মিসবাহ জামিল
মিসবাহ জামিলের পাঁচটি কবিতা
প্রকাশিত : নভেম্বর ২৯, ২০২০
নিত্যপ্রয়োজনীয়
নির্ঝর নৈঃশব্দ্যকে
বেদনা আব্বার শাদা ধুতি। আম্মার শায়া-ব্লাউজ। বোনের স্যালোয়ার-কামিজ। ছোট ভাইয়ের পাতলুন।
বেদনা আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পোশাক। গোসল শেষের ভেজা কাপড়ের মতো একটার পর একটা বদল করতে হয়।
একদা দুর্ভিক্ষে
একদা দুর্ভিক্ষে খাবার ফুরিয়েছিল
আব্বা আমাদের গল্প শোনাতেন
ক্ষুধার কথা ভুলিয়ে ঘুম পাড়ানোর জন্য
আব্বার সুমিষ্ট বচনগুলো মনে হতো রুটি
আর গল্পকে মনে হতো মাংসের ঝোল
আমাদের ক্ষুধা মিটে যেত।
আমরা মাঝরাতে পানি পানি বলে চেঁচামেচি করলে
আম্মা জেগে উঠে বিছানায় বসে কাঁদতেন
সন্তানদের বিশুদ্ধ পানি দিতে না পারার দুঃখে
আম্মার অশ্রুজলে আমরা পিপাসা মিটিয়ে নিতাম।
রাশেদা মোকাম ১৬
হাখম দাঁড়িয়ে আছে ছোট্ট এক নদীর উপরে
আর উপভোগ করছে অগণিত পায়ের চুম্বন
এ দৃশ্য দেখার পর আমিও হাখম হয়ে যাই
রাশেদা তোমার চুম্বনের আশা-আকাঙ্ক্ষায়
কিন্তু তুমি হাখমের উপরে উঠছো না কিছুতেই
তোমার মনে কি ছিঁটকে পড়ার আশঙ্কা কাজ করে?
নাকি শরম তোমার লজ্জাবতী গাছের মতন?
শরম-টরম ভুলে হাখমের বুকে উঠে যাও
সীলমোহরের মতো গালজুড়ে চুম্বন বসাও
সার্থক প্রেমিকা হয়ে আমার আত্মায় মিশে যাও
গাছ
জানি না আমাকে প্রভু দিলো কিনা গাছ বানিয়ে। প্রতি লোমকূপে ঝুলে আছে হতাশা ফল। লিচু গাছের মতো নুয়ে পড়ার অবস্থা আমার। হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি ফলই গাছের প্রকৃত বেদনা। আমি অপেক্ষা করছি ফলগুলো পাকার। ফল পাকলে ঝরে যায়, গাছ হালকা হয়। এটাই মূলত গাছের সবচেয়ে বড় চাওয়া-পাওয়া।
দেশলাই
আব্বা তো দেশলাই, লোকে জানে বিপ্লবী হিশেবে। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থাকে তিনি বর্জ্য ভাবেন। বর্জ্যকে পুড়িয়ে সমাজকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিটা দিন যেন তার একেকটা কাঠি। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থাকে পোড়ানোর কাজে ব্যয় করে যাচ্ছেন। একে একে সব কাঠি শেষ হওয়ার পর হঠাৎ একদিন আব্বার জীবনের ইতি ঘটে গেল।