বাংলা শব্দে রেফের ব্যবহার

আবু তাহের সরফরাজ

প্রকাশিত : এপ্রিল ২৩, ২০২২

বর্ণের মাথায় যুক্ত র চিহ্নকে রেফ বলে। র যখন অন্য কোনো ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে মিলিত হয়ে একসঙ্গে উচ্চারিত হয়, তখন রেফ  চিহ্ন ব্যবহার করতে হয়। যেমন: কর্‌ণ না লিখে কর্ণ লিখতে হয়, বর্‌ণ না লিখে বর্ণ লিখতে হয়, কর্‌ম না লিখে কর্ম লিখতে হয়। এই তিনটি শব্দে র এর নিচে যে দাগ দেখা যাচ্ছে, তাকে হসন্ত বলে। ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারণের সময় প্রতিটি বর্ণের শেষে স্বরবর্ণের অ বর্ণটি উচ্চারিত হয়। কিন্তু কোনো ব্যঞ্জনবর্ণে হসন্ত থাকলে ওই বর্ণে অ উচ্চারিত না হয়ে ওখানেই থেমে যেতে হয়। যেহেতু থেমে যেতে হয়, সেহেতু ওই বর্ণটি পরের বর্ণটির সঙ্গে মিলিত হয়ে উচ্চারিত হয়। র্ব্ণ একটি শব্দ। শব্দ কী? এক বা তারচেয়ে বেশি বর্ণ একসঙ্গে মিলিত হয়ে যখন মনের কোনো ভাব প্রকাশ করে, তাকে শব্দ বলে। যেমন: ম+আ+ন+উ+ষ = মানুষ। র্ব্ণ এমনই একটি শব্দ। র্ব্ণ শব্দটিতে ব বর্ণের পরের বর্ণটির নিচে হসন্ত রয়েছে। এ কারণে র এর উচ্চারণ থেমে যাবে। এরপর পরের বর্ণ ণ এর সঙ্গে মিলিত হয়ে রেফ চিহ্ন হিসেবে ণ বর্ণের মাথায় বসবে। এভাবেই র্ব্ণ শব্দের উচ্চারণ হয়ে গেছে বর্ণ।

বাংলা ভাষায় যেসব শব্দে রেফ রয়েছে
কর্কশ, তর্ক, মূর্খ, ধৈর্য, দুর্বল, বর্ম, আর্ত, মূর্ছিত, ধর্ম, দুর্জন, গর্বিত, গর্হিত, কার্য, চর্চা, আর্য, মর্যাদা, কর্দম, মূর্তি, অর্চনা, ফূর্তি, বার্ষিক, বর্ষা, পরামর্শ, নির্ণয়, দুর্লভ, হর্ষ, কর্তা, নির্দেশ, ধূর্ত, নির্লোভ, দুর্নাম, নির্ঝর, মূর্ছনা, নির্গত, নির্ণীত, মহার্ঘ, পর্ব, অর্ধেক, কর্ম, গর্ব, নির্মাণ, নির্মল, নির্জন, দর্শক, নির্বোধ, দর্শন, নির্ভয়, পর্বত, সার্থক, দুর্গম, নির্ভর, দুর্দিন, কর্পূর, নির্জীব, বর্ণ, অর্পণ, নির্ঘাত, সর্প, কার্পাস, শর্করা, বিসর্গ, দীর্ঘ, দুর্ঘটনা, কর্ণ, বর্ণাঢ্য, অর্থ, সমর্থ, অর্থাৎ, অর্ধ, নির্ধারিত, দুর্নিবার, অর্পিত, খর্ব, দুর্ভাবনা, বিমর্ষ, মূর্ছা।

কর্কশ তর্ক মূর্খের কাজ
ধৈর্য ধরাটাই বিজয়ীর সাজ।
দুর্বল মানুষের নেই কোনো বর্ম
আর্তের চিৎকারে মূর্ছিত ধর্ম।

দুর্জন গর্বিত গর্হিত কার্য
ইতিহাস চর্চায় মন দ্যায় আর্য।
মর্যাদা দিয়ে তারা কর্দম মূর্তি
অর্চনা করে আর করে খুব ফূর্তি।

বার্ষিক বর্ষায় হয় পরামর্শ
নির্ণয় করো দেখি, দুর্লভ হর্ষ।
কর্তার নির্দেশ পেয়ে এক ধূর্ত
নির্লোভ মানুষের দুর্নাম খুঁড়তো।

নির্ঝর ঝরঝর মূর্ছনা ছড়িয়ে
নির্গত হয় দ্যাখো পাহাড়টা গড়িয়ে।
নির্ণীত হয়নি তো মহার্ঘ পর্ব
অর্ধেক কর্মেই হলো তার গর্ব।

নির্মাণ করো এক নির্মল সৌধ
নির্জন হৃদয়ের নদীতে ধৌত।
দর্শক নির্বোধ দর্শন করে না
নির্ভয় পর্বত, এতটুকু নড়ে না।

সার্থক জীবনের দুর্গম পথটা
যেতে তুমি নির্ভর করো মনোরথটা।
দুর্দিন কর্পূর উড়ে যায় বাতাসে
নির্জীব বর্ণের কবিতার খাতা সে।