মাসুদ পথিক
মাসুদ পথিকের দুটি কবিতা
প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২৪
জাগলি ধান ও মালা হাতুন
জাগলি ধান ও মালা হাতুন
মালা হাতুন ধান বোনে আর
ঢেকিতে জাগলি ধান ভানে
ঘামে ভেজা শরীর ও আঁচল
ধরে, —টানে দুটি সন্তানে
ডানে ও বায়ে তার দুই সতীন
ভাগ নিয়ে করে কলহ
মালা হাতুনের বুক ধড়ফড়
রক্তকোষের নদীরে সহ
ঘরের ভিতরে শাশুড়ির চই
পান ছেঁচে হামানদিস্তায়
মালা হাতুন ঠোঁটে তুলে দেয়
দানা, অনাহারী পাখিরা খায়
মালা হাতুনের মায়া অনেক
খড়কুটো দিয়ে বুনেছে সংসার
কাম ও কাম দিয়ে এ-জমিন
কোষে কোষে পলি আর সার
মালা হাতুন, অতীতের গান
বেদনার ইতিহাসের বংশ
মালা হাতুন মানুষ ভালো
আর আবহমানের অংশ
মালা হাতুন, মালা ধান নয়
আউশ ধানের কুলগোত্র
মালা হাতুনের সুখদুঃখ আছে
জানা আছে লড়াইয়ের সূত্র
মালা হাতুনের মনে গোপন প্রেম
চাপা ও গুমরায়
এই হাতুনের মতো শস্য ও সুফলা
আর কে আছে অমরায়?
পুরস্কার
প্রথমে, ৪ বছর বয়সে— খুন হলাম দাদার হাতে
জলি ধানের ক্ষেতের আইলে ফেলে রাখলো আমার লাশ
একটা চোখ লাল আইড়াকুতি পাখি এসে বাঁচিয়ে তুললো— শুশ্রুষায়
তারপর আমাকে খুন করলো আমার বাবা
হুঁকায় আগুন জ্বালানোর জন্য তৈরি টিক্কার ডোলায় লুকিয়ে রাখলো
আমাদের এজমালি হুলো বেড়াল আমাকে বাঁচালো
মা যতবার হত্যা করেছে ততবার নিজেই কেঁদে কেঁদে
সুগভীর শোকের ওষুধে ওষুধে
ফিরিয়ে এনেছে আমার প্রাণ
জড়িয়ে নিয়েছে আঁচলে
বউ আমাকে খুন করে খাটের নিচে লুকিয়ে রেখে
পালিয়ে গেল কারো হাত ধরে
সন্তান! খুন করে করে করে শোকের সংসারে জন্ম দিয়ে চলে গেল চিরতরে
আরো কোনো মৃত্যুর দেশে
বন্ধুরা অযুত-নিযুতবার
হিংসায় আর ঘৃণার ঘোলাজলে ডুবিয়ে মারলো আমাকে,
টেনে তুললো সর্বস্বান্ত চাষারা
ঘরে নিয়ে বাঁচিয়ে তুললো এবং শেখালো জমিনে চাষ দেয়া
আমি মূলত একজন চাষা, আচার আচরণ এবং অভ্যাসে এটাই প্রকাশিত
তথাপি আমাকে দেখলে অনেকে নাক সিটকায়, দূরে থাকে
অতঃপর আমাকে নির্মমভাবে খুন করলো পুরস্কার
লাশটা পুনরায় ফেলে দিলো ঘৃণা ও হিংসার ভাগাড়ে,
ভাগাড় থেকে উঠতে পারিনি কোনোভাবেই, —কখনো
আমার পচা লাশের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লো পাশের ঊরু উজ্জ্বল শপিংমলে, আর
মুক্তবাজারে।
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪