মারিয়া সালামের গল্প ‘স্ত্রীবুদ্ধি’
প্রকাশিত : আগস্ট ২৫, ২০২১
ইট মারলে পাটকেল খেতেই হবে, লোকটি রাগে দাঁত চিবিয়ে চিবিয়ে স্ত্রীকে বলল।
স্ত্রী বেচারা তখনও বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে স্বামীর দিকে। ঝগড়া বাধলে কমবেশি সবাই লিমিট ছাড়া কথা বলে বা গালাগালও করে। কিন্তু, একজন ম্যাচিউরড লোক কোমরে আঁচল বেঁধে, পায়ে পা বাঁধিয়ে অবলীলায় কিভাবে এরকমভাবে একটানা যা নয় তা বলে যেতে পারে?
মেয়েটি বড় একটা ধাক্কা খেল, কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেল। মন চাচ্ছে প্রতিটা কথার জবাব দিতে। তবে মাথা বলছে, দাঁড়াও। এরসাথে এভাবে পেরে ওঠা যাবে না। এরমতো এমনভাবে একটানা যা-তা কথা বলা তোমার পক্ষে সম্ভব নয়। একে অন্যভাবে শায়েস্তা করতে হবে।
কথা না বাড়িয়ে স্বামীর উদ্দেশে মেয়েটি বলল, বাদ দাও। তোমার মতো এরকম ঠোঁটকাটা হওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি এত নীচে নেমে ঝগড়া করতে পারব না।
স্বামীটি বিজয়ের হাসি দিয়ে বলল, এবার বুঝেছ? যা দেবে তার চারগুন ফিরিয়ে দেব। বাজে কথা শুরু করলে বাজে কথা শুনবে আর ভালোবাসা দিলে সেটার চারগুণ ফেরত পাবে।
স্ত্রীটি বলল, হয়েছে, এবার থামো। তোমার মতো প্রতিহিংসা পরায়ণ লোকের ভালোবাসা নেয়ার ইচ্ছে আমার নেই।
এরপর যে যার মতো নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মেয়েটি রান্নাঘরে গিয়ে ছুড়ি দিয়ে যা-তাভাবে তরকারি কাটা শুরু করল, যেন স্বামীর কল্লা কাটছে। অভিমানে চোখের কোণে অশ্রু এসে গেল। ঠিক তখনই মাথায় কী একটা বুদ্ধি খেলে গেল! কোনোরকমে হাসি চেপে স্বামীর জন্য চা বানাতে শুরু করল।
চায়ের কাপ নিয়ে ঘরে ঢুকেই দেখল, লোকটি খুব আনন্দে মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে গান শুনছে। স্ত্রীকে অপমান করতে পেরে সে ভীষণ খুশি।
স্ত্রী চায়ের কাপ এগিয়ে দিতেই অবাক হয়ে বলল, কী, হঠাৎ এত ভদ্র হয়ে গেলে? না চাইতেই চা? তবে কি বিষ মিশিয়ে আনলে নাকি?
স্ত্রী যতটা সম্ভব মলিন সুরে বলল, শোনো, আমি তোমার মতো না। আমি যথেষ্ট বুদ্ধিমতী মেয়ে, প্রতিহিংসা পরায়ণ নই। যারা দুর্বল তারাই কেবল প্রতিহিংসা করে, মহান ব্যক্তিরা ক্ষমা করে দ্যায়। আর বুদ্ধিমানরা এসব উপেক্ষা করেই চলে। আমি ঠিক করেছি, তোমার এইসব স্বভাব এখন থেকে ইগনোর করেই চলব। কারণ আমি এতটা দুর্বল নই যে, তোমাকে এন্টারটেইন করতে হবে।
উপহাসের হাসি দিয়ে স্বামীটি বলল, সারাদিন পাড়াময় ঝগড়া করে বেড়িয়ে এখন এসব কি বলছ? যত্তসব পাগলের বংশধর!
মেয়েটি এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল, আমরা পাগল নই, তোরা পাগল, কেবল তোদের বাড়ির লোকই নয়, তোদের পুরা এলাকার লোকজনই পাগল।
স্বামীর চোখ রাগে লাল হয়ে এলো। নাকে দুইপাশ ফুলে উঠল। পরক্ষণেই চেহারা স্বাভাবিক হয়ে এলো। উচ্চশব্দে হাহা করে হেসে উঠল লোকটি। বলল, আমি পাগলের কথার জবাব দেই না। এখনও এত দুর্বল হয়ে যাইনি যে, তোমাকে এন্টাইটেইন করতে হবে। আমরা পিরবংশের লোক, অত্যন্ত শান্তিপ্রিয় মানুষ।
তোরা পিরবংশ হলে আমরা তারচেয়েও বড় পিরবংশের লোক, হিসহিস করে উঠল স্ত্রীটি। যোগত্যা বা সম্মান কোনোটাতেই আমাদের ধারেকাছেও তোরা না। বালের আমার পিরবংশ!
স্বামীটি হেসে বলল, আচ্ছা ম্যাডাম, আমরা সবাই বাল আর আপনারা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। চা ভালো ছিল, আরেক কাপ নিয়ে এসো।
মেয়েটি বলল, আমি কি তোর চাকর? নিজে বানিয়ে খা।
লোকটি ধীর পায়ে উঠে গিয়ে আরো দু`কাপ চা বানিয়ে আনল। চায়ে চুমুক দিতে দিতে স্ত্রীকে বলল, চা কেমন বানাই বলো? দারুণ না? তোমরা সাতজন্ম চেষ্টা করলেও এমন চা বানাতে পারবা না।
তোমাদের মতো আমরা চাকর শ্রেণির না যে, খালি চা বানাবো। আমরা খানদানি বংশের মেয়ে। আমাদের আরো অন্যসব কাজ আছে, মেয়েটি বলল।
উত্তরে স্বামীটি বলল, ধুর! এসব উন্মাদ মেয়েমানুষদের কথা কানে নিতে নেই, এদের উপেক্ষা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।