ভ্যান গখ ও তার স্টারি নাইট

সাদিয়া রিফাত ইসলাম

প্রকাশিত : জুলাই ২৯, ২০১৯

চিত্রশিল্পের ইতিহাসে অনন্য সাধারণ এক নাম ভিনসেন্ট ভ্যান গখ। তার অসাধারণ এক সৃষ্টি হচ্ছে ‘দ্য স্টারি নাইট’। গখ তার জীবনকালের প্রায় শেষের দিকে এ ছবিটি এঁকেছিলেন। এই ছবিটা আঁকার কিছু দিনের মধ্যেই তিনি আত্মহত্যা করেন। তার জন্ম ১৮৫৭ সালে, হল্যাণ্ডের এক ছোট্ট গ্রামে।

‘দ্য স্টারি নাইট’ ভিনসেন্ট ভ্যান গখের তৈলচিত্র গুলোর মধ্যে অন্যতম। পুরো ছবিটাই তিনি তেল রঙে এঁকেছিলেন। এই ছবিটা তিনি ১৮৮৯ সালের জুন মাসে সম্পূর্ণ করেছিলেন। ১৯৪১ সাল থেকে এই ছবিটি নিউ ইয়র্কের মিউজিয়াম অফ আর্টের স্থায়ী সম্পত্তি হিসেবে আছে।

আমরা যদি ‘দ্য স্টারি নাইট’ ছবিটির ইতিহাসের দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাব, এই ছবিটির ইতিহাস বেশ কৌতূহল উদ্দীপক। সেই সাথে কিছুটা বিষণ্ণও। গখ এই ছবিটি কিন্তু তার বাসায় কিংবা স্টুডিওতে বসে আঁকেননি। তিনি এই ছবিটা এঁকেছিলেন একটি মেন্টাল এসাইলামে থাকার সময়। ভিনসেন্ট ভ্যান গখের মেন্টাল এসাইলামে ভর্তি হবার পেছনের কারণটিও বেশ অদ্ভুত।

১৮৮৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর এক সহকর্মীর সাথে বচসায় লিপ্ত হয়ে ভ্যান গখ রাগের মাথায় নিজেই নিজের বাম কান কেটে ফেলেন। পরে তিনি এই কানের টুকরো একজন যৌনকর্মীকে উপহার দেন। এজন্য এই ঘটনার পরপরই ভ্যান গখ স্বেচ্ছায় সেইন্ট পল ডি মস্যল এসাইলামে ভর্তি হন ১৮৮৯ সালের মে মাসে। একজন জনপ্রিয় চিত্রশিল্পী হবার সুবাদে এই এসাইলামে ভ্যান গখ অন্যান্য রোগীদের থেকে একটু বেশিই সুবিধা পেয়েছিলেন। তাকে শুধু দোতলায় একটি সুন্দর ঘরই দেয়া হয়নি, সেই সাথে তাকে ছবি আঁকার জন্য নিচ তলায় একটা স্টুডিও দেয়া হয়েছিল।

বলা হয়ে থাকে, ভিনসেন্ট ভ্যান গখ মেন্টাল এসাইলামের যে ঘরে থাকতেন সেই ঘরের পশ্চিম জানালার দৃশ্যপট থেকেই তিনি ‘দ্য স্টারি নাইট’ ছবিটি এঁকেছিলেন। মেন্টাল এসাইলামে থাকার সময়ে তিনি তার ভাইয়ের কাছে বেশ কিছু চিঠি লিখেছিলেন। সেসব চিঠিগুলোতে তিনি তার জানালা থেকে দেখা দিন ও রাতের সৌন্দর্য বর্ণনা করেছিলেন। এই বর্ণনার সাথে ‘দ্য স্টারি নাইট’ ছবিটির প্রচুর মিল রয়েছে। ‘দ্য স্টারি নাইট’ ছবিটিতে আমরা মূলত একটি গ্রামের উপর রাতের আকাশ দেখতে পাই, যেখানে এগারোটি তারা অগ্নি গোলকের মতো ঘুরপাক খেতে দেখা যায়। সেই সাথে বাতাসে দুলতে থাকা সাইপ্রাস গাছ, জ্বলজ্বলে একটা চাঁদ, মেঘময় নীলচে আকাশ আর বেশ স্পষ্টভাবেই একটা টাওয়ার দেখতে পাওয়া যায়। এসব কিছুর সাথেই ভিনসেন্ট ভ্যান গখের চিঠিতে বর্ণনা করা বিভিন্ন দৃশ্যপটের বেশ মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

মেন্টাল এসাইলামে ঘরে বসে রঙ তুলি ব্যবহার করার অনুমতি ভ্যান গগের ছিল না। তিনি শুধু মাত্র নিচতলায় তার স্টুডিওতে বসেই রঙ তুলি ব্যবহার করে ছবি আঁকার অনুমতি পেয়েছিলেন। এজন্য রাতের বেশির ভাগ সময় তিনি কাগজের উপর পেন্সিল ব্যবহার করে ছবি আঁকতেন। এরপর দিনের বেলায় স্টুডিওতে গিয়ে ক্যানভাসে রঙ তুলি ব্যবহার করে সেই ভাবনাগুলোকে ফুটিয়ে তুলতেন। বলা হয়ে থাকে, ‘দ্য স্টারি নাইট  আঁকার আগে ভ্যান গখ প্রায় ২১টার মতো রাফ ছবি এঁকেছিলেন। তারপরেও তার মনে হতো, তিনি এই ছবিটাতে তার কল্পনাকে সম্পূর্ণ ফুটিয়ে তুলতে পারেননি। এজন্য তিনি বিশ্ববিখ্যাত এই ছবিটাকে তার একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।

‘দ্য স্টারি নাইট’ ছবিটি শেষ করার কিছু সময়কাল পরেই ভিনসেন্ট ভ্যান গখ আত্মহত্যা করেন। তার ছবি আঁকার সময়কাল খুবই কম ছিল। মাত্র দশ থেকে বারো বছর। কিন্তু এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই তিনি প্রচুর ছবি এঁকেছিলেন। তিনি তার মৃত্যুর সময় তার ভাইয়ের কাছে প্রায় আটশো ক্যানভাসে আঁকা ছবি আর প্রায় সাতশো থেকে আটশো কাগজে আঁকা ড্রয়িং রেখে যান। এসব জনপ্রিয় ছবিগুলোর মধ্যে ‘দ্য স্টারি নাইট’ ছাড়াও আরো আছে ‘সেলফ প্রোট্রেট অফ ভিনসেন্ট ভ্যান গখ’, ‘সানফ্লাওয়ারস’, ‘ক্যাফে টেরেস এট নাইট’, ‘হুইট ফিল্ড উইথ সাইপ্রাসেস’ ইত্যাদি।