যমজের রাজধানী ইগবো ওরা
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৮
নাইজেরিয়ার ছোট্ট শহর ইগবো ওরায় প্রতি হাজারে যমজের সংখ্যা গড়ে ১৫৮টি। এ কারণে ইগবো ওরাকে বলা হয়, যমজের রাজধানী। ইগবো ওরায় এ সংখ্যক যমজের ঘটনা বিস্মিত করেছে বিজ্ঞানীদের।
অথচ ইউরোপে জন্ম নেয়া প্রতি এক হাজার শিশুর মধ্যে গড়ে ১৬টি যমজ হয়। যমজের সংখ্যার দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এ সংখ্যা গড়ে ৩৩টি। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের দেশগুলোতে যমজের হার প্রতি হাজারে ৪০ থেকে ৪৫টি।
ব্রিটিশ স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ প্যাট্রিক নিলান্ডার দশ বছরের বেশি সময় ধরে কিছু দেশের ওপর গবেষণা করেছেন। কিন্তু নাইজেরিয়ার শহর ওয়ো স্টেট থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরত্বের ছোট্ট শহর ইগবো ওরায় এত সংখ্যক যমজের রহস্য উদঘাটন তিনি এখনো করতে পারেননি।
চিকিৎসা শাস্ত্র অনুযায়ী, মায়ের গর্ভে দুটি শুক্রাণু একসঙ্গে একটি ডিম্বাণুর সঙ্গে অথবা দুটি ভিন্ন ডিম্বাণুর সঙ্গে নিষিক্ত হয়ে যমজ সন্তানের জন্ম হয়। দুটি ভিন্ন ডিম্বাণুর সঙ্গে দুটি শুক্রাণু নিষিক্ত হয়ে যে যমজের জন্ম হয়, বৈশিষ্ট্যগতভাবে তারা কিছুটা ভিন্ন হয়ে থাকে। কিন্তু একই ডিম্বাণুর সাথে দুটি শুক্রাণু নিষিক্ত হয়ে সমান দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে দুটি শিশুর জন্ম হলেও তারা যমজ হয়, এই যমজদের বৈশিষ্ট্য অনেকটাই একই রকম। শিশু দুটি পুরোপুরি একই জিন বহন করার কারণে তাদের লিঙ্গ এবং সব শারীরিক বৈশিষ্ট্য একই রকম হয়। এদের আইডেন্টিকাল টুইন বলা হয়।
ইগবো ওরায় বেড়াতে গেলে রাস্তায় চোখে পড়বে অসংখ্য যমজ। বেশিরভাগ বাড়িতেই রয়েছে অন্তত এক জোড়া সন্তান। এখানে কেউ গর্ভবতী হলেই ধরে নেয়া হয়, যমজ সন্তান জন্ম নিতে যাচ্ছে। যমজ না জন্মানোটাই এখানে বিস্ময়ের ব্যাপার। ইগবো ওরায় যমজ সন্তানের আধিক্যের রহস্য জানতে তাই এই অঞ্চলের মানুষের জীবনধারা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন প্যাট্রিক নিলান্ডার।
শান্ত শীতল প্রকৃতির এ অঞ্চলের মানুষের প্রধান পেশা কৃষি ও বাণিজ্য। গবেষকদের ধারণা, যমজ সন্তানের আধিক্যের পেছনে থাকতে পারে এ অঞ্চলের নারীদের খাদ্যাভ্যাস। আফ্রিকার প্রধান খাদ্যশস্য কাসাভা (এক ধরনের আলু) এখানকার নারীদের অন্যতম প্রিয় খাবার। আমালা, গারি ও ফুফুসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার বানানো হয় এ কাসাভা দিয়ে।
ওয়ো স্টেটের ইউনিভার্সিটি অব লোগোস টিচিং হসপিটালের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, এখানকার কাসাভা ও ইয়াম টিউবারে রয়েছে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক যা কিনা যমজ সন্তান জন্মানোতে ভূমিকা রাখতে পারে।
এখানকার যমজ আধিক্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ২০০১ সালে বিবিসিতে দেয়া সাক্ষাৎরে একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, এখানে নারীদের একাধিক ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার পেছনে প্রকৃতিগত কিছু বিষয় ভূমিকা রাখে। আর এর জন্য সবচেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করে নারীদের খাদ্যাভ্যাস। কাসাভা ও ইয়াম জাতীয় খাবারে থাকা উচ্চ মাত্রার রাসায়নিক একাধিক ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করতে ভূমিকা রাখে।
স্থানীয়রা মনে করে, কাসাভা নয়, বরং তাদের বিশেষ কিছু স্যুপের কারণেই এখানে যমজের ঘটনা বেশি ঘটে। ইগবো ওরার গোত্র প্রধান বলেন, আমরা অনেক বেশি ওকরা পাতা এবং ইলাসা স্যুপ পান করি। এছাড়া অনেক বেশি ইয়ামও খাওয়া হয়, যার প্রভাবে যমজ সন্তান বেশি জন্মায় এই অঞ্চলে। সূত্র: পালস ডট এনজি