রাহমান চৌধুরীর কলাম ‘নাটক মঞ্চায়ন প্রসঙ্গে’
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৯
টাকা থাকলেই জৌলুস দেখানো যায়। সেটা বিয়ে বাড়িতে হোক, নাট্য মঞ্চায়নে হোক বা কারো গায়ের পোশাকে হোক। কিন্তু গায়ের পোশাকটায় যতেই জৌলুস থাক, কথাটা হলো ভিতরের মানুষটা কে? ভিতরের মানুষটা ফাঁকা হলে, বাইরের জৌলুসটা বেশি দরকার হয়; ঠিক যেমন পণ্যের বিজ্ঞাপন। টাকা থাকলে বিয়ের আমন্ত্রণপত্র, খাওয়া দাওয়া আর সাজসজ্জায় জৌলুস দেখাতে সমস্যা কী?
শুনেছি, অনেকের বিয়েতে প্রতিটি আমন্ত্রণপত্র দশ হাজার টাকা ব্যয় করে বানানো হয়েছে, সেটা এক নীরব প্রতিযোগিতা। কিন্তু বিয়ের আসল কথা খাওয়া দাওয়া, সাজসজ্জার জৌলুস নয়। বর-কনের সম্পর্কটা কেমন যাবে, টিকবে কিনা, সেটা দেখে বিয়ের সার্থকতা বিচার হবে। নাটকের ক্ষেত্রেও তাই, নাটকে সারপদার্থ কী আছে, বিষয়বস্তু দর্শককে কতেটা আলোকিত করতে পারছে, বাইরের জৌলুস আর আলোর চাকচিক্য দিয়ে নাটক বিচার হয় না। ভিতরটা ফাঁপা থাকলে, বাইরের চাকচিক্য বেশি দরকার হয়, রদ্দিমাল বিক্রির বিজ্ঞাপনটা যেমন হয়।
বহু যুগ আগে কিছুদিন ঢাকার নাটকে কে কতে টাকা মঞ্চসজ্জায় খরচ করেছে, সেটা ছিলে আলোচনার বিষয়। পরে সেটা পাগলামি বলে চিহ্নিত হয়েছে। কম সাজসজ্জায় নাট্যচক্রের স্পর্টাকাস, ঢাকা পদাতিকের বিষাদ সিন্ধু, তীর্যকের সমাধান, আরণ্যকের আগুনমুখা, দেশ নাটকের নিত্যপুরাণ, বর্তমান সময়ের মহাজনের নাও দেখে মুগ্ধ হয়েছি বিষয়বস্তুর জন্য আর তার সামগ্রিক পরিবেশনা দেখে। আরো উদাহরণ দেয়া যাবে, যেমন উদীচির রাজনৈতিক হত্যা। মামুনুর রশীদের সংক্রান্তি, ঢাকা থিয়েটারের বনপাংশুল, থিয়েটার এবং নাগরিকের যৌথ প্রযোজনা ম্যাকবেথ; এগুলিও তার উদাহরণ।
সবগুলি নাম স্মরণ করতে পারছি না তাৎক্ষণিকভাবে। মঞ্চসজ্জা করার নিষেধ নেই, কিন্তু চমক সৃষ্টি করার লক্ষ্যে, টাকার প্রদর্শনী হবে নাটকের নামে সেটা নাট্যচর্চার সুস্বাস্থ্যের জন্য কাম্য নয়। বিষয়টা খুব মাথায় রাখা দরকার, নাটক মঞ্চায়ন করার ব্যয় কোটি টাকার ঘরে নিয়ে যাবার সামর্থ আমার দেশের মানুষের আছে কিনা, সার্বিক নাট্যচর্চাকে টিকিয়ে রাখতে। রাশিয়ার একটা প্রবাদ আছে, একলোক টলস্টয়ের মাথার টুপির মতো টুপি খুঁজছিলেন, অন্যজন বললেন, টুপি পাবে কিন্তু ওরকম মাথা পাবে কোথায়?