মাওলানা জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমির আজ জন্মদিন
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
সুফি সাধক মাওলানা জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমির আজ জন্মদিন। ১২০৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ১৩ শতকের ফার্সি-সুন্নি মুসলিম কবি, আইনজ্ঞ, ইসলামি ব্যক্তিত্ব, ধর্মতাত্ত্বিক, অতীন্দ্রিবাদী এবং সুফি।
তাঁর কবিতা সারাবিশ্বে ব্যাপকভাবে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং বিভিন্ন শ্রেণিতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। রুমিকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি’ এবং ‘বেস্ট সেলিং পয়েট’ বলা হয়। তার সাহিত্যকর্ম বেশিরভাগই ফার্সি ভাষায় রচিত।
এছাড়া তিনি অনেক স্তবক তুর্কি, আরবি এবং গ্রীক ভাষায়ও রচনা করেন। তাঁর লেখা ‘মসনবি’কে ফার্সি ভাষায় লেখা সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ হিসাবে তুলনা করা হয়। ইরান সাম্রাজ্য এবং বিশ্বের ফার্সি ভাষার লোকেরা এখনও তাঁর লেখাগুলো মূল ভাষায় ব্যাপকভাবে পড়ে থাকে।
অনুবাদগুলোও খুবই জনপ্রিয়। বিশেষ করে তুরস্ক, আজারবাইজান, যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ এশিয়ায়। তাঁর কবিতা ফার্সি সাহিত্যকে প্রভাবিত করেছে। শুধু তাই নয়, তুর্কি সাহিত্য, উসমানীয় তুর্কি সাহিত্য, আজারবাইজান সাহিত্য, পাঞ্জাবের কবিতা, হিন্দি সাহিত্য ও উর্দু সাহিত্যকেও অনেক প্রভাবিত করেছে।
রুমি জন্মগ্রহণ করেন স্থানীয় ফার্সি ভাষী মাতাপিতার কাছে, যারা মুলত বালখ্ এর বাসিন্দা। যা বর্তমানে আফগানিস্থান। তিনি হয় ওয়ালখ্স যা বৃহৎ বালখ্ সম্রাজ্যের বালখ্স নদীর কাছে একটি গ্রাম যেটি বর্তমানে তাজাকিস্তান, অথবা তিনি বালখ্ শহরে বর্তমান আফগানিস্থান এ জন্মগ্রহণ করেন।
রুমির শিক্ষার সাধারণ বিষয়বস্তু ছিল অন্যান্য ফার্সি সাহিত্যের মরমী এবং সুফি কবিদের মতো তাওহিদ শিক্ষা। তাঁর সাধনা অর্জনের ইচ্ছা এবং আকাঙ্ক্ষা প্রতীয়মান হয়ে ওঠে তাঁর বই মসনবির নিম্নোক্ত কবিতায়:
আমি পাথর হয়ে মরি আবার গাছ হয়ে জন্মাই
গাছ হয়ে মরি আবার পশু হয়ে জাগি,
পশু হয়ে মরি আবার মানুষ হয়ে জন্মাই
তাহলে ভয় কীসের? কীবা হারাবার আছে মৃত্যুতে?
পরবর্তি পদক্ষপে আমি মানুষের প্রকৃতিতে মারা যাব,
যাতে স্বর্গদূতদের সাথে আমার মাথা এবং ডানা উঁচু করতে পারি,
এবং অবশ্যই স্বর্গদূতদের নদী থেকে লাফ দিব,
সবকিছুই নশ্বর শুধুমাত্র তিনি(সৃষ্টিকর্তা) ছাড়া,
আবারও আমি স্বর্গদূতদের মধ্য থেকে উৎসৃষ্ট হব,
আমি কি হব তা আমার কল্পনার বাইরে,
তারপর আমি অস্তিত্বহীন হব; অস্তিত্বহীন আমকে বলে(সুরের মাধ্যমে) বাঁশির ন্যায়,
প্রকৃতপক্ষে, তাঁর কাছেই আমাদের ফিরে যেতে হবে, যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন।
রুমির কাব্যকে মাঝেমধ্যে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়: চতুষ্পদী শ্লোক এবং গজল। গদ্যগুলোকে ভাগ করা হয় প্রবন্ধ, পত্র, এবং ‘সাতটি ধর্মাপদেশ’ এ।
রুমির প্রধান কাজ হচ্ছে, মাতনাওয়ে মানাউয়ি বা আধ্যাত্মিক দ্বিপদী; مثنوی معنوی)। একটি ছয় খণ্ডের কবিতা। কয়েকজন সুফি এটিকে বিবেচনা করেন ফার্সি ভাষার কুরআন হিসাবে। অনেকে একে তুলনা করেন যে সেরা অতীন্দ্রিয়বাদী কবিতার কাজগুলোর মধ্যে একটি হিসাবে। এতে প্রায় ২৭,০০০ লাইনের ফার্সী কবিতা রয়েছে।
রুমির আরেকটি প্রধান কাজ হচ্ছে, দেওয়ান-এ-কবির (প্রধান কাজ) বা দেওয়ান-এ শামস তাবরিজী (শামস তাবরিজীর কাজ); دیوان شمس تبریزی), যেটি নামকরণ করা হয় রুমির শিক্ষক শামস তাবরিজীর নামে। এতে ৩৫০০০ ফার্সী দ্বিপদী এবং ২০০০ ফার্সী শ্লোক আছে, এতে ৯০টি গজল এবং ১৯টি শ্লোক আছে আরবি ভাষায়, এছাড়া প্রায় চব্বিশটি দ্বিপদী তুর্কি ভাষায় এবং ১৪টি দ্বিপদী গ্রীক ভাষায়।
এটা অনস্বীকার্য যে, রুমি ছিলেন একজন মুসলিম পণ্ডিত এবং ইসলামকে তিনি গম্ভীরভাবে নিয়েছেন। তবু তার আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গির গভীরতা সম্প্রসারিত হয়েছে সীমিত সাম্প্রদায়িক সংস্পর্শে। তার একটি কবিতায়:
অন্বেষণকারীদের পথে জ্ঞানী- মূর্খ সব একই।
তাঁর ভালোবাসায় পরিচিত-অপরিচিত সব একই।
এগিয়ে যাও! ভালোবাসার অমৃত সুধা পান করো।
সে বিশ্বাসে, মুসলিম-পৌত্তলিক সব একই।
রুমির অনেক কবিতায় সুপারিশ করে বাহ্যিক ধর্মীয় রীতি এবং কুরআনের প্রধান স্থানের গুরুত্বকে।
আল্লাহর কোরআনের কাছে যাও, তাতে আশ্রয় নাও
সেখানে নবীর আত্নার সাথে মিশ
বইটি বহন করে নবীর বিভিন্ন অবস্থার কথা
সমুদ্রের ন্যায় তাঁর পবিত্র মহিমা প্রকাশ কর।
১২৭৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর মহান এই দার্শনিক মৃত্যুবরণ করেন।