
রাজীব জবরজং
রাজীব জবরজংয়ের গদ্য ‘মইরা গিয়া বাঁইচ্যা গেছেক’
প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫
ঢাকার রাজধানী নাকি টোলারবাগ! এমন এক বিশ্বাস নিয়া রাজীব একদিন আমারে কইলো, ‘আপনে শ্যামলী খাড়ান স্টুডিওর সামনে, আপনেরে যাওয়ার পথে তুইলা নিমু।’
আমি জিগাইলাম, ‘আপনি কোন বাহনে চাপছেন?’
রাজীবে কইলো, ‘বাসে।’
রাজীব মানে যেইটা মইরা গিয়া বাঁইচ্যা গেছেক, রাজীব আশরাফ। আমি স্টুডিওর সামনে খাড়ায়া থাকতে লাগলাম। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক যায় যায় দশায় দেখি, রাজীব হাঁইট্যা আসতেছে।
শাহবাগ না গিয়া আমরা গেলাম আগারগাঁও। নানান উচ্চতার পাহাড়-পর্বত গলাইয়া যেই না শাহবাগের দিকে মুখ করছি, রাজীবের বন্ধু ফোন দিয়া কইলো, আইডিবির রাস্তায় খাড়ান, যাওয়ার পথে তুইলা নিমু।
আমরা খাড়ায়া থাকতে লাগলাম। রাইতের তখন ১০টা। রাজীবের বন্ধুর ম্যালা টেকা। টেকার গরমে গাড়ি তার তেলে চলে, কেরুর বোতল সিটের তলে। আমরা খাড়ায়া থাকি আর রঙ-বেরঙের বিড়ি জ্বালি।
রাজীবের বন্ধু আইসা কয়, চলেন কুমিল্লা যাই। আমরা যাইতে থাকলাম। কুমিল্লায় নাকি একটা ভাতের হোটেল আছে। সেই হোটেলে গোস্ত দিয়া খাইলে সাবান দিয়া হাত ধুইতে হয় বিয়াল্লিশ বার!
আমরা যাইতে থাকলাম আর ভাবতে থাকলাম, আইবার সোম হালায় গাড়ি চালাইবো কেমনে? হাত পিচলাইয়া যাইবো না তো?
তাও আমরা গোস্তের ঝোলে হাত ধুইয়া ফিরা আসলাম। ভোর তখন সাড়ে চাইরটা, আমরা তখন মরা তালগাছ, আমরা তখন শাহবাগ। রাজীব কইলো, ঐ রিকশা যাইবো নাকি? ঢাকার রাজধানী টোলারবাগ? পূবালীর তলে ডিমের ঔমে ভাজা ভাজা দো-জাহান।
রাজীবের নাকি পেটে মোচড়ায়, আজিজেই শেষ ভরসা! আমরা পেটের মোচড় আজিজে রাইখা, রিকশা নিলাম ফারামগেট। সূর্য হালায় অফিস ধরবো? হের লাইগাই কি তেজ দেহায়? রাজীব কইলো, ‘জ্বালান বিড়ি, কাটেন আগুন আগুনে।’
ফারামগেটে ফারামের পোলা মাইয়ারা কান্ধে তুইলা ভবিষ্যৎ রওনা দিছে ফোকাসে! রাজীবে কয়, ‘ধরছে ঘুমে, ছাড়ান নাই! ধুরো হালায়, টোলারাগে কারেন নাই!’
ফারামগেটের খেজুর বাগান, রিকশা মায়েরে গাইল পারে। আনসার সাবে চেইত্যা গেছে, পাঁচ টেকার নোট ভিজা ক্যা? সূর্য বেডায় ডিউটি করে, আমরা আইলাম সিনেমা হল।
ঘুমে তো চোখ খায়া গ্যাছে, রাজীবে কয় গেলাম গা। আমি আবার খাড়ায়া রইলাম, কে যে কখন তুইল্যা নেয়!
লেখক: কবি