মারুফ ইসলামের গল্প ‘অবিকল মানুষের মতো’

প্রকাশিত : মার্চ ০৬, ২০২০

নিঃসঙ্গতাই সঙ্গ দিয়েছে পুরোটা শৈশব। সঙ্গী বলতে ছিল স্বচ্ছ পলিথিনে মোড়ানো একটা কাঠের টেবিল, একটা চেয়ার, একটা থ্রি ব্যান্ড রেডিও (আব্বা বলতেন ট্যানডিস্টার। মূলত ট্রানজিস্টরকে তিনি ট্যান্ডিসটার উচ্চারণ করতেন), একটা নীল রঙের ছোট্ট জানালা আর জানালার ওপাশে একটা বাঁশঝাড়। বাঁশঝাড়ের সবুজ পাতার আড়াল ছেড়ে মাঝে মাঝে জানালায় এসে বসতো একটা দুইটা টুনটুনি, শালিক, মাছরাঙা কিংবা দোয়েল।

পানিরঙের পলিথিনে মোড়ানো টেবিলটা ছিল নীলরঙের জানালা লাগোয়া। সেই টেবিলের ওপর একমুঠো মুড়ি ছিটিয়ে দিলে নীল জানালার শিক গলে ঢুকে পড়ত টুনটুনি শালিকেরা। দোয়েলও আসত কখনো সখনো, কিন্তু মাছরাঙা কদাচিৎ নয়। মাছরাঙার নজর থাকত বাঁশঝাড়টা যে পুকুড়পাড়ে, সেই পুকুরের ঘোলা জলে। মাঝে মাঝে ‘ঝপাৎ’ জাতীয় এক ধরনের শব্দ কানে আসতো, চোখ তুলে তাকালে নজরে পড়ত নীল মখমলের একটা পক্ষীশরীর উঠে আসছে ঘোলা জল থেকে। তার লম্বা ঠোটে একটা পুঁটি মাছ।

ঘরের ভেতর এইসব নিয়ে আমার সংসার। বাইরে উঠোনের এককোণে খড়ের ছাউনি দিয়ে ঘেরা একটুকরো রান্নার জায়গায় মা’র সংসার। মা বলতেন চুলার পাড়। সেই চুলার পাড়ে মা ঢুকতেন সকাল দশটা নাগাদ। আমিও আমার সংসারে ঢুকে পড়তাম দশটার একটু পরপরই ইশকুল থেকে ফিরে। কেননা আমার পাঠাধ্যয়ন তখন চলছিল কিন্ডারগার্টেন ইশকুলে, যা শুরু হতো সকাল সাতটায় আর শেষ হতো দশটায়। ইশকুল থেকে ফিরে দেখতাম, মা ঢুকে পড়েছেন চুলার পাড়ে। জোগাড়যন্ত্র করছেন দুপুরের রান্নাবাড়ির।

ইশকুলের পোশাক ছেড়ে সামান্যকিছু জলখাবার খেয়ে আসন গ্রহণ করতাম নীল জানালার সামনে, কাঠের চেয়ার টেবিলে। হাতের লেখা লিখতাম বাংলা, ইংরেজি, আরবি। অংক কষতাম। কাদের স্যারের দেয়া হোমওয়ার্ক। টেবিলের এক কোণায় পড়ে থাকা ট্যান্ডিসটারটা চালু করে দিতাম আস্তে করে। মৃদু ভলিউমে বেজে চলত অনুরোধের আসর গানের ডালি।

মাঝে মাঝে চুলার পাড় থেকে হাঁক ছাড়ত মা— ‘হলুদের কৌটাটা দিয়া যা তো বাজান।’ আমি পাশের ঘরে রাখা মসলার ডালা থেকে হলুদের কৌটা নিয়ে উঠোনের চুলার পাড়ে গিয়ে দেখতাম, রোদের উত্তাপ আর মাটির চুলার উত্তাপে রক্তজবার মতো লাল হয়ে উঠেছে মার মুখ। ঘাম জমেছে নাকের ডগায়। রক্ত জমেছে বড় বড় দুটি চোখে, সেটা যে মাটির চুলা থেকে উঠে আসা ধোঁয়ার আলিঙ্গনে তা বোঝার মতো বয়েস তখন হয়েছে আমার। থ্রি কি ফোরে পড়ি। সাত আট বছর বয়স হবে।

হলুদের কৌটাটা এগিয়ে দিয়ে ফের এসে আসন লই নীল জানালার সামনে। হোমওয়ার্কের দুটো অংক হয়তো বাকি আছে তখনও। সেটা শেষ করতে করতে সূর্য ঠিক আমাদের মাটির বাড়ির টিনের চালের মাঝ বরাবর উঠে আসে। গাঁয়ের শেষ মাথা থেকে মাইকে ভেসে আসে চান্দের বাপের খ্যাশখেশে গলা, আল্লাহু আকবার... আল্লাহু...

জোহরের আজান পড়ে। তড়িঘড়ি বন্ধ করে দেই গানের ডালি। বই খাতাও বন্ধ করে দিয়ে কাঠের সিংহাসন ছেড়ে উঠে দাঁড়াই। আব্বা আসার সময় হয়ে গেছে। এখনই স্নান সেরে নিতে হবে। গামছা নিয়ে কলপাড়ের দিকে যেতে যেতে দেখি, মা ব্যস্ত হয়ে চুলার আগুন বাড়াচ্ছেন। শুকনো ডালপালা খড়কুটো ঠেলে দিচ্ছেন চুলার মুখে। পাতিলে বলক দিয়ে উঠছে সাদা সাদা ভাতের মাড়।

এক ঝটকায় স্নান সেরে ঘরে ফিরে দেখি, আব্বা চলে এসেছেন। রোজ টিফিন পিরিয়ডে ইশকুল থেকে বাড়িতে চলে আসেন আব্বা। চার-পাঁচটা গরু আছে তার। সেগুলোকে খৈল-ভুশি সহযোগে পানি খাওয়ান। পুকুরে নিয়ে গিয়ে গোসল করান কোনো কোনোদিন। তারপর নিজে গোসল সেরে ঘরে ঢোকেন। ততক্ষণে মা ভাত তরকারি প্রস্তুত করে ফেলেন।

আমাদের খাবার ঘরটা আলাদা। সেখানে মাটিতে মাদুর পেতে আব্বা আর আমাকে ভাত খেতে দেন মা। আমার ছোট বোনটা তখন একেবারেই গ্যাদা মাইয়া। দেড় দুবছর বয়স। পড়ে পড়ে ঘুমায় শুধু। আমাদের সাথে মাদুরে বসে খাওয়ার মতো যথেষ্ট সাবালিকা হয়নি সে। ফলে আমার আর আব্বার দখলে তখন পুরা মাদুর।

মা আমাদের পাতে শিউলি ফুলের মতো ধবধবে সাদা ভাত তুলে দেন। সেখান থেকে গরম ধোঁয়া উঠে আচ্ছন্ন করে ফেলে আমাদের মুখ। এর মাঝেই মা আমাদের পাতে এক টুকরো করে মাছ তুলে দেন। সাথে একটু ঝোল। আমি প্রায়শ ঝোল নিতে অস্বীকৃতি জানাই, মৃদু স্বরে। কেননা পাশে আব্বা আছেন। আব্বার নজর এড়ায় না এসব। খেতে খেতেই গম্ভীর গলায় বলেন, ‘ঝোলঝাল না খেলে আমিষের চাহিদা পূরণ হবে কী করে? শরীরে আমিষের দরকার আছে তো।’

আমি মাথা নিচু করে ঝোল দিয়ে ভাত মাখাই। মাঝে মাঝে মুখে দেই। আর অপেক্ষা করি, কখন শেষ হবে আব্বার খাওয়া। এক সময় আব্বার খাওয়া শেষ হয়। তিনি ‘আলহামদুলিল্লাহ হেললাজি...’ বলতে বলতে মাদুর ছেড়ে উঠে যান। পাশের ঘরে গিয়ে পাজামা পাঞ্জাবি পড়ে দ্রুত বের হয়ে যান। টিফিন পিরিয়ড শেষ হয়ে আসছে। এখনই ঘণ্টা পড়বে ক্লাস শুরু হওয়ার। ক্লাস নিতে হবে তাকে।

আব্বা বের হওয়ার সাথে সাথে খাবারের প্লেট থেকে হাত উঠিয়ে নিই আমি। বরাবর খাবারের প্রতি অনীহা আমার। খাওয়া-দাওয়াকে মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ। হাত ধুয়ে উঠে পড়ি। মা গজর গজর করেন— ‘জমিদারের বাচ্চা আসিছে। মুখত মাছ রোচে না। তিনবেলা গরু খাসি দাও।’

চলে যাই নীল জানালার সামনে। সিংহাসনে উপবিষ্ট হই ফের। কী করা যায় এখন। কী করা যায় এখন। ভাবি। ভাবতে ভাবতে খাতা মেলে ধরি। হাতে তুলে নিই পেন্সিল, রাবার। ধীরে ধীরে সাদা পৃষ্ঠার বুকে ফুটে ওঠে একটা প্রবহমান নদী, নদীর বুকে পাল তোলা নৌকা, নৌকার গন্তব্য কোথায় কোন সুদূরে, কে জানে! অদূরে জেগে উঠেছে চর, সেথায় দেখা যাচ্ছে একটা দুটো বাড়ি, বাড়ির মাথায় একটা তালগাছ, তালগাছ ছুঁয়ে উড়ে যাচ্ছে এক দঙ্গল পাখি, পাখিরা কি নীড়ে ফিরছে? যদি তাই হয় তবে তো একটা ডুবু ডুবু সূর্যও থাকা দরকার। সূর্যটা কোথায় দেব? দিগন্ত ছোঁয়া নদীর জলে নাকি তালগাছের আড়ালে বাড়ির মাথায়?

ভাবতে ভাবতে বেলা ফুরিয়ে আসে। নীল জানালার ওপাশে গোধূলির গোলাপি আলো লুটোপুটি খায়। এর মাঝে আরও একবার আজান হেঁকেছে চান্দের বাপ। আসরের আজান। টের পাইনি। এখন মাগরিব হয় হয়। পুকুর থেকে বাড়ির উঠানে উঠে এসেছে পাতিহাঁসের দল। প্যাক প্যাক শব্দে মুখর করে তুলেছে চারপাশ। মা তাদের খাবার খাইয়ে খোয়ারে তোলার কোশেস করছেন। তার মুখে আবার শুনতে পাই দুপুরের মতো গজর গজর আওয়াজ— ‘সারাদিন ঘরের মদ্যে থাকে। সারাদিন ঘরের মদ্যে থাকে। কি যে করে আল্লাই জানে। মানষের ছোলপোল কী সোন্দর খেলে বেড়ায়। আর হামার একটা ছোল হছে। সারাদিন ঘরের মদ্যে পড়্যা থাকে!’

মনে পড়ে, আব্বা আসার সময় হয়ে গেছে তো! ইশকুল মাস্টার আব্বা ইশকুল ছুটির পরও দুই ব্যাচ প্রাইভেট পড়ান। তারপর বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধে হয়ে যায় তার। আব্বা আসার আগেই নীল জানালার জগৎ ছেড়ে বাইরে আসি আমি। আঙিনায় হাঁটাহাটি করি। মাকে সাহায্য করি তার হাঁস-মুরগি খোয়ারে তোলার কাজে। তারপর মাগরিবের আজান পড়লে হাতমুখ ধুয়ে পড়তে বসি পুনরায়।

সেদিন ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি, মা উদ্ভ্রান্ত। তার চোখেমুখে ঠাসা ঠাসা উদ্বেগ। উঠোনজুড়ে হাঁসেরা প্যাঁক প্যাঁক করছে। খোয়ারে ঢোকার আগে তারা কিছু আহার চায় মনে হয়। বারান্দার দোলনায় হাত-পা ছুঁড়ে কাঁদছে আমার ছোটবোন। তার পেটেও কী ক্ষুধার উৎপাত? কোনদিকটা সামলাবেন মা? আমাকে দেখে বললেন, ‘খইয়া রঙের হাঁসটা ক্যাম্বা আসেনি বাজান। পুরানা পকুরের দিকে যাইয়া দেখ তো, আছে নাকি? বেহুদ্দা জাতের হাঁস হছে একটা! একলা একলা ঘুর্যা  বেড়ায়। বেবাক হাঁস বাড়িত আসলো, ওর আসার নাম নাই! শোক্করবার হাটতই বেঁচমো ওক!’

হাতে একটা লম্বা কঞ্চি নিয়ে পুরানা পুকুরের দিকে হাঁটা দেই আমি। বাড়ি থেকে দেড়শো কদম দূরের এক পুকুর। চারপাশটা বাঁশঝাড়ে ঘেরা। দিনের বেলাতেই অন্ধকার হয়ে থাকে পুকুরটা। এখন সন্ধ্যা হয় হয়। চান্দের বাপের গলা শোনা যাচ্ছে মাইকে— আল্লাহ আকবর... আল্লাহ...। মাগরিবের আজান পড়ল। রাত নামার আগেই আঁধার ঝেপে নেমেছে এই বাঁশঝাড়ের ভিতর। ভয় ভয় লাগে।

পা টিপে টিপে বাঁশঝাড়ের ভেতর ঢুকতেই ডানা ঝাপটিয়ে প্যাঁক প্যাঁক শব্দ করতে করতে একটা হাঁস বেরিয়ে আসে। আবছায়া অন্ধকারে স্পষ্ট দেখছে পাই, খই রঙের হাঁসটা। একটা বাঁশের গোড়ায় চুপচাপ বসে ছিল। ওখানে পড়ে আছে এটা সাদা চকচকে ডিম। ডিমটা হাতে তুলে নিয়ে হাঁস খেদিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসি।

আমার হাতে ডিম দেখে মা গজর গজর করে ওঠেন— ‘হারামজাদি ঘরত ডিম পাড়ে না, বাঁশ থোপৎ যায়্যা ডিম পাড়ে। ওটি ব্যান কুঁচাও লিছে (ওখানে মনে হয় ডিমে তা দিতে শুরু করেছে)! কত্ত বড় বেহুদ্দা হাঁস। ওক আর বাড়িতই থোমো না। এই যে, শোনো, শোক্করবারে হাটত লিয়া যায়্যা হামারজাদিক বেচা দিয়ো তো।’

শেষ বাক্যটা আব্বাকে উদ্দেশ্য করে বলা। আব্বা তখন গোয়ালঘরে গরু ওঠাচ্ছিলেন। সাদা গাইটার পেট ফুলে ঢোল। কয়েক মাস ধরে গর্ভবতী সে। বিয়োনোর সময় হয়ে এসেছে মনে হয়। গোল কুমড়োর মতো পেট নিয়ে নড়তে পারছে না। হেলেদুলে হাঁটছে। আব্বা তাকে সন্তর্পনে গোয়ালে ওঠাচ্ছেন। আমি কলপাড়ে গিয়ে হাতমুখ ধুই। তারপর ঘরে এসে হারিকেন জ্বালিয়ে পড়তে বসি। মা’র হাতের কাজ শেষ ততক্ষণে। হাঁস-মুরগি সব খোয়ারে উঠিয়ে আমার ছোটবোনকে নিয়ে বসেছেন। স্টিলের বাটিতে করে একবাটি গরুর দুধ নিয়ে তারমধ্যে চুষনি ডুবিয়ে রেখেছেন মা। নরম কাপড়ে প্যাচানো চুষনির এক মাথা আমার বোনের মুখে। সে চুকচুক করে দুধ খাচ্ছে।

দুধ খেতে খেতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে সে। মা তাকে চৌকির ওপর শুইয়ে দিয়ে দুই পাশে কোল বালিশের ঠেস দেন। আব্বা তখন মেঝেতে শীতলপাটির ওপর শুয়ে শুয়ে থ্রি ব্যান্ড রেডিওতে বিবিসি বাংলা শুনছিলেন। স্পষ্ট শোনা যায় না, একটু পর পর ঘ্যার ঘ্যার আওয়াজ হয়। লম্বা এ্যান্টেনা টেনে আব্বা আরও লম্বা করার চেষ্টা করেন। রেডিওর গালে-পিঠে থাপ্পর দিয়ে সাউন্ড ক্লিয়ার করার চেষ্টা করেন। মা বিরক্ত হয়ে বলেন, ‘আহ! ভলিমডা কমাও তো! ছোলের ঘুম ভাঙ্যা যাবে!’

এরমাঝেই আমার পড়া চলে। মা একসময় খাবার প্রস্তুত করে ডাকেন— ‘আজ থো, কাল আবার পড়িস, বাজান। এখন ভাত খ্যায়া শোতেক (শুয়ে পড়)।’ আব্বাকে ডাকেন—‘খবর শোনা হয় নি? এই যে, আসো। ভাত-তরকারি ব্যাবাক ঠাণ্ডা হয়্যা গ্যালো!’

মাটিতে মাদুর বিছিয়ে আমরা ভাত খাই। ছোট ছোট জালমাছ (চিংড়ি মাছ) দিয়ে কচু শাকের ঘণ্ট। একটাই তরকারি। আর কিছু নেই। খেতে খেতে মা বলেন, ‘ইশকুলের সব পড়া হছে?’ আমি আস্তে করে বলি, ‘হুম’। মা বলেন, ‘এত অল্প পড়লে হবে? পরীক্ষায় তো লাড্ডু হবু। ভাত খায়্যা আবার পড়বা বসপু, ঠিক আছে?’

ভাত খাওয়ার পর আমার আর পড়তে বসা হয় না। ঘুম পায়। কিছুক্ষণ জোর করে বই নিয়ে বসে থাকার পর হারিকেনের আলো কমিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। মা এসে মশারি টেনে দেন।

গভীর রাত তখন। কতিপয় মানুষের কথাবার্তায় ঘুম ভেঙে যায় আমার। হারিকেনের আলো বাড়িয়ে ঘর থেকে বের হয়ে দেখি, আব্বা-মা কেউ ঘরে নেই। ছোটবোন একাই বিছানার ওপর চিৎ হয়ে ঘুমুচ্ছে। আমি চোখ ডলতে ডলতে উঠোনে এসে দেখি, উঠোনভর্তি মানুষ। বড় চাচা, ছোট চাচা, ফয়েজ ভাই, আফজল ভাই, পিয়ারার বাপ, হাশেমের মা— পাড়ার সব বড় মানুষরা। এর ওর সাথে নানান কথা বলছে। আমাদের গোয়াল ঘরের দরজাটা হাট করে খোলা। সেখানে স্মম্ভিত মুখে দঁড়িয়ে আছেন আব্বা। আব্বার পাশে হারিকেন হাতে দাঁড়িয়ে আছেন মা। তার চোখে মুখেও আতঙ্ক।

আফজল ভাইকে বলতে শোনা গেল, ‘কী আজব ঘটনা রে বা। ইঙ্কা ঘটনা হামার বাপের জীবনেও দেখিনি!’
হাশেমের মা বলল, ‘কিয়ামত আসিচ্চে। এগলা কিয়ামতের লক্ষণ, বুঝলিন।’
আমি গুটি গুটি পায়ে হেঁটে মা’র আঁচল ধরে দাঁড়াই। তারপর গোয়াল ঘরের ভিতর উঁকি দিয়ে দেখি, সাদা গাইটা ক্লান্ত হয়ে শুয়ে আছে পানিতে গোবরে ভেসে যাওয়া মেঝের ওপর। তার পেট আর আগের মতো ফুলে নেই। খালি হয়ে যাওয়া পেটটা একটু পর পর ওঠা নামা করছে। পাগুলো গুটনো। তার পেছনের পায়ের কাছে দলা পাকিয়ে পড়ে আছে একটা বাচ্চা।
না, বাছুর নয়, অবিকল মানুষের মতো দেখতে একটা বাচ্চা!