মারিয়া সালামের গল্প ‘রূপা’

প্রকাশিত : নভেম্বর ২৪, ২০১৯

বাইরে ঝুম বৃষ্টি। রূপা ঘরে নীল আলো জ্বেলে চুপচাপ বসে আছে। এই সময়টা তার বাইরে যাওয়া যাবে না, ঘুমের ভাব ধরে বিছানায় পড়ে থাকতে হবে। রাত বারোটা বাজার সাথে সাথেই ওকে উঠিয়ে বাইরের ঘরে নিয়ে গিয়ে কেক কাটা হবে। সেই কেক কেনা হয়েছে সন্ধ্যায়, রূপা জানে।

রাতে খাবার খেতে খেতে রূপার ছোট ভাই বলল, আপা, আমরা খুবই দুঃখিত, তোমার জন্মদিন সেটা মনে নাই, কেক আনা হয়নি। কাল আনলে কি কোনও অসুবিধা আছে?
রূপা চেহারায় দুঃখি একটা ভাব এনে বলল, না কোনও অসুবিধা নাই।

রূপার ঘরে হালকা ভলিউমে বাজছে:

Nothin` lasts forever
And we both know hearts can change
And it`s hard to hold a candle
In the cold November rain...

রূপার হঠাৎ মনে হলো আশপাশে কোথাও নীলকণ্ঠ আছে। তীব্র নিকোটিনের গন্ধে ঘরের বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। প্রতিটা মানুষের আলাদা আলাদা ঘ্রাণ আছে। নীলকণ্ঠের ঘ্রাণ বলতে রূপার কাছে তীব্র নিকোটিনের এই গন্ধটাই।

রূপা বাইরের বারান্দার দরজা খুলে দিতেই ছোট ভাই হুড়মুড়িয়ে ওর নিজের ঘরে দৌড় দিল। আধাখাওয়া সিগারেটটা তখনও বারান্দায় পড়ে আছে। সেটা কুড়িয়ে বাইরে ফেলতে গিয়েই ওর চোখ আটকে গেল সামনে রাস্তায়।

নীলকণ্ঠ বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে। রূপা হাত ঘড়িতে দেখলো, রাত এগারোটা পঞ্চাশ। তারমানে এই পাগল আরো কম হলেও দশ মিনিট এখানেই ভিজবে। রূপার খুব মায়া হচ্ছে, মনে হচ্ছে ডেকে এনে বাসার বেজমেন্টে বসিয়ে রাখা যেতে পারে এই দশ মিনিট বা নিজেই নিচে গিয়ে শক্ত করে বকা দিয়ে আসতে পারে।

রূপার খুব রাগও হচ্ছে, এ বয়সে এরকম পাগলামি কাউকে মানায় না। তবে যাই হোক, এভাবে তাকে ভিজতে দেয়া যাবে না। রূপা দ্রুত নীলকণ্ঠের নম্বরে ডায়াল করে। ওপাশ থেকে ভেসে এলো, হ্যালো রূপা, কেমন আছ?

আমি খুব ভালো আছি। আগে বলো তুমি এখানে দাঁড়িয়ে পাগলের মতো ভিজছ ক্যান?
রূপা, আজ তোমাকে খুব ভালোবাসতে ইচ্ছা করছে, উথাল পাথাল ভালোবাসা।
রূপার খুব রাগ হচ্ছে। রাগে কান্না পাচ্ছে। রাগী রাগী গলায় রূপা বলল, তুমি এক্ষুণি বাসায় যাবে।
নীলকণ্ঠের গলায় জেদ, তুমি ঘরের আলো জ্বেলে দাও, তোমাকে পাঁচ মিনিট দেখেই চলে যাব।
রূপা নিজেকে শান্ত করে বলল, নীল আমার ঘুম পাচ্ছে, তুমি চলে যাও। পরে দেখা হবে।
ঠিক আছে, তুমি ঘুমাও, কোনও সমস্যা নাই। আমি এখানে হাঁটাহাঁটি করছি, নীলকণ্ঠ ঠাণ্ডা গলায় জবাব দিল।
আচ্ছা দাঁড়াও পাঁচ মিনিট।
রূপা শোনও, আজ তুমি নীল শাড়ি পরবে না, একটা রেড ওয়াইন রঙের শাড়ি পরো। আর হ্যাঁ, তোমার জন্য ফুল আনতে চেয়েছিলাম, আনিনি। সেটা তোমার কাছে খুব নাটকীয় ব্যাপার হতো।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে রূপা ঘরের আলো জ্বেলে দিল। আলমারি থেকে একটা রেড ওয়াইন কালার শাড়ি বের করে তাড়াহুড়া করে পরল, চোখে কাজল দিয়ে জানালার পর্দা টেনে দিল।

রাস্তায় শুনশান নীরবতা, দেখল, রাস্তায় কেউ নাই। রূপার খুব কাঁদতে ইচ্ছা করছে, চিৎকার করে কান্না। ইদানীং এরকম কান্না আসে না, আসলে ভালো হতো। রূপা কাঁপা কাঁপা হাতে, ডায়েরি বের করে লিখল: জীবন গিয়েছে চলে আমাদের কুড়ি-কুড়ি বছরের পার— তখন হঠাৎ যদি মেঠে পথে পাই আমি তোমারে আবার!