ভাঙা সম্পর্কের জাদুঘর
আরেফিন হাসানপ্রকাশিত : জানুয়ারি ২৪, ২০১৮
এক বালক আর এক বালিকা। তাদের খুব ভাব। খুব মনের মিল তাদের মধ্যে। হঠাৎ ইচ্ছে হলো, তারা ছুটে গেল নদীর তীরে। তারপর সারাদিন হাত ধরে পাশাপাশি হাঁটল। সন্ধ্যার পর ফিরে গেল যার যার বাড়িতে। এভাবেই চলছিল তাদের ভাব-ভালোবাসা।
এরপর একদিন বিয়ে হয়ে গেল বালিকার। কেননা বালিকা ততদিনে তরুণী হয়ে গেছে। বালক তখন তরুণ। তার বুকে তখন পাথর। বুকভাঙা দীর্ঘশ্বাস। এ শোকের মধ্যে তার একমাত্র সম্বল ওই বালিকার দেয়া একটি স্মৃতিচিহ্ন। আর সেটি হচ্ছে একটি বই।
ভাঙা সম্পর্কের এরকম নজির আমাদের চারদিকে হরহামেসাই ঘটে চলেছে। কিন্তু ভালোবাসাকে কি এভাবে হারিয়ে যেতে দিতে আছে? তাই তো ভাঙা হৃদয়ের পোশাক, পুতুল, চুড়ি, কড়ি নিয়ে গড়ে উঠেছে পৃথিবীর একমাত্র জাদুঘর। সবাই চেনে মিউজিয়াম অব ব্রোকেন রিলেশনশিপস নামে। এ জাদুঘর শুরুর গল্পটা বেশ মজার।
২০০৩ সালে জাগরেবের ওলিনকা ভিসতিকা আর ড্রাজেন গ্রুবিসিকের চার বছরের প্রেমজীবনের অবসান ঘটে। তারা দুজনই রসিক ছিলেন। মজা করেই বলতেন, এ চার বছরে যা কিছু জমা হয়েছে তার সব দিয়ে একটি জাদুঘর করা যায়। আর তা সত্যি হয় আরো তিন বছর পর।
এ ব্যাপারে গ্রুবিসিকের উৎসাহই ছিল বেশি। ভিসতিকাকে বললে সেও উৎসাহী হয়ে ওঠে। এরপর দুজন মিলে বন্ধুবান্ধব আর পরিচিতদের কাছ থেকে ব্যর্থ ভালোবাসার নিদর্শন সংগ্রহ করা শুরু করেন। ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো সবার সামনে নিয়ে আসেন সেগুলো।
এরপর সেগুলোর গাড়ি যাত্রা শুরু হয়। আর্জেন্টিনা, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, জার্মানি, মেসিডোনিয়া, ফিলিপাইনস, সার্বিয়া, সিঙ্গাপুর, স্লোভেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য আর যুক্তরাষ্ট্র সফর করে আসে এ ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর।
২০০৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে দুই লাখেরও বেশি লোক দেখে এগুলো। জমাও পড়ে অনেক নতুন নতুন জিনিস। ২০০৭ সালে জার্মানির বার্লিনেই পাওয়া যায় ৩০টি স্মারক।
এরপরও জাদুঘরের জন্য স্থায়ী জায়গা মিলছিল না। ক্রোয়েশীয় সরকার ভাবছিল এটা পাগলামি। তাই ২০১০ সালে নিজেরাই ৩০০ বর্গমিটারের একটি জায়গা ভাড়া নেয় জাগরেবে। সেটি ছিল জাগরেবের প্রথম ব্যক্তিমালিকানাধীন জাদুঘর।
খোলাও থাকত সপ্তাহের সাত দিন। প্রথম দিকে বিদেশিরাই বেশি আসত। ২০১১ সালের মে মাসে মিউজিয়ামটি পায় এক সম্মাননা। ইউরোপিয়ান মিউজিয়াম ফোরাম একে কেনেথ কাডসন অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে। পুরস্কারটি দেয়া হয় সেসব জাদুঘর, মানুষ ও প্রকল্পকে যারা স্বতন্ত্র কিছু উপস্থাপন করে।
এর ভার্চুয়াল ওয়েব মিউজিয়ামে ব্যর্থ সম্পর্কের ছবি ও তথ্য আপলোড করতে পারে যে কেউ। এছাড়া কনফেশন তথা নিজের মনের গোপন কথা বলারও সুযোগ রয়েছে এখানে।
উল্লেখ্য, এমন আজব জাদুঘরের সংগ্রহেও আছে আজব সব বস্তু। এমন একটি বস্তু হলো একটি কুড়াল, যার নাম এক্স-এক্স। বার্লিনের একজন মহিলা এটি দিয়েছেন। কুড়ালটি দিয়ে তিনি তার ভণ্ড প্রেমিকের বাড়ির সব আসবাব ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলেছিলেন।