মারিয়া সালামের চিলতে গল্প ‘ন্যায্য মজুরি’
প্রকাশিত : আগস্ট ২২, ২০২২
বৈঠকঘরের দরজার কাছাকাছি এসে যতটা সম্ভব নিজের শরীর দেয়ালের আড়াল করে দাঁড়ালো রোজিনা। দরজার দিকে সামান্য ঝুঁকে নিচু স্বরে বিড়বিড় করে বলল, খালাম্মা, সামনের মাসের বেতনটা একটু বাড়ায়া দ্যান। যা পারেন বাড়ায়া দ্যান।
এ বাসায় রোজিনা কাজ করছে টানা ছাব্বিশ মাস। কাজ বলতে এই আড়াই হাজার স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাটের সমস্ত বই, দেয়ালে ঝুলানো ছবি, শোপিস আর ফার্নিচার পরিষ্কার করা। মাসে বেতন দুই হাজার আর দুই বেলার খাবার।
রোজিনার কথা শুনেই খালাম্মা খ্যাক করে উঠলেন, বেতন বাড়িয়ে দেন মানে কি? তোর কি এমন কাজ? এক কাজে মাসে এক হাজার টাকা দেওয়া নিয়ম। তোকে দি দুই হাজার আবার খাবার দুই বেলা। এই বাজারে একটা লোকের দুই বেলা খাবার মানে বুঝিস?
খালাম্মা, মায়ের খুব কষ্ট হয়া যায় সংসার চালাতে। ভাইটার স্কুল... এটুকু বলতেই আবার ধমক খেল মেয়েটা।
মুখে মুখে কথা বলবি না। তিনজন মানুষ তোরা। ইনকাম করিস দুইজন। তোদের আবার খরচ কিরে? আমাকে এসব বুঝাস না। প্রথমেই তোকে দুই হাজার টাকা দেওয়া খুব বড় ভুল হয়েছে। কাজ করতে হলে কর, না হলে বিদায় হ। বকাঝকা শেষ করে খালাম্মা হাতের স্মার্টফোনে মন দিলেন।
একটু আগেই ফেসবুকে যে স্ট্যাটাসটা দিয়েছেন, সেটার লাইক গুণতে লাগলেন বিরক্ত হয়ে। মানুষের আজকাল মানবতা কমে গেছে, নিজের মনে বিড়বিড় করছেন খালাম্মা। চা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দিতে মালিকদের কার্পণ্য কেন? এই পোস্টে মানুষ লাইক দেবে না? মাত্র সতেরটা লাইক, অথচ ফালতু কথা লিখলে এতক্ষণে কয়েকশো লাইক পেয়ে যেতাম, রাগে গজগজ করতে করতে খালাম্মা আবার রোজিনার দিকে ঘুরে তাকালেন।
কিরে, ভুলে গেছিস নাকি সবকিছু? এখনও এখানে দাঁড়িয়ে আমার মুখ দেখা বন্ধ করে কাজ কর।
রোজিনা ধমক খেয়ে ঘড়ির দিকে তাকালো, দুপুর একটা। এসময় খালাম্মা কড়া করে এককাপ লাল চা খান। দুপুরের খবারের আগে চিনিছাড়া এককাপ লাল চা খেলে নাকি শরীর ভালো থাকে!
চা দিব খালাম্মা? রোজিনা মিনমিন করে জিজ্ঞাস করল।
চা দিবি মানে? দেখছিস না আমি চা খাচ্ছি না! যতদিন চা শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি পাবে না, আমি চা খাব না। তোকে এসব বলে লাভ কি? তোরা আছিস আরামে। তোরা এসব বুঝবি না।
যা, আমার জন্য দুধচিনি ছাড়া কফি নিয়ে আয়, বলতে বলতে খালাম্মা ফেসবুকে আগের স্ট্যাটাস ডিলিট করে নতুন স্ট্যাটাস লিখলেন, চা শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি না পাওয়া পর্যন্ত চা খাচ্ছি না।