ড. শমশের আলী
বিজ্ঞান ও ধর্মভিত্তিক চিন্তার দিশারী ড. শমশের আলী
প্রাচ্য তাহেরপ্রকাশিত : ডিসেম্বর ০৫, ২০২০
বিজ্ঞানের নানামুখি আবিষ্কার ও কোরআনের মধ্যে যে গভীর যোগসূত্র রয়েছে এ সত্য উপলব্ধি করে সে বিষয়ে গবেষণায় নিজেকে যুক্ত করেন বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম শমশের আলী। সাধারণ মানুষসহ এ দেশের বেশিরভাগ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষিতজনেরা মনে করে, বিজ্ঞান ও ধর্ম সম্পূর্ণ বিপরীতমুখি দুটি চর্চা। তাদের এ ধারণার মূলে কুঠারাঘাত করেন ড. শমশের। তিনি বিজ্ঞান ও কোরআনের পারস্পরিক সম্বন্ধ বিষয়ে বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেন।
১৯৩৭ সালের ২১ নভেম্বর পিতার কর্মস্থল কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারাতে সত্যসন্ধানি এই বিজ্ঞানী জন্মগ্রহণ করেন। পৈত্রিক সূত্রে তিনি যশোর সদর থানার সিঙ্গিয়া গ্রামের (বসুন্দিয়া) বাসিন্দা। পিতা মরহুম আমীর আলী রেলওয়ের চীফ কর্মাশিয়াল অফিসার ছিলেন। মা রহিমা খাতুন ছিলেন গৃহিণী। পিতা-মাতার ১২ সন্তানের মধ্যে ড. শমশের আলী চতুর্থ এবং ভাইদের মধ্যে তৃতীয়।
শমশের আলীর বাল্যজীবন কাটে চুয়াডাঙ্গায়, পশ্চিমবঙ্গের রানাঘাটে ও যশোরে। শিক্ষাজীবন শুরু হয় চুয়াডাঙ্গাতে ইউসুফ মাস্টারের পাঠশালাতে। এখান থেকে মূলত তার গণিতের ভিত্তি তৈরি হয়। ১৯৪৬ সালে চাকরিজীবি পিতা চুয়াডাঙ্গা থেকে বদলি হয়ে সপরিবারে চব্বিশ পরগনার রানাঘাটে চলে যান। সেখানকার বিখ্যাত লালগোপাল স্কুলে তাকে ভর্তি করা হয়। দুই বছর সেখানে লেখাপড়া করার পর ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ১৯৪৮ সালে পিতা সপরিবারে নিজ জেলা যশোরে চলে আসেন।
শহরের ষষ্টিতলা পাড়াতে একটি বাসা ভাড়া করে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। ১৯৪৮ সালে যশোর জিলা স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে শমশের আলীকে ভর্তি করা হয়। ১৯৫৪ সালে এই স্কুল থেকে তিনি কৃতিত্বের সাথে ম্যট্রিক পাশ করেন।
জিলা স্কুলে পড়াকালীন যাদের সাথে সখ্য গড়ে ওঠে শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবক প্রফেসর মো. শরীফ হোসেন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান, সাহিত্যিক ও গীতিকার ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের সঙ্গে। স্কুলজীবনে তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি স্কাউটিংয়ের মতো বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকতেন।
ছাত্র হিসেবে তিনি ছিলেন খুবই মেধাবী। বরাবরই ক্লাসে প্রথম হতেন। পরীক্ষার খাতায় শিক্ষকেরা একেবারেই লাল কালির দাগ দিতে পারতেন না। এই কারণে তিনি ছিলেন স্কুলের শিক্ষকদের কাছে অত্যন্ত স্নেহভাজন। জীবনে কখনও শিক্ষকের হাতে মার খেতে হয়নি। ফিজিক্স নিয়ে লেখাপড়া করলেও গণিত ও ইংরেজিতেও তিনি দক্ষ হয়ে ওঠেন।
স্কুলজীবন শেষ করে ১৯৫৪ সালে রাজশাহী কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালে তিনি এই কলেজ হতে আইএসসি পাশ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্সে ভর্তি হন। ১৯৫৯ সালে তিনি পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে কৃতিত্ত্বের সাথে অনার্স এবং ১৯৬০ সালে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬১ সালে যুক্তরাজ্যের Manchester University তে পিএইচডি করতে যান এবং ১৯৬৫ সালে সেখান থেকে Theoretical Nuclear Physics এ পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফেরেন।
পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. আই এইচ ওসমানী কর্তৃক ১৯৬১ সালে ড. শমশের আলীকে আণবিক শক্তি কমিশনে সান্টিফিক অফিসার পদে নিয়োগদানের মধ্যদিয়ে তার চাকরিজীবন শুরু হয়। মাস্টার্স পরীক্ষার রেজাল্ট তখনও বের হয়নি। পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মতিন চৌধুরীর আগ্রহের কারণে তিনি এই চাকরিতে যোগদান করেন। ১৯৭০ সালে অত্যন্ত অল্প বয়সে আণবিক শক্তি কমিশনের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬১-১৯৮২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২১ বছর ড. আলী আণবিক শক্তি কমিশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল ছিলেন।
১৯৭০ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত তিনি এটমিক এনার্জি সেন্টারের ডাইরেক্টর ছিলেন। তার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড এবং রিসার্স কাজের জন্য ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটা স্পেশাল সাইটেশনের মাধ্যমে ড. আলীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারী প্রফেসর অব ফিজিক্স করে তাকে একটা বিরল সম্মাননা প্রদান করে। ১৯৮২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন।
১৯৯২-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ সাল হতে ২০১০ সাল পর্যন্ত সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ধারণা দেন ড. শমশের আলী। ১৯৭৬ সালে প্রথম তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের এক অনুষ্ঠানে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর একটা বক্তব্য রাখেন। সে সময়ে অনেকে তাকে পাগল বলতে শুরু করলো। এই উন্মুক্ত শব্দটি মানুষকে বোঝাতে সময় লেগেছিল বেশ কয়েক বছর। সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয় যে সম্পূর্ণ ভিন্ন, তা এর গভীরে না গেলে বোঝা যাবে না। অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে শেষ পর্যন্ত ১৯৯২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আমলে এই উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পায় এবং প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ড. শমশের আলী।
পাঁচ বছর তিনি এই পদে নিয়োজিত ছিলেন। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে সফলভাগে গড়ে তোলা ছিল তার জীবনের একটা চ্যালেঞ্জিং বিষয়। ১৯৯৬ সালে ড. শমশের আলী ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে তার মেয়াদ শেষ করে চলে আসেন। ড. শমশের আলী সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলেন। তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকাকালীন সময়ে পাশ্চাত্য দেশের অনুকরণে সেখানে যে পদ্ধতি প্রয়োগ করেছিলেন, সেই সিস্টেম সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রয়োগ করেন। যখন তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের হাল ধরেছিলেন তখন মোট ছাত্রসংখ্যা ছিল ১০৭ জন।
১৯৭০ সালের দিকে তিনি পবিত্র কোরআনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। লক্ষ্য করলেন, কোরআন যা বলে আর আমরা যা করি, তার মধ্যে অনেক অমিল রয়েছে। তিনি মনে করেন, কোরআন এমন একটা অপূর্ব গ্রন্থ যার মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞান চর্চার উৎসাহ, লেখাপড়ার উৎসাহ, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানুষকে ভালো করার উৎসাহ। এই বিষয়গুলো তাকে আকৃষ্ট করায় তিনি ও তার কয়েক সহকর্মী মিলে পাঁচ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিজ্ঞান ও ইসলামের আলোকে গবেষণামূলক একটি বই লেখেন। বইটি ইসলামি ফাউন্ডেশনের সায়েন্টিস্ট ইন্ডিকেশন অন দি হলি কোরান নামের একটি প্রজেক্টের অধীনে ১৯৯০ সালে প্রকাশিত হয়। এটি অনেকটা মরিস বুক বাইবেল এন্ড সায়েন্সের মতো। কিন্তু এটি তার চেয়েও বেশি বিস্তৃত।
ড. আলী সহকর্মীদের নিয়ে আরেকটি বই লেখেন, মুসলিম কন্ট্রিবিউশন টু সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি। এখানকার ছেলেমেয়েরা জানে না মুসলমানদের অগ্রগতি হয়েছিল কেন, তারা ধর্মীয় ইনসপারেশন পেয়ে কিভাবে সায়েন্সের দিকে অগ্রসর হয়েছিল। আটশো বছর ধরে মুসলমানরা স্পেনে জ্ঞানের যে আলো জ্বেলেছিল, সভ্যতার অনেক ক্ষেত্রে সেটা ভিত্তিভূমি তৈরি করেছিল। আর এটার উপর ভিত্তি করেই তিনি বইটি রচনা করেন। এরপর আরও বেশ কয়েকটি বই তিনি রচনা করেন।
২০০৩ সালে তিনি প্রফেসর কায়কোবাদ ও তানবীর আহমেদের সাথে ম্যাথমেটিক্স (ব্রেইন টুয়িস্টার) নামের একটি বই রচনা করেছেন। তার মতে, গণিত প্রকৃতির ভাষা। গণিতের ভিত্তি ভালো না হলে তর্ক করা যায় না। তিনি মনে করেন, ম্যাথমেটিক্স একটা লজিক। বইয়ের মধ্যে এসব বিষয় অত্যন্ত সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন ড. এম. শমশের আলী।
তার আগ্রহের বিষয়ের মধ্যে একটি হচ্ছে বিজ্ঞান, আরেকটি ধর্ম। ধর্ম বলতে তিনি শুধুমাত্র ইসলামকে নয়, সকল ধর্মকে বুঝিয়েছেন। তিনি মনে করেন, বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে একটা দারুণ যোগসূত্র রয়েছে। এর মধ্যে শুধু স্রষ্টাকে উপসনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। মানুষের জন্য, সমাজের জন্য, দেশের জন্য, নিজ ধর্মের মানুষ ও অন্য ধর্মের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানে তিনি যথেষ্ট পরিশ্রম করেছেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জনপ্রিয়করণে তিনি রেডিও ও টেলিভিশনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত প্রায় পাঁচশোর বেশি আর্টিকেল উপস্থাপন করেন।
জনগণের মধ্যে বিজ্ঞান জনপ্রিয় করতে তিনি ইতালির Third World Network of Scientific Organization (TWNSO) কর্তৃক বিশেষ পুরষ্কার লাভ করেন।
এতকিছুর পাশাপাশি তিনি বেশকিছু বিষয় নিয়ে গবেষণা করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে:
১. ফিজিক্সে সায়িন্টিফিক গবেষণা
২. ধর্ম নিয়ে গবেষণা
৩. মানুষের উপর গবেষণা
৪. কবিদের মনন নিয়ে গবেষণা
৫. নজরুল ও রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে গবেষণা
৬. আমাদের দেশের উন্নয়ন নিয়ে গবেষণা
৭. মিডিয়াগুলোকে কিভাবে উন্নয়নের দিকে নিয়ে আসা যায় তা নিয়ে গবেষণা।
মানুষের জীবনের সকল দিকই তার ভাবনার বিষয়। জীবনে শুধু রুটি রুজি রোজগারের জন্য তিনি ফিজিক্স নিয়ে পড়ে থাকেননি, এর বাইরে অনেক বিষয় নিয়ে তিনি গবেষণা করেছেন। তার মতে, সমস্ত বিশ্বকে বুকের মধ্যে স্থান দিতে হবে।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বহু জার্নালে ড. এম. শমশের আলীর অসংখ্য গবেষণামূলক প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে। তিনি সম্মিলিতভাবে নিম্নলিখিত বইগুলি রচনা করেছেন:
১. Scientific Indications in the Holy Quran (পবিত্র কোরআনে বিজ্ঞান সম্পর্কিত নির্দেশনা)। ইসলামিক ফাউন্ডেশন ঢাকা কর্তৃক ১৯৯০, ১৯৯৫ ও ২০০০ সালে প্রকাশিত)
২. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মুসলমানদের অবদান। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা কর্তৃক ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত)
৩. BRAIN TWISTER (Delightful Mathematics) (২০০২ সালে প্রকাশিত। ISBN 984-32-0319-4)
৪. Alladin`s Real Lamp: Science and Technology, 2011 সালে সূচীপত্র কর্ত্তৃক প্রকাশিত।
আনবিক শক্তি কমিশনে কর্মরত অবস্থায় ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষাজীবনের সাফল্য ও গবেষণামূলক কর্মে অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য Honorary Professor of Physics হিসাবে স্বীকৃতি পান। ১৯৭৪ সালে পারমাণবিক পদার্থ বিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে হরিপ্রসন্ন রায় স্বর্ণপদক প্রদান করে।
১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি তাকে গবেষণার স্বীকৃতি হিসাবে একাডেমি স্বর্ণপদক প্রদান করেন। এছাড়া তিনি জগদীশচন্দ্র বসু স্বর্ণপদক, আকরাম খাঁ স্বর্ণপদক, মাদাম তেরেসা স্বর্ণপদক ও ভাসানী স্বর্ণপদক অর্জন করেন। ২০০৫ সালে তিনি খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ স্বর্ণপদক লাভ করেন। ২০০৯ সালে তিনি মালয়েশিয়াতে International University Leadership Colloquies এর পক্ষ থেকে আজীবন সম্মাননা পদক লাভ করেন।
২০০৯ সালে গঠিত International Distance Education Accreditations League (IDEAL) এর অন্যতম পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এই অর্থে তিনি ওয়ার্ল্ড ইনোভেশন ফাউন্ডেশন তার সেরা পুরস্কার হিসেবে ড. শমশের আলীকে অনারারী মেম্বার করেছেন। এর অর্থ একরকম বিশ্বের সায়িন্টফিক বিভিন্ন বডির সাথে যুক্ত হতে পেরেছেন। তৃতীয় বিশ্বের বিজ্ঞানীদের একটা ফোরাম Third world Academy of Science এর Fellow হয়েছিলেন ১৯৮৯ সালে।
টেলিভিশনে পাঁচশোর বেশি অনুষ্ঠানে ড. শমশের আলী অংশগ্রহণ করেছেন। প্রথমে বাংলাদেশ টেলিভিশনে বিজ্ঞান বিচিত্রা পরে নতুন দিগন্তের মধ্যদিয়ে মিডিয়াতে নিয়মিত অনুষ্ঠান করার সুযোগ পান। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি মানুষকে অত্যন্ত সহজ সরল ভাষায় বোঝাতে চেষ্টা করতেন যে, আগামী দিনের যে বিজ্ঞান ও প্রযু্ক্তি তা বিশ্বের চেহারাকে কি করে পাল্টে দেবে। কি করে জীবনযাত্রাকে পরিবর্তন করবে। এই জনপ্রিয় অনুষ্ঠানটি একটানা দীর্ঘ ১২ বছর চলেছিল বিটিভিতে।
পরবর্তীতে ইসলাম ও বিজ্ঞান নামের আরেকটি অনুষ্ঠান করতেন। এখানে তিনি মানুষকে বোঝাতে চেয়েছিলেন, শুধু ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান দিয়ে হবে না। আজকের বিশ্বে বিজ্ঞান ও প্রযু্ক্তি যে একটা শক্তি, দেশ গঠনের জন্য হাতিয়ার, সে সম্পর্কে কোরান ও হাদিসের আলোকে ব্যাখ্যা করতেন। বিটিভি ছাড়াও এটিএন বাংলা, চ্যানেল আইসহ বিভিন্ন স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলে বহু অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে থাকেন।
শমশের আলীর বৈবাহিকজীবন শুরু হয় ১৯৬১ সালে সাকেবা আলীর সাথে। তারা দুই পুত্র সনত্মানের জনক। স্ত্রী সাকেবা আলী Nuclear Physics এর একজন কৃতি ছাত্রী ছিলেন। তিনি Manchester Universit থেকে Nuclear Physics এ Masters করেন। শিক্ষাজীবনে শ্রেষ্ঠ ছাত্রী হিসাবে তিনি Gold Medal পুরষ্কারও পেয়েছেন। বিদেশে শিক্ষাগ্রহণের পর তিনি বাচ্চাদের লেখাপড়ার ব্যাপারে মনোযোগী হন। তিনি মানরাত ইণ্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রিন্সিপাল ছিলেন। তার দুই ছেলে। জীশান আলী ও জেহান আলী।