স্বাধীন খসরু
বিটিভির অভিনয় অডিশনে ফেল করা শিল্পী আমি
স্বাধীন খসরুপ্রকাশিত : ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪
গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না। ১২ ভোল্ট ব্যাটারি দিয়ে ১৪ ইঞ্চি সাদা-কালো টেলিভিশন দেখতাম। একটা ব্যাটারি দিয়ে দেখতাম, আরেকটা ব্যাটারি চার্জে দেয়া থাকতো স্থানীয় মোটরসাইকেল ওয়ার্কশপে। বাশের ওপর এন্টেনা লাগিয়ে প্রতিদিন চলতো দিক ঘোরানোর কাজ, যাতে সিগনালটা ভালো পাওয়া যায়।
অনুষ্ঠান যাই হোক, হা করে তাকিয়ে থাকতাম। এই হা করে তাকিয়ে থাকায় কত ধূলাবালি যে মুখে ঢুকেছে, তার খেয়াল নেই! দিনের অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগ থেকেই টিভি অন করে বসে থাকতাম। রাতের অনুষ্ঠান শেষে কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরেও কিছুক্ষণ বসে থাকতাম ব্ল্যাক স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে।
১৯৯২ সালে আমি প্রথম বিটিভির ভবনে যাই বিটিভি ভ্রমণে। তখনকার অনুষ্ঠান প্রযোজক বিশিষ্ট নাট্যজন ম. হামিদের সহযোগিতায় অপ্রস্তুত অবস্থায় বিটিভিতে অডিশন দেই ঐদিনই। শুধুমাত্র অডিশন টেকনিক আর অডিশন প্যানেলে যারা ছিলেন বাংলাদেশের রথি-মহারথি, তাদেরকে দেখা।
মনে আছে, অডিশন প্যানেলে ছিলেন মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন, জামাল উদ্দিন হোসেন, মনোজ সেনগুপ্ত, বরকতউল্লাহ, আজিজ মিসির, জিয়া আনসারী ও সালেক খানসহ আরও কয়েকজন। তারপর আমি চলে আসি লন্ডনে। খোঁজ নেয়া হয়নি আমার অডিশনের খবর।
তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমি মোটেই উত্তীর্ণ হইনি। হওয়ার কোনো কারণ ছিল না। যতটা আগ্রহ ছিল ওডিশনের ব্যাপারে, অডিশনে উত্তীর্ণ হয়েছি কিনা এ ব্যাপারে ঠিক ছিল উল্টো। বলা যায়, আমি বিটিভির অভিনয় অডিশনে ফেল করা একজন শিল্পী!
আমি যখন ঢাকায় পূর্ণ সময় বসবাস করছি তখন বিটিভি থেকে কোনো ডাক পেলেই প্রতিবারই খুব আগ্রহ নিয়ে যেতাম। আনন্দমেলাসহ বিটিভির অনেক প্রোগ্রামে অতিথি হয়ে অংশগ্রহণ করেছি। করেছি অনেক নাটক, তা প্যাকেজ ও বিটিভির নিজস্ব প্রোডাকশনস।
এর মধ্যে বিশেষ করে হুমায়ূন আহমেদের তারা তিনজন সিকু্য়ালের প্রথম নাটক ‘তারা তিনজন’ বিটিভিতে প্রচার হয়। এটা ছিল আমার জন্য অনেক আনন্দের। কারণ বিটিভি একসাথে প্রায় ৪-৫ কোটি মানুষ দেখে। গ্রাম বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিচিতিটাও বেড়ে যায় বিটিভির কারণে।
মজার একটা ব্যাপার হলো, বিটিভিতে কোনো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে বা বিটিভির কোনো নাটক করে যে সম্মানি আমি পেয়েছি, তা আমি ক্যাশ করিনি। বিটিভির সম্মানি দেয়া হয় সরকারি কোষাগার থেকে চেকের মাধ্যমে। পরে এই চেক বাংলাদেশ সরকারের রেভিনিউ স্টাম্প লাগিয়ে ব্যাংকে জমা দিতে হয়।
আমি যতবারই বিটিভি থেকে চেক পেয়েছি রেভিনিউ স্ট্যাম্প কিনেছি, কিন্তু চেক ভাঙাইনি, ওভাবেই রেখে দিয়েছি। বিটিভিকে নিয়ে আছে ছেলেবেলার অনেক স্মৃতি তা সংক্ষিপ্ত আকারে বললে শেষ হবে না। বিটিভির প্রতি কৃতজ্ঞতা শৈশব রাঙিয়ে, স্বপ্ন জাগিয়ে রাখার জন্য।
তবে বিটিভি কর্তৃপক্ষের কাছে বিশেষ অনুরোধ, অনুষ্ঠানের মান আরো উন্নত, আরো নিরপেক্ষ, আরো সময় উপযোগী করার জন্য। বাংলাদেশ টেলিভিশন আমাদের অন্যতম লাভজনক জাতীয় প্রচার মাধ্যম।
গত বছর বাংলাদেশ টেলিভিশনের ষাট বছর পূর্ণ হয়েছে। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এসেছে বিটিভি। এই বিটিভির সঙ্গে আমার প্রেমটা আজকাল বেশ মনে পড়ে। বিটিভিকে আমার হৃদয় ও মগজ নিংড়ানো ভালোবাসা। জয় হোক বাংলাদেশ টেলিভিশনের।
লেখক: অভিনেতা