মুসলিম জাতির অধঃপতনের মূলকারণ

মাওলানা ইফতেখার সিফাত

প্রকাশিত : এপ্রিল ২২, ২০২১

বর্তমান মুসলিমরা কুরআনকে কেবল তিলাওয়াতের বস্তু বানিয়ে রেখেছে। মৃত ব্যক্তির জন্য খতম ও রোগ-বালাই থেকে নিরাপদ থাকার জন্য বিশেষ অংশ পাঠ ইত্যাদি সময়েই কেবল আমরা কুরআনের দ্বারস্থ হয়। কিন্তু আমরা যখন সংসার করতে যাচ্ছি, ব্যবসা করতে যাচ্ছি, রাজনীতি করতে যাচ্ছি তখন কুরআনের দ্বারস্থ হচ্ছি না। মোটকথা ব্যবহারিক জীবন ও চিন্তার জায়গা থেকে আমরা কুরআনকে বিদায় জানিয়েছি। আমাদের অধঃপতনের অন্যতম কারণ বলা যায় এটিকে।

মহান আল্লাহ তা`য়ালা কুরআনকে কেবল তিলাওয়াত করার জন্য পাঠাননি। বরং তিলাওয়াতের পাশাপাশি তাকে বুঝার জন্য এবং বাস্তবায়ন করার জন্য অবতীর্ণ করেছেন। যে ব্যক্তি সারাজীবনে একবারের জন্যও কুরআনকে বুঝে পাঠ করতে পারেনি, তার জন্য উচিত হবে না অধিক খতমের প্রতি আগ্রহী হওয়া। অধিক খতম অবশ্যই সওয়াবের কাজ। কিন্তু এমন ব্যক্তির জন্য বুঝার প্রতি আগ্রহী হওয়া আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

একজন মুসলিম মারা গেল, অথচ সে জানল না এই কুরআনে কী আছে, তার জন্য এটা বড় আফসোসের বিষয়। সে কুরআনের প্রতি নিজ দায়িত্বে অবহেলাকারী হিসেবে বিবেচিত হতে পারে আল্লাহর দরবারে। কারণ কুরআনের প্রতি মুসলিমদের দায়িত্ব কেবল তিলাওয়াতের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়। এই কুরআনকে বুঝা, বাস্তবায়ন করা এবং পৌঁছানোও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।

পবিত্র মাহে রমজান চলমান। এই মাসে কুরআনের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায় সাধারণত। কারণ এই মাসেই কুরআনুল কারীম একসাথে অবতীর্ণ হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, কেবল তিলাওয়াতের প্রতিই আমাদের আগ্রহ সীমাবদ্ধ থাকে। অথচ কুরআনের মর্মকথার প্রতিও আমাদের টান থাকা দরকার এই মাসে। যেন পুরো কুরআনকে অনুধাবন করা যায়। সে অনুযায়ী জীবনকে ও সমাজ ব্যবস্থাকে সাজানো যায়।

যারা প্রাথমিকভাবে কুরআনকে অনুধাবন করার কথা ভাবছেন, তারা নাশাত পাবলিকেশন  থেকে প্রকাশিত ‘খুলাসাতুল কুরআন’ নামের বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। পুরো কুরআনের সারাংশ চলে এসেছে এই বইটাতে। এক মলাটে আপনি পুরো কুরআনকে সংক্ষিপ্তভাবে অনুধাবন করতে পারবেন। এবং এটা আপনার ভিতর কুরআনের যে প্রাকৃতিক বিধান, তা বুঝতে অনেকটা সহায়ক হবে।

এই বুঝটুকুই হচ্ছে কোরআনের মূলমর্ম। এই বুঝটুকু হয়ে গেলেই আপনার চলার পথের জীবন হবে নিরাপদ ও শান্তির। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে সাংসারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সঙ্গে কুরআনের বিধান মেনে চলা যে কতটা প্রাকৃতিক, তা উপলব্ধি করতে পারেন একজন জ্ঞানী ব্যক্তি। যে জ্ঞানী, তার ভেতর ঈমানের শক্তি আরও বেড়ে যায়। তিনি হয়ে পড়েন বিনয়ী।