কুচক্রীদের।
বাংলাদেশ ভূখণ্ডে যারা আছি ও বাস করবো, সকলেই মিলেমিশেই আমাদের নিরাপত্তা অর্জন করতে হবে। যারা লুটপাট করে দেশ ছেড়ে পালাবে, এ ভূখণ্ডের মানুষদের জন্য তাদের দরদ থাকতে পারে না। যারা এখানে বসবাস করবো, মাটি কামড়ে পড়ে থাকবো; এটা আমাদের সকলের ভূখণ্ড। যদি এখানে সাম্প্রদায়িক রক্তপাত হয় তার ক্ষতির শিকার আমরাই হবো।
কারো পরামর্শে তাৎক্ষণিক উত্তেজনায় রক্তপাত ঘটালে, বা অরাজকতা সৃষ্টি করলে তার কলঙ্ক আমাদের সকলকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। সকল বেদনাও আমাদের ভ্রাতৃপ্রতিম দুপক্ষকে বহন করতে হবে। সকল বিশ্বের কাছে আসুন আমরা সাধারণ মানুষরা প্রমাণ করি, আমরা সাম্প্রদায়িক নই। ভুল কিছু হয়ে থাকলে আমরা ঠাণ্ডামাথায় আলোচনা করে ঠিক করবো।
ইতিপূর্বে ভারতবর্ষের প্রতিটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় দেখা গেছে সাধারণ হিন্দু-মুসলমানরা পরস্পরকে হত্যা করেনি। হত্যা যা করেছে, লুটপাট যা করেছে তা করেছে দুপক্ষের কিছু গুণ্ডাপাণ্ডারা এবং তা উস্কে দিয়েছিল কিছু সুযোগ সন্ধানিরা।
লেখক: সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ