মানুষ বাঁচানোর রাজনীতি বনাম রাষ্ট্র
অনুষ ঘোষপ্রকাশিত : নভেম্বর ১৪, ২০১৮
দেশ আর দেশের মানুষকে বাঁচিয়ে তোলার কাজকে অপরাধ বলাটা কোনো নতুন কথা নয়, এই বিষয়ের একটি নির্দিষ্ট ইতিহাস আছে। যখন আমাদের দেশ ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের দমনে ছিল তখন ওই সময়ের ঔপনিবেশিক সরকারের নজরে যারা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছিল, তারা ছিল দেশদ্রোহী। ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রকে বিরোধিতা করতে গিয়ে এই তথাকথিত দেশদ্রোহীদের উপর ইংরেজ শাসক ও তাদের দালাল অনেক অত্যাচার করে। ছোট-ছোট ব্যপারে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা থেকে ওদেরকে আজীবন কারাগারে বন্দি করে রাখা অথবা ফাঁসি দিয়ে দেয়া অব্দি, ইংরেজ শাসক দলের এই ধারণা না ছিল যে তারা স্বাধীনতার ইচ্ছাকে খতম করতে পারবে। ক্ষুদিরাম বসু থেকে সূর্য সেন আর ভগৎ সিং এর মতো বিপ্লবীদের কে দেশদ্রোহী বলা হয়ে ছিল। এই ‘দেশদ্রোহী’ ব্যক্তিদের একটাই স্বপ্ন ছিল, ভারতের স্বাধীনতা ও শোষণ থেকে মুক্তি। আজ এই ‘দেশদ্রোহী’ প্রতিটি মানুষের কাছে দেশভক্তির অন্যতম উদাহরণ আর প্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আজ রাষ্ট্র ব্যবস্থা বদলেছে, ইংরেজরা আর রাষ্ট্রকে চালায় না। কিন্তু যেখানে এককালে ইংরেজরা ছিল, সেখানে বর্তমানে তাদের দালাল ওদের স্থান নিয়ে নিয়েছে। না আমরা স্বাধীন, আর না আমরা শোষণ থেকে মুক্ত। তৎকালীন ‘দেশদ্রোহী’দের স্বপ্ন শুধু স্বপ্ন থেকে গেছে আর ইংরেজদের দালাল তাদের মালিকের মতো এই স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে দিতে দেবে না। জগতের সবচেয়ে বিরাট গণতন্ত্রের উপাধির আড়ালে, রাষ্ট্র সুরক্ষার অজুহাদে আর মুনাফা কামানোর ইচ্ছে নিয়ে আজ রাষ্ট্র দেশের উপর শোষণ আর বিভাজনের রাজনীতি চালাছে; গত সত্তর বছর ধরেই এটা হয়ে আসছে। আর যারা আজ এই শোষণ আর অত্যাচারের বিরোধিতা করছে, তাদেরকে ইংরেজের প্রাক্তন দালালরাও দেশদ্রোহী বলে বেরাছে। যেখানে ইংরেজরা Rowlatt Act ব্যবহার করত, সেখানে তাদের বিরাজমান দালালরা UAPA ও IPC এর ১২৪ তম ধারা ব্যবহার করে।
যদি দেশের স্বাধীনতা ও শোষণকে বাতিল করতে চাওয়া অপরাধ কিংবা দেশদ্রোহী হয় তাহলে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদকে বিদেশি কর্পরেটের হাতে বেচে দেয়াটাকে কি বলা উচিৎ? যদি রাষ্ট্রের হাতে নির্যাতনকে বিরোধ করা অপরাধ মনে করা হয় তাহলে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে কি বলা উচিৎ? যদি মার্ক্স, লেনিন আর মাও এর লেখাকে নিজের কাছে রাখা দেশদ্রোহীতার উদাহারণ হয় তাহলে রাম আর হনুমানের নামে মুসলিম ও দলিতদেরকে মেরে ফেলাটাকে কি বলা উচিৎ?
আমি আগেও বলছি, আজকেও বলবো, রাষ্ট্র আর দেশ এক নয়। রাষ্ট্র প্রাক্তন দালাল আর শোষক বর্গের হাতে শুধু একটি ওস্ত্র, দেশের মানুষের উপর অত্যাচার চালানোর জন্য। আর যারা এই সত্যকে বোধ করে, তারাই দেশদ্রোহী হয়ে ওঠে। সব রাজনৈতিক বন্দিদেরকে বিনাশর্তে রেহাই করা হোক। টিপু ও অর্কদীপকে রেহাই করা হোক অবিলম্বে।
উল্লেখ্য, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মাওবাদী সন্দেহে ছাত্র সংগঠন ‘ইউএসডিএফ’ কর্মী মুস্তফা কামাল টিপু ও অর্ক গোস্বামীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ মামলা করার প্রক্রিয়ায় আছে পুলিশ।