অলঙ্করণ: মারিয়া সালাম

অলঙ্করণ: মারিয়া সালাম

মণীশ ঘটকের কবিতা ‘কুড়ানি’

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২১

সাহিত্যিক মণীশ ঘটকের আজ জন্মদিন। ১৯০২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তার জন্ম। যবনাশ্ব ছদ্মনামে তিনি লিখতেন। ছাড়পত্রের পক্ষ থেকে তার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য হিশেবে ‘কুড়ানি’ কবিতাটি পুনর্মুদ্রণ করা হলো:

এক.
স্ফীত নাসারন্ধ্র. দুটি ঠোঁট ফোলে রোষে,
নয়নে আগুন জ্বলে। তর্জিলা আক্রোশে
অষ্টমবর্ষীয়া গৌরী ঘাড় বাঁকাইয়া,
‘খট্টাইশ, বান্দর, তরে করুম না বিয়া।’

এর চেয়ে মর্মান্তিক গুরুদণ্ডভার
সেদিন অতীত ছিল ধ্যানধারণার।
কুড়ানি তাহার নাম, দু’চোখ ডাগর
এলোকেশ মুঠে ধরি, দিলাম থাপড়।
রহিল উদগত অশ্রু স্থির অচঞ্চল,
পড়িল না এক ফোঁটা। বাজাইয়া মল
যায় চলি; স্বগত; সক্ষোভে কহিলাম,
‘যা গিয়া! একাই খামু জাম, সব্রি-আম।’

গলিতাশ্রু হাস্যমুখী কহে হাত ধরি,
‘তরে বুঝি কই নাই? আমিও বান্দরী!’

দুই.
পঞ্চদশী গৌরী আজ, দিঠিতে তাহার
নেমেছে বিদ্যুৎগর্ভ মেঘের সম্ভার।
অনভ্যস্ত সমুদ্ধত লাবণি প্রকাশে
বিপর্যস্তদেহা তন্বী; অধরোষ্ঠ পাশে
রহস্যে কৌতুকে মেশা হাসির আবির
সুদূর করেছে তারে—করেছে নিবিড়!
সান্নিধ্য, সুদুর্লভ, তবুও সদাই
এ-ছুতা ও-ছুতা করি বিক্ষোভ মেটাই।
গাছের ডালেতে মাখি কাঁঠালের আঠা।
কখনো সখনো ধরি শালিক টিয়াটা।
কুড়ানিকে দিতে গেলে করে প্রত্যাখ্যান
‘আমি কি অহনো আছি কচি পোলাপান।’

অভিমানে ভরে বুক। পারি না কসাতে
সেদিনের মতো চড়, অথবা শাসাতে।

তিন.
ছুটিতে ফিরিলে দেশে কুড়ানি-জননী
আশীর্বাদ বরষিয়া কন—‘শোন মণি,
কুড়ানি উন্নিশে পড়ে, আর রাহি কত?
হইয়া উঠতেয়াছে মাইয়া পাহাড় পর্বত।’
‘সুপাত্র দেহুম’—কহি দিলাম আশ্বাস
চোরাচোখে মিলিল না দরশ আভাস।
ম্লানমুখে, নতশির, ফিরি ভাঙা বুকে,
হঠাৎ শুনিনু হাসি। তীক্ষ্ণ সকৌতুকে
কে কহিছে—‘মা তোমার বুদ্ধি তো জবর!
নিজের বৌয়ের লাইগা কে বিসরায় বর?’

সহসা থামিয়া গেল সৌর আবর্তন,
সহসা সহস্র পক্ষী তুলিল গুঞ্জন!
সহসা দক্ষিণা বায়ু শাখা দুলাইয়া
সব কটি চাঁপাফুল দিল ফুটাইয়া।