রওশন আরা মুক্তা

রওশন আরা মুক্তা

রওশন আরা মুক্তার গদ্যকবিতা ‘খাজনা ৭৮৬’

প্রকাশিত : নভেম্বর ০৭, ২০২১

নাস্তিকেরে বাসি আমি সবার চেয়ে ভালো, মোল্লা বলেন, সত্য হলো— অন্ধকারে কালো পাথরের উপর— পিঁপড়া একটা কালো। রাত-বিরাতে সাপকে রশি ভেবে ঘুরান, ভবনে ভবনে ‘ফায়ার’ নাম লিখে ‘আল্লাহ আল্লাহ’ পড়ান; আগুনে ধান-দূর্বা-বীজ ঢেলে সত্যের বাতি জ্বালান! এবার জল সামলাও, এবার হিসাব দাও, এবার দাও তোমার চোখের মণি, আলু বেচো কলা বেচো এখন বেচো তোমার সোনার খনি। ঈমান বেচো, আকিদা বেচো, বেচে দাও গ্যাস— পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসাও, বিদ্যুৎ পাচারে বাড়বে ক্যাশ। এক দেশে মারো ‘মাদার অব অল বম্বস’ আর দশ দেশে প্রচার করো তার নিউজ, তেত্রিশটা টিভিতে দেখাতে থাকো চৌষট্টি কলা, গুণতে থাকো ভিউজ। দাও বিজ্ঞাপন ‘এটাই ভালো স্যানিটারি ন্যাপকিন’ অন্যদিকে, জরায়ূ ক্যান্সার রোধে সাজাও সেন্ট্রাল মেডিকেল সিস্টেম— বিজ্ঞাপনের চিপায় নিউজ যাবে, আর নিউজের চাপে হারাবে সংবাদ, পাশাপাশি গুণতে হবে কিছু গরিব লাশেরও হিসাব— জলপাই কালার `ক্যাজুয়ালিটি` নাম দেবে তাকে, লিগ্যাল হবে নীলের `ট্রিগ্যার হ্যাপি অ্যাকশন`, জলপাই আর নীলের মিশেলে সব অন্ধকার হয়ে যাবে, জজ-ব্যারিস্টার গ্রীষ্মকালেও পরবেন সেই কালো গাউন। শুনতে হবে কৃষকের আর্তনাদ, খুলতে হবে জমিদার দর্পণ— সাদাতে সাত রঙ ধরা মাথায় প্রকৃতির তাজ পরা— সাফাভিরা হুমায়ূনকে দিয়েছিল চাঁদের সে মূলধারা সেনাপতি বৈরাম বা কেউ বাঁচাতে পারেনি সম্রাটরে, মরেছেন তিনি ছোট্ট দুর্ঘটনায় নিজ অট্টালিকার পড়ার ঘরে, মাগরিবের নামাজের তরে… দ্রুত নামছিলেন সিঁড়ি ধরে। হাতি নাচছে ঘোড়া নাচছে খোকন সোনার বিয়ে! একদা শেরশাহ পরাজিত—হুমায়ুনপুত্র বালক আকবরে কোন সত্য গোপনে বসে সিংহাসনে গিয়ে? বাপ-বেটার সেনাপতি একজনই— বৈরাম বেগ, আহা আবেগ, হুমায়ুন— খান খানান, রাজাধিরাজ নাম দিয়ে গেছেন তারে। প্রথম সম্রাট বাবর মানুষ মেরে স্বেচ্ছামৃত্যু নিয়েছিল পুত্র হুমায়ুনের জ্বরে; কৃষকের মান চন্দ্রবর্ষ, খাজনার চাপে বর্ষ সূর্যের হিসাবে ঘোরে, সৌরবর্ষের চেয়ে চন্দ্রবর্ষ ১১ দিনের ছোট, কৃষক খাজনা দেয়, দিনকেদিন ভক্তিভাবে সময়ের ফেরে পড়ে। ১৫৫৫তে ১৬ বছর পর সম্রাট হুমায়ুন পারস্য থেকে এসে আবার দিল্লির সিংহাসনে বসে, ১৩ বছরের আকবরকে দিয়ে, দিল্লির সিংহাসন নিয়ে যুগে যুগে খেলছে কারা রসে আর কষে। ঠিক ঠিক ১১১ বছর পর; তিন একে তিন; ১৬৬৬-তে সম্রাট শাহজাহান— হায় ‘পৃথীবির রাজা’ কেন রে… পুত্র আওরঙ্গজেবের বন্দি হয়ে পতাকা লাগানো দুর্গের ভিতর মরে? শাহজাদা খুররাম বাপের আত্মসমর্পণে নিজেই নিজেকে অভিষেকে সম্রাট শাহজাহান নাম দিলো, দাদা আকবরের সে খুব প্রিয় ছিল, জাহাঙ্গীর সব ধর্মের কৃষকের খাজনা সমান করলো; আপন ভ্রাতা খসরুর চোখ করে দিলো অন্ধ, এতে কোন সাম্যটা হলো? সাম্রাজ্য বিস্তারে দেশকাল গেল পঞ্চরিপুর তরে! শাহজাহান অহেতুক অট্টালিকা বসালো জমির উপরে তৃতীয় সম্রাট আকবর ১৩ বছর বয়সে সিংহাসনে বসে; বখতিয়ার খলজীর নদীয়ায় অগ্রহায়ণে ফসল আসে ১৩ বছরে মুঘলদের তিন নম্বর সম্রাট আকবর সামনে ঠেলে দিল পঞ্চম বিশাখা নক্ষত্ররে— সুর্যের অগ্রহায়ণ অহেতুক হলো ৮ নম্বর মাস, এক দুই আর তিনের খেলায় সম্রাট আকবরও পাঁচ আটা ৪০ এর হিসাব ধরে। সম্রাট আকবর বৈশাখের প্রথমদিনে নববর্ষ আনলো ব্রিটিশ বুদ্ধির সৌরবর্ষ দিয়ে খাজনা তুলে নিলো; দ্বীন-ই-ইলাহি নামে ধর্ম বানালো, শাহজাহান অহেতুক সৌন্দর্য বানালো— তাজমহল নাম দিলো শেষে; এখনও আগ্রায় বিক্রি হয় টিকেট, হাসিমুখে সকলে সেটা দেখতে যায়, হোটেল বুক করায় অথচ ১৪ নম্বর বাচ্চা  দিতে গিয়ে মমতাজ মরেছে শাহজাহান তারে প্রেম নাম দিয়েছে; হাহাহা করে শয়তান হেসেছে, ব্রিটিশ গাউন পরা সেনা ভদ্রলোকের ১৪ই এপ্রিলে এসে, ৮৮’র অষ্টম সংশোধনে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের মুসলিম জনতা’ মঙ্গল শোভাযাত্রার ফেরে পড়েছে পাকা পাকা বামগুলো সব নববির রিয়াজুল জান্নাতে খোঁচা মেরেছে হালে ‘আল্লাহ’ বলে পরের মাথায়— কে যে কাঁঠাল ভেঙেছে মওলা বক্স শুধান, মমতাজ কেন পাগল হয়েছে? লিপির জন্মের আগেই সিলেটে দোস্তের বাড়িতে খালু মরলো, লিপি শিশু মমতা খালা সোহাগী থেকে একা একা সিলেটের ট্রেন ধরেছে ‘এতিম ও পাগলীর মেয়ে লিপি’ বলেছে,  ‘কারণ মানে প্রমাণ’ বিয়ের পর সেও পাগল হয়েছে তাকেও শিকলে বেঁধেছে জিভ না চিনে আল্লামা শফি; মায়ের ভাষায় মাকে তেঁতুল বলেছে হাহাহা করে হেসেছে শয়তান বসেছে নাকে ধরেছে কান; খাজা মাইনুদ্দিন চিশতীর মাজারে নিয়ত করে খাজানা চেয়ে কারা নিচ্ছে দাগ কপাল ঘষায়, ঢেকে গেছে চোখ নিউক্লিয়ার চশমায়। মুক্তিযুদ্ধে ভাসানীর একা একা নৌকা ভাসা, সোহরাওয়ার্দিতে বুক চাপড়ে বঙ্গবন্ধুর কান্না আসা; যোগগুণের হিসাব ছাড়া যাবে না এ ভেদ ধরা, কই আপনার সেজদা কই আপনার নামাজ কই আপনার সমর্পণ?
পড়তে জানি না, আয়াতের মানে জানি
প্রেম ছাড়া হারাম সত্যের ধরন নিরুপণ।