রাজীব জবরজং
রাজীব জবরজংয়ের চারটি কবিতা
প্রকাশিত : আগস্ট ০৭, ২০২১
বিনয়ের লগে বাহাস
অফিসে হঠাৎ বিনয় আইসা আমারে কইলো,
শয়নভঙ্গির মতো স্বাভাবিক, সহজ জীবন পেতে হলে ঘ্রাণ নাও, হৃদয়ের অন্তর্গত ঘ্রাণ।
আমি বিনয়রে কইলাম,
জীবন একটা গাণ্ডু প্রকৃতির স্যাটায়্যার ছাড়া কিচ্ছু না
ওইটা নিয়া ভাবলেই লস,
জীবনের ওজন যে বয়ে বেড়ায় তারে নিয়াই সে স্যাটায়্যার শুরু কইরা দেয়।
এর চেয়ে বরং মৃত্যু কিংবা জন্ম নিয়ে ভাবা ভালো।
যে কোনও কিছুর মৃত্যু, যে কোনও জন্ম যে কারও।
এই যে হুদাই একটা তুমি বিনয় মজুমদার একটা মানুষের আদলে কিছু বাতাস বয়ে বেড়াচ্ছিলে,
যে বাতাস কারও কারও মগজের ধুলো উড়িয়ে দ্যায়,
সেই উড়ে যাওয়া ধুলোর জন্ম, সেই ভাইবাই কূল পাই না আবার জীবন!
শরৎকাল বন্ধুর যাইবার কাল
বন্ধু দরজার সামনে দাঁড়াইয়া থাইকা কইলো, থাকো তাইলে আমি গেলাম।
ঘরের দরজা দিয়া বাইরে কতদূর যাওন যায় আমার জানা হয় নাই এখনও।
তবে আমার ঘরের দরজার বাইরে কোনও সিঁড়ি নাই, এইটা জানি।
ম্যালা উঁচুতে ঘর বানাইছিলাম যাতে পানি না ওঠে।
বন্ধু ঘরে ঢুকছিল বন্যার সময়ে, চাইরদিকে পানি থইথই
বন্ধু আমার সাঁতরাইয়া ডুইকা পড়ছিল ঘরে।
এখন শরৎকাল, পানি নাইম্যা গ্যাছে
বন্ধুরও যাইবার সময় হয়্যা গ্যাছে, কিন্তু আমার উঁচু ঘরের দরজার বাইরে কোনও সিঁড়ি নাই...
জীবনানন্দের মাতাল ভূত
এইসব শীতের রাতে আমার বাড়ির পাশের তালগাছে বসে থাকা বায়ুভূক পাখিটার ঠোটে মৃত্যু নামে
এইসব শীতের রাতে তোমাদের বালিশভরা ঘুমে মৃত্যুর সাপ নেচে যায় বন্ধু...
এইসব শীতের রাতে হাসনাত শোয়েব মাংসের ভিতর আষাঢ় ডুবিয়ে রাখে
এইসব শীতের রাতে ফিদেল কিংবা হাভানার চুরুট চর্চায় কবিতারা মরে যায়
এইসব শীতের রাতে আমাদের প্রেমিকাদের মগজে শুয়োপোকার চাষবাস জমে ওঠে
এইসব শীতের রাতে আমাদের ব্যথার ভূমে কথার আবাদে কবি মরে যায়
এইসব শীতের রাতে ভাতের ভূখণ্ডে সমাজ যোগাযোগ একটি জরুরি ডিসকোর্স বলে বিবেচিত হয়
এইসব শীতের রাতে আমরা ভ্রুণ হয়ে দৌড়ে বেড়াই জরায়ু ছিড়ে ফেলার আকাঙ্ক্ষায়
এইসব শীতের রাতেই আমরা জরায়ুর দিকে ছুটে যাই,
এইসব শীতের রাতে বন্ধু, তোমাদের বালিশভরা ঘুমে মৃত্যুর সাপ নেচে যায়
ওয়াটার স্ট্রীট
তিনদিন আগে পরিচিত হওয়া এক মাতাল আইসা আমারে জিগাইল, ডু ইয়্যু রিমেম্বার মি?
আমি কইলাম, কী জানি!
সে কইলো, আই অ্যাম ওয়াটারস্ট্রীট। মাই নেম ইজ ওয়াটারস্ট্রীট।
আমি কইলাম, আইচ্ছা, কিন্তু জল তো দেহি না!
সে কইলো, কলিজা আছে তোমার?
আমি কইলাম, কী জানি!
সে কইলো, আমিই ওয়াটারস্ট্রীট, তবে জলের প্রশ্নের জবাবটা আমিও কী আর জানি!