রথো রাফির কবিতা ‘হাজার বছর পরের গল্প’
প্রকাশিত : অক্টোবর ২৪, ২০২১
প্লাস্টিকের একটা-দুটা গাছ সবুজ রঙ করা
পাতার ফাঁকে প্লাস্টিকের ফুল-ফল
মানুষের বারান্দায়, ঘরে, রাস্তায় রাস্তায়
ছায়ার আশ্বাস আর কোথাও নেই
রাত হলে ডালপালায় জ্বলে ওঠে আলো
ঘরের বাইরের
চার দেওয়ালে ও ছাদে বসানো
ক্লোরোফিলের কারখানায় দিনরাত তৈরি হয়
নানা স্বাদের খাবার
তাতে মেশানো হয়
নানান ফুল-ফল কিংবা মাছ-মাংসের ফ্লেভার
বিকেল হলেই ঘরের ভেতরের
দেয়ালগুলো হয়ে পড়ে ভার্চুয়াল স্ক্রিন
হয়ে ওঠে ঘরের ভেতরটা যেন খোলা মাঠ
ছাদটাই হয়ে ওঠে
সাদা মেঘ ভেসে চলা নীল আকাশ
শিশুদের তখন গল্প শোনায় মা-বাবারা
মায়েরা শিশুদের দেখায় ভার্চুবিশ্বের
বাতাসে ডালপালা নাড়াতে থাকা কত না গাছ
উড়তে থাকা নানা রঙের পাখি
বাবারা বলে, জানো, এরাই হচ্ছে আসল গাছ,
এরাই হচ্ছে আসল পাখি
এরা হাজার বছর আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে
মায়েরা বলে, জানো একসময় মানুষ
গাছের ছায়ায় বসে গল্প করতো
তখন চারপাশজুড়ে সত্যিই থাকতো পাখির কোলাহল
শিশুরা আগের মতোই বলে, মা-মা
বলো না, কবে আবার আমরা মাঠে যাব!
মায়েরা বলে, ছয়মাস পর হয়তো আবার
শুধু ত্রিশ মিনিটের জন্যই
সে সুযোগ পেতে পারি আমরা
বাবারা বলে, বাইরে যাওয়া নিরাপদ নয়,
ত্বকে ক্যান্সার হয়,
ফুসফুসে ঢুকে পড়ে খুনে অদৃশ্য ধুলিকণারা
শিশুরা বলে, কী সুন্দর ছিল
ওই মাঠের গাছগুলো, রাতে আলো দেয়
তাদের ডালে বসে প্লাস্টিকের
পাখি গান গায়, আর ওড়ে!
মা-বাবারা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আর ভাবে
বিলুপ্ত হতে হতে
কিছু মানুষ কিভাবে যে বেঁচে গেছে
তবে মোটা দেওয়ালের জানালাহীন ঘরে
বন্দি হয়ে গেছে একেবারে
হাহাকার ছড়াতে ছড়াতে বাবারা
শিশুদের বলে,
বাইরে ঈশ্বর বলে আর কিছু নেই,
ধাবড়ে বেড়ায় শুধু আজরাইল!
মায়েরা বলে, বাইরে যেতে হলে
আশরীর মাস্কে বন্দি হতে হয়
বাবারা বলে, চশমাবন্দি চোখে
বাইরে ওই পৃথিবী দেখে কোনো মজাই নেই
আর কিছুই ছুঁয়ে দেখা যায় না
যতদূর চোখ যায়,
ধুলোর সর পড়া মাটির নিস্ফলা সমুদ্র
মা-বাবারা বলে, এই যে ঘরের ভেতরে
বন্দি থাকা তা-ই শুধু
মনে হয় প্রাণের নীল নিরাপত্তা
শিশুরা বলে, আমরা কি কোনোদিন
সবুজ গাছপালা দেখতে পাবো না খালি চোখে
মায়েরা বলে, হয়তো কোনোদিন পাবো,
তা হয়তো হাজার বছর পরে,
কেউ হয়তো সত্যিই দেখতে পাবে
পৃথিবীর কোথাও ফলানো সম্ভব হয়েছে
কচি কচি কত সবুজ চারা
কিন্তু শিশুরা আমার, আমরা তখন আর
থাকবো না রে এই পৃথিবীতে!