মারিয়া সালামের গল্প ‘স্পাউস’
প্রকাশিত : জুলাই ২০, ২০২২
দরজায় একটা টোকা দিয়ে বাইরে থেকেই অপু বলল, আসতে পারি? বলেই হালকা ফাঁক হয়ে থাকা দরজার ভেতরে মাথাটা গলিয়ে দিল। ভেতরে ছিমছাম পরিবেশ, পরিষ্কার। বড় টেবিলের সামনে দুটো চেয়ার। একটায় একজন তরুণী বসে আছেন। রুমের একপাশে ট্রেন্ডি সোফা আর টেবিলে লেটেস্ট মডেলের ল্যাপটপ খোলা। কোনোভাবেই অপুর মনে হলো না, এটা সরকারি অফিস।
টেবিলের ওপারে যে ভদ্রলোক বসে আছেন, তার গায়ে হালকা নীল, সম্ভবত আসমানি রঙের হাফহাতা শার্ট। ভদ্রলোকের বয়স পঞ্চাশের কোটায় হলেও ব্যাকব্রাশ করা চুল আর সপ্রতিভ চেহারা দেখে তাকেও কোনোভাবেই থানা নির্বাহী কর্মকর্তা বলে মনে হচ্ছে না। অপুর সাথে চোখাচোখি হতেই ভদ্রলোক মুখে হাসি টেনে বললেন, প্লিজ আসুন। চোখের ইশারায় সামনের চেয়ার দেখিয়ে দিয়ে আবার বললেন, জি, কি সেবা করতে পারি?
শুরুটা এরকম হবে সেটা অপু কল্পনাই করতে পারেনি। অপুকে আরো অবাক করে দিয়ে ভদ্রলোক বললেন, চা দিতে বলি? অন্যসময় হলে অপু নিষেধ করতো। কিন্তু নিজের অজান্তেই মাথা নেড়ে বসল।
নিজের চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ভদ্রলোক বললেন, আমরা চা খাচ্ছি আর আপনি এভাবে বসে থাকবেন, তা হয় না।
অপু কী বলবে বুঝে উঠতে না পেরে বলল, ধন্যবাদ। আসলে সরকারি অফিসের নিয়ম-কানুন অনেক পাল্টে গেছে, বেশ ভালো লাগছে।
আমরা পাবলিকের সেবক, আপনাকে এককাপ চা খাইয়ে তেমন বড় কিছু করেছি বলে মনে হচ্ছে না। আসলে আমাদের সবার বদলাতে হবে, চিন্তাভাবনা পাল্টাতে হবে, তবেই দেশ এগিয়ে যাবে। আমি বলছি না একদিনেই সব ঠিক হবে, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা হতে সময় লাগবে, তবে সে চেষ্টা সকলের করে যেতে হবে। একটানা কথা বলে থামলেন ভদ্রলোক।
অপুর পাশের চেয়ারে বসা তরুণী মুগ্ধ হয়ে ভদ্রলোকের কথা শুনছেন আর মাথা নাড়ছেন। বললেন, দারুণ বলেছেন, আসলে আমি নিজেও চেঞ্জের জন্যই এসেছি। মানে আমার স্পাউসের নাম চেঞ্জ হবে আর আমার হাজবেন্ডের আইডিতে স্পাউসের নাম যুক্ত হবে।
অপু একবার তরুণীকে দেখে ভদ্রলোকের দিকে দৃষ্টি ফেরাল।
ও আচ্ছা, দেখি কাগজপত্রগুলো দেখি, ভদ্রলোক এবার ল্যাপটপে মনোযোগ দিলেন। আপনার স্পাউসের নাম কেন চেঞ্জ হবে?
জি, স্পাউস চেঞ্জ হয়েছে বলে।
কাগজপত্র পরীক্ষা করে ল্যাপটপে কিছুক্ষণ টাইপ করে ভদ্রলোক বললেন, ডান। আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র আপডেটেড। এখন, আপনার হাজবেন্ডেরটা দেখছি।
একটু পরে ল্যাপটপ থেকে মুখ তুলে একটু অবাক হয়ে উনি অপুকে জিজ্ঞাস করলেন, উনাকে তো সিংগেল দেখাচ্ছে? তারমানে উনি ফ্রেস?
অপু এতক্ষণ এরকম প্রশ্নের অপেক্ষাতেই ছিল, এরকম প্রশ্ন ওর কাছে এখন নতুন কিছু মনে হয় না। মুখটিপে হেসে অপু বিড়বিড় করে বলল, আই ডাউট।
কি বললেন,সরি, ডিডন্ট গেট ইউ।
না মানে বললাম, নো ডাউট, উনি একদম ফ্রেস, ব্রান্ড নিউ, অপু মুখে হাসি টেনে বলল।
ভদ্রলোক আর কথা না বাড়িয়ে বললেন, আপনার সব কাজ শেষ। এই কাগজটা কেবল যাবার সময় পাশের সার্ভার রুমে জমা দিবেন, আমি বলে দিচ্ছি।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, সরকারি কাজ এত দ্রুত হবে ভাবিনি, অপুর কণ্ঠে কৃতজ্ঞতা।
আরে কি বলেন, এখন আর সেইদিন নাই, সময় পাল্টেছে, আমাদের সবার পাল্টাতে হবে, পেছনে ফিরে দেখার সময় কই বলেন, ভদ্রলোক সমর্থনের আশায় তরুণীটির দিকে তাকালেন।
পাশের ঘরে কাগজটা জমা দিতে দিতে অপুর কানে ভদ্রলোকের কণ্ঠ ভেসে আসল। পাশের তরুণীকে উদ্দেশ্য করেই হয়তো উনি বলছেন, কিভাবে সব পাল্টে যাচ্ছে। কিছুদিন আগেও ডিভোর্স হলে মেয়েরা বাইরেই বের হতো না লজ্জায়। আর উনি দেখলেন কিভাবে বলে বসলেন, স্পাউস চেঞ্জ হয়ে গেছে, অবস্থা বেশ ভয়াবহ।