রাঈসা সিদ্দিকা
রাঈসা সিদ্দিকার পাঁচ কবিতা
প্রকাশিত : ডিসেম্বর ২৩, ২০২৩
যাপন
দুটো ছেলেমেয়ে
মুখ হাঁ করে খালি বাতাস গেলে
আইল্যাশ জমা রাখে রিসাইকেল বিনে।
বাপের চলাচল, অচলাচল
সবই কেন তুফানের মতো?
দুটো ছেলেমেয়ে মাথা দোলায়ে হাসে, ধীরে
‘আমরা ভাইস্যা যাওয়া লোক বন্যা ও বানে।’
দরজার চৌকাঠ থেকে
মাখন মাখন মায়েরা
ছিনতাই হয়ে পড়ে আছে
ডাকাতিয়া নদীতে
কিছু লাল শাপলার পাশে।
দুটো ছেলেমেয়ে আধাসেদ্ধ গরুর মাংসের মতো
অতৃপ্তি নিয়ে খাটে বসে,
‘না হইলাম ক্ষুধার ওষুধ, না হইলাম স্বাদের জিলাপি।’
নির্ভুলের মতো ভুল
কিছু মানুষ খেতে পারে না কিছু,
দুটো ছেলেমেয়ে
মুখ হাঁ করে খালি বাতাস গেলে।
দুটো ছেলেমেয়ে হয়ে গেল মুখের ব্যায়াম
ফড়িং ধরার সাধে
আইল্যাশ পোড়ায়ে
মোরগের ঝুঁটি তখনো সোজা হয় নাই।
একটা ইম্যাজিনেশন
একটা ইম্যানিজেশনে ঘোরার জন্য চোখ বন্ধ করি না।
অনেক হেঁটেছি।
অনেক ছুঁয়েছি, রেখেছি কাছে,
সাময়িক তবে,
কিছু ভালো দেখিনি।
আমি কিছু পাইনি,
শুধু একটা লাটিম ভনভন করছে সময়ের বেশ আগে। তাকিয়ে আছি।
একটা ইম্যাজিনেশন, সেটা কি আছে, কোথাও,
আমাদের খাকি পোশাকের বাইরে, বাইরে,
অন্য কিছু,
মেঘের দেশে বাস করে যেমন থাকে রূপকথার বইতে,
মানুষ বলে।
মেঘ,
মেঘের দেশ ভ্রমচারী।
একটা ইম্যাজিনেশনে অতিক্রান্ত
স্পেইস অ্যান্ড স্পিরিট, ফ্রিডম অ্যান্ড উইল।
ইনফিনিট ডট ডট বিন্যস্ত হয় গোল হয়ে
গোল্লাছুটের মতো।
একটা ইম্যাজিনেশন আছে কোথায়?
এটা বাস্তবে।
সেরেবেলামে।
একশ চুমোচুমির পর, একশো ধরাধরির পর
দেখে চোখ,
একটা ইম্যাজিনেশন শুয়ে আছে দৈবাৎ
পানিতে, ফ্লোরে,
তুমি বা আমি পাহাড় নাকি সমুদ্র?
একটা জানালা দেখে হাওয়া,
ঢুকে যায় শান্তিতে।
ডর্মের বাইরে
ডর্মের বাইরে
রুপোলি বালুর স্তরে
বাদামি সাদা কুকুরছানারা লাফায়
মায়ের কোল রেখে
বাবার আঙুল ছেড়ে।
ফ্রায়েট নাগেটস ঝুলতে থাকে
পেন্ডুলামের মতো আমাদের হাতে
হঠাৎ
কুকুরের নিরন্তর ঘেউঘেউ, ছেদ পড়ে সমদ্রুতিতে,
এ উন্মাদের দল বৈ কিছু নয়।
এই প্যান্টের শরীর খামচে ধরে,
ওই লম্ফঝম্পের প্রতিযোগী হয়ে যায়।
এ কেমন কারবার!
নক্ষত্র বিজারণের দিনে জেনেছি,
তারা ঘেউঘেউ করে ক্ষুধায়
পৃথিবীর ওপর ছিটকে পড়া উল্কাপিণ্ডের মতো।
মায়া মায়া হয়,
যদিও
কুকুর দেখলে লোমগুলো সব উঠে যায়
সজারুর মতো,
তবু অনাহুত চাঁদের আলোয়
কুকুরের নির্ভেজাল ঘুম দেখার জন্য
ছুটে যাই ডর্মের বাইরে
সাড়ে দশটার পরে, নিষেধ ভেঙে।
এখানে কোথাও ব্যারিকেড মানি না।
ব্যত্যয়
আমার শহরে যাওয়া হয় না, গ্রামেও যাওয়া হয় না।
‘আমার রাজত্বে আমি রাজা’
ভেবে ভেবে আমার কোথাও যাওয়া হয় না।
ঝুলতে থাকি জলে ভেজা চিমসানো
বা তেলেভাজা মচমচে চিড়ের নিঃসঙ্গ স্বাদ মুখে,
পাঁচ বছরের ঘুম ঘুম স্বপ্নে পাখি দেখার সাধ
অটোমোবাইলের পেট্রোলে মিশে কেমন ভজকট পাকায়!
কান্না পায়,
কান্না জানে না নিয়মের বারণ,
কান্না পায়,
কম্বলের তলায় ঘুমের সময় পুরানো স্বপ্নের স্মৃতি মনে করে।
আমার হলদে হলদে ঘোরাফেরা, ঘোরাফেরা হয়ে ওঠে না,
কারণ রুটি কখনোই আয়না হয় না,
রুটি আর আয়নার পার্থক্য বুঝতে দেরি হয়,
বোঝার ভুল আমাদের ভোগায়।
সময়
মৃত্যুর ছায়া নড়ছে এপাশ ওপাশ
হারিকেনের হলুদ আলোটাও ঢুকে যাচ্ছে মাটির গভীরে,
একটা হাতের পাঁচটা আঙুল শোনাচ্ছে করুণ গান,
চোখে অপরিণত আঁধার দেখি।
হকারের মতো উড়ি, পত্রিকা নিয়ে,
আর বাসায় বাসায় চিরকুট ফেলে যাই,
‘মনে পড়ে কি কাল রাতের দহনে দেখা কোনও জীবিত স্বপ্ন?’
কারা জানি হাইকু লিখতো,
কারা জানি বাঞ্জি জাম্পিং করতো,
কারা জানি সোল্লাসে শহরে শহরে দৌড়াতো?
এইসব এইসব— যাবে
প্রাগৈতিহাসিক ফসিল হিসেবে ল্যাবরেটরির কাচের বাক্সে?
বিলাস ও বিনাশ
বিলাসহীন ও বিনাশহীন
মায়েদের স্তনের বোঁটা শুষ্ক হয়ে আছে
কড়া হিউমিডিটিতে।