চিত্রকর্ম: মনিরুল ইসলাম

চিত্রকর্ম: মনিরুল ইসলাম

বড়প্রেম

তানিম কবির

প্রকাশিত : আগস্ট ৩০, ২০১৮

তারপর পাবলিক প্লেসে চুমু খাওনের অপরাধে পুলিশে ধইরা আমগোরে থানায় নিয়া আসলো। কর্তব্যরত এসআই (উপ-পরিদর্শক) জিগাইলো, আমগো বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ আমরা অস্বীকার করতে চাই কি না। আমরা মহা উৎসাহে না কইরা দিলাম। না না! আমরা এই অভিযোগ অস্বীকার করতে চাই না। এ অভিযোগ সত্য। এবং নির্মল। রাকা জানাইলো সে এই অভিযোগের নিচেই নাকি পইড়া থাকতে চায়। আমি হা প্রসারিত কইরা ওর দিকে তাকাইলাম। বলো কি! সত্য? ঠিক সিনেমার মতো কইরা এসআই লাঠি দিয়া টেবিলে বাড়ি দিলো। ডরে অস্থির হইয়া গেলাম আমরা। এবং কাঁপতে শুরু করলাম। খামোশ! আমরা আরও ডরাইলাম। আপনাদের সাহস দেখে অবাক হচ্ছি! কী পেয়েছেন আপনারা? হে হে, মাত্রই পাইতে শুরু করছিলাম, সেই টাইমে আপনার লোকেরা ধইরা নিয়া আসলো বিধায় পুরাপুরি কিছুই পাওয়া হইলো না। স্টপ! তথাস্তু। আপনাদের অভিভাবক ডাকতে হবে। মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিতে হবে।

আমি আব্বার ফোন নাম্বার দিলাম এসআইরে। বললাম যে ওনারে ফোন কইরা বলেন। উনিই আমার আব্বা। খেলাটা ঠিক জমলো না ভঙ্গিতে এসআই আমগো দিকে তাকাইলো। এবং আব্বার সাথে আমার খাতির ভালো বুঝতে পাইরা সে রাকার আব্বার ফোন নাম্বার চাইয়া বসলো। রাকা ফোন বাইর কইরা অত্যন্ত তাড়াহুরা কইরা সেটায় হ্যান্ডি ফরম্যাট দিয়া ফেললো। আমি তো পুরাই অবাক হইয়া গেলাম। ওইত্তেরি কি! তুমি হ্যান্ডি ফরম্যাট দেওয়া কই শিখলা? আমি তো পারি না! এবং এসআইরে বললো যে, সে তার আব্বার এবং পরিচিতি, আধা পরিচিত সকলের ফোন নাম্বার এইমাত্র হারাইয়া ফেলছে। সে কেন ফোনটা ফরম্যাট করছে এই ব্যাপারে পুলিশ রাগীকণ্ঠে জানতে চাইলো। বাট সে কিছু না বইলা এসআইর হাতে ফোন তুইলা দিলো। আর ঠিক সে টাইমেই ফোনে কল আসতে শুরু করলো, রাকা খাবলা দিয়া ফোনটা আবার ফেরত নিতে চাইলো কিন্তু তৎপর এসআই সেটা তারে করতে তো দিলোই না, উল্টা ফোন রিসিভ কইরা বললো, হ্যালো!

এবং সঙ্গেসঙ্গেই না জানি কী এক বিস্ফোরণে লণ্ডভণ্ড হইয়া গেলো এসআই এবং ফোন কাইটা এক গেলাস পানি খাইলো। খাড়াইয়া উইঠা প্রাইভেটলি টাইনা আরেক রুমে নিয়া গিয়া ফিসফিস কইরা আমারে জানাইলো যে, এইমাত্র কে নাকি ফোন কইরা রাকারে সমানে চুমু খাইতেছিল! শুইনা তো আমি তাজ্জব হইয়া গেলাম! জিগাইলাম শুধু চুমু খাইলো? কিছু কয় নাই আর? আফসোস কইরা এসআই বললো ওইপাশ থেইকা নাকি খালি চুমুর শব্দই আসতেছিল, আর নাকি খালি বলতেছিল যে, খামন বেব্বি! খামন বেব্বি! এই না শুইনা রাগে ক্ষোভে আমি মেঝেতে বইসা পড়লাম। হাঁটু ভাঁজ কইরা এসআইও বসলো আমার পাশে। এবং কান্ধে হাত দিয়া সান্ত্বনা দিতে লাগলো আমারে। বলতে থাকলো যে সেও আমার মতো প্রতারণার শিকার হইছিল এককালে, ফলে সে আমার মনের অবস্থা বুঝতে পারতেছে। আমি তারে জড়াইয়া ধইরা কানতে শুরু করলাম।

আর কানতে কানতে একসময় তার কোমর থেইকা পিস্তলটা খাবলা মাইরা নিজের আয়ত্তে নিয়া নিলাম। টের পাইয়া এসআই তড়িৎ গতিতে ছিটকাইয়া খানিকটা দূরে গিয়া দুই হাত উপরে তুইলা দাঁড়াইলো। আমি দৌড়াইয়া গিয়া গলায় পিস্তল ধইরা তারে নিয়া আগের রুমে ফেরত আসলাম। আমার হাতে পিস্তল দেইখা রাকা খুশি হইলো। এবং এই দুষ্টু এসআইটারে মাইরা ফেলতে পরামর্শ দিলো। রাকার পরামর্শ মতো আমি এসআইয়ের দিকে পিস্তল তাক করলাম। সে আবারও সিনেমার স্টাইলে চিৎকার দিয়া বলতে থাকলো, করুন গুলি! মেরে ফেলুন আমাকে। আমি আর বাঁচতে চাই না! বইলাই সে হাউমাউ কইরা কানতে শুরু করলো। আমি গিয়া আবার জড়াইয়া ধরলাম তারে। না ভাই, কান্দে না। সব ঠিক হইয়া যাবে। এসআইরে সান্ত্বনা দিয়া সাইরা আমি একলাফে রাকার কাছে আইসা পড়লাম। এবং গলায় পিস্তল তাক কইরা জিগাইলাম যে, কে তারে ফোন কইরা চুমু খায় আর খামন বেব্বি খামন বেব্বি বলতে থাকে!

রাকার দুনিয়া যেন স্তব্ধ হইয়া গেল। যেন তার এঙ্গেল থেইকা ক্যামেরা ঘুরতেছে এখন সিনেমায়! সে যা জানাইলো তা মোটামুটি এরকম, এই ছেলের সাথে বাবা মা ছোটবেলা থেইকাই নাকি তার বিয়া ঠিক কইরা রাখছে। ছেলে হচ্ছে যে আমেরিকায় থাকে। সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার। বিরাট টাকা পয়সার মালিক। সম্প্রতি সে বড় হইয়া গেছে বিধায় এখন দেশে আসছে বিয়া করতে। ফলে সে রাকারে ফোন করে এবং তার সঙ্গে সময় কাটাইতে চাইয়া নানা ধরনের ফন্দি ফিকির করে। এ বিয়ায় তার সমর্থন আছে কি না জানতে চাই আমি। সে জানাইলো তার সমর্থন কিংবা অসমর্থনে এখন নাকি আর কিছুই যায় আসে না। আজকে রাতেই নাকি তাগো বিয়া! হায়হায়, কও কী! রাইতে তোমার বিয়া, আর তুমি আসছো আমার লগে প্রেম করতে? তোমার কি কোনো কমনসেন্স নাই! বললো যে, সে নাকি বিয়ার আগের শেষদিনটা আমার সাথে কাটাইতে চাইছিল। আর সেটা এমনভাবে যে, আমি কিছুই বুঝতে পারবো না। কিন্তু তাতে লাভ কী? জানতে চাইলাম আমি, আর বললাম যে, এতে বরং মায়া আরও বাড়লো ফলে কাইলকা যেটুকু কষ্ট আমার পাওনের কথা আছিল, পামু কি না তারচেয়েও বেশি!

না না! এটা হইতে পারে না রাকা! তুমি বরং বাসায় ফোন কইরা আম্মারে বইলা দাও যে বিয়া তুমি করবা না। বইলাই ট্রিগারে আঙুল রাখলাম আমি। একটা বড়সড় ঢোক গিললো রাকা, টেবিল থেইকা ফোন নিয়া করলো ডায়াল। হ্যালো আম্মা? শোনো আমি আজকে বিয়া করতে পারমু না। আমার একখানে দাওয়াত আছে রাইতে। তুমি আব্বারে আর বাকিগোরে কইয়া দিও। বইলাই ফোন কাইটা দেয় সে। এ টাইমে পুনরায় সিনেমার স্টাইলে হাততালি দিতে দিতে ধীরপায়ে আগায়া আসতে থাকে এসআই। আপনি ভাবছেন ও আপনার সাথে সত্যি বলছে? হাঃ হাঃ আপনি কি বোকা! এখান থেকে ছাড়া পেলেই আপনাকে লাথি মেরে চলে যাবে ও! মোটেই বিশ্বাস করবেন না! (মা ও বোন ছাড়া) নারীজাতিকে বিশ্বাস করতে স্বয়ং আল্লাহপাকের নিষেধ আছে, ভুলে যাবেন না! কী! চোখ রাঙাইয়া আমি রাকার দিকে তাকাই। ও যা বলে সত্যি? মোটেই না মোটেই না! আমি তোমারে ছাইড়া কোত্থাও যাবো না বাবু! এই দেখো আমি তোমার! আমি ভালো কইরা দেখতে থাকি। এবং এসআইয়ের দিকে তাকাইয়া তার মতামত জানতে চাই, কী মনে হয়! আমার?

এসআই বললো, যারই হোক না কেন, তাই বলে পাবলিক প্লেসে ওইভাবে চুমু খেতে পারেন না আপনারা! এটা অন্যায়! শালায় কয় কী! মেজাজটা খারাপ হয় কি না! ঠাঁ ঠাঁ শব্দে দুইটা গুলি কইরা এসআইয়ের মাথার ক্যাপ উড়াইয়া দিই আমি। উইড়া গিয়া সেই ক্যাপ পড়ে টেবিলের ওইপাশে। কুড়াইয়া নিয়া সেটা আবার মাথায় লাগানোর নির্দেশ দিলাম তারে। নির্দেশ পালনে এসআই টেবিলের ওইপাশে গিয়া উবু হইয়া ক্যাপ খুঁজতে থাকলে ফাঁকা গুলি করতে করতে আমরা আবারও চুমু খাইতে শুরু করি। একসময় আমার পিস্তলের সব গুলি শেষ হইয়া যায়, আর টেবিলের ড্রয়ার থেইকা এক্সট্রা পিস্তল বাইর কইরা এসআই আমগোরে পালাইয়া যাইতে বলে। আমরা পালাইয়া যাইতে শুরু করি, আর ওইসময়ে পিছন থেইকা গুলি মাইরা আমগোরে এনকাউন্টার কইরা দেয় সে। এবং আমরা মইরা যাই।

রচনাকাল ২০১৩