মদনমোহন তর্কালঙ্কারের ৪ কবিতা
প্রকাশিত : মার্চ ০৯, ২০২১
ঊনবিংশ শতাব্দীয় অন্যতম পণ্ডিত মদনমোহন তর্কালঙ্কারের আজ মৃত্যুদিন। ১৮৫৮ সালের ৯ মার্চ কান্দিতে কলেরা রোগে ভুগে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ছাড়পত্রের পক্ষ থেকে তার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য হিশেবে তার লেখা চারটি কবিতা পুনর্মুদ্রণ করা হলো:
মনে রাখা দায়
মনে করি বারে বারে,
আর না হেরিব তারে,
নিষেধ না মানে আঁখি,
তারি পানে ধায় লো।
মনে মনে করে থাকি,
কথা না কহিব ডাকি,
না দেখিতে আগে কোড়া,
মুখে হাসি পায় লো।।
তবু যদি সহচরী,
মন কে কঠিন করি,
সে জানে দেখিবা মাত্র,
রোমাঞ্চিত কায় লো।
অতএব তারে দেখে,
আপনা বজায় রেখে,
কি রূপে সাধিব মান,
বল না আমায় লো।
পড়ালেখা করে যেই
লেখা পড়া করে যেই।
গাড়ী ঘোড়া চড়ে সেই।
লেখা পড়া যেই জানে।
সব লোক তারে মানে।
কটু ভাষী নাহি হবে।
মিছা কথা নাহি কবে।
পর ধন নাহি লবে।
চিরদিন সুখে রবে।।
পিতামাতা গুরুজনে।
সেবা কর কায় মনে।
পাখি সব করে রব
পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল।
কাননে কুসুমকলি সকলি ফুটিল।
শীতল বাতাস বয় জুড়ায় শরীর।
পাতায়-পাতায় পড়ে নিশির শিশির।
ফুটিল মালতী ফুল সৌরভ ছুটিল।
পরিমল লোভে অলি আসিয়া জুটিল।
গগনে উঠিল রবি সোনার বরণ।
আলোক পাইয়া লোক পুলকিত মন।
রাখাল গরুর পাল লয়ে যায় মাঠে।
শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ পাঠে।
উঠ শিশু মুখ ধোও পর নিজ বেশ।
আপন পাঠেতে মন করহ নিবেশ।
আমার পণ
সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি,
সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি।
আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে,
আমি যেন সেই কাজ করি ভালো মনে।
ভাইবোন সকলেরে যেন ভালোবাসি,
এক সাথে থাকি যেন সবে মিলেমিশি।
ভালো ছেলেদের সাথে মিশে করি খেলা,
পাঠের সময় যেন নাহি করি হেলা।
সুখী যেন নাহি হই আর কারো দুখে,
মিছে কথা কভু যেন নাহি আসে মুখে।
সাবধানে যেন লোভ সামলিয়ে থাকি,
কিছুতে কাহারে যেন নাহি দেই ফাঁকি।
ঝগড়া না করি যেন কভু কারো সনে,
সকালে উঠিয়া এই বলি মনে মনে।