ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
বাংলার ভদ্রলোক এবং ‘পাঠশালা’ থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাত্রা
পর্ব ১
রাহমান চৌধুরীপ্রকাশিত : অক্টোবর ০৫, ২০২০
বাংলায় উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে সরকারী শিক্ষা ব্যবস্থাকে যে ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছেন তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। বাংলার পাঠশালাগুলি কোনো কাজের নয় এই বিশ্বাস থেকে তিনি যে ধরনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সুপারিশ করেছিলেন তা মূলত মাধ্যমিক শিক্ষার নামান্তর। তিনি স্পষ্টই বলেছেন, ‘কেবলমাত্র লিখন, পঠন ও গণনা বা সরল অঙ্ক কষার মধ্যে বাংলা শিক্ষাকে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না।’ বাংলা শিক্ষা বলতে তখন পাঠশালা শিক্ষাকেই বোঝাতো। মাদ্রাসা মক্তব বা টোলে বাংলা ভাষায় শিক্ষা দেওয়া হতো না। ঈশ্বরচন্দ্র অবশ্য প্রাথমিক শিক্ষায় বাংলা ভাষার বিরোধিতা করেননি। সুখময় সেনগুপ্ত যে তথ্য দিচ্ছিন তাতে দেখা যায় বিদ্যাসাগর বলেছেন, ‘যতদূর সম্ভব বাংলা ভাষাতেই সম্পূর্ণ শিক্ষা দিতে হবে এবং তার জন্য ভূগোল, ইতিহাস, জীবনচরিত, পাটিগণিত, জ্যামিতি, পদার্থবিদ্যা, নীতিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও শরীরবিদ্যা বাংলায় শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন’। জীবনী হিসাবে তিনি কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও, নিউটন, হার্শেল, লিনিয়াস, ডুবাল, উইলিয়াম জোনস, টমাস জেঙ্কিস প্রমুখ বিজ্ঞানীর নাম উল্লেখ করেন। তিনি শুরুতে ভারতবর্ষ, গ্রীস, রোম ও ইংল্যান্ডের ইতিহাস পড়াবার প্রস্তাব দেন। প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ঈশ্বরচন্দ্রের পাঠক্রম ছিল বিশাল ও ব্যাপক। মার্শম্যানের লেখা বাংলার ইতিহাসের ভাবানুবাদ পাঠদানের কথা বলেন তিনি। নিজেই তিনি মার্শম্যানের লেখা সেই বইটির অনুবাদ করেছিলেন।
সাধারণ জনগণের সন্তানদের প্রাথমিক শিক্ষাদানের জন্য ইশ্বরচন্দ্র শর্মা যে বিরাট পাঠক্রম দিয়েছিলেন তার সাথে সনাতন পাঠশালার মিল ছিল না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রদের পক্ষে তা গ্রহণ করা অসম্ভব ছিল। তাঁর পরিকল্পনার মধ্যে উচ্চাকাঙক্ষা ছিল তবে তা বাস্তবসম্মত ছিল না। মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার জন্যই তাঁর পাঠক্রম সঠিক ছিল। তিনি যে-সব বিষয়ের কথা বলেছিলেন তা শিক্ষাদানের যোগ্য শিক্ষকই তখন ছিল না। বাংলা ভাষায় শিক্ষাদানের সুপারিশের পাশাপাশি তিনি সংস্কৃত ঘেঁষা সাধু বাংলাকেই কেবল শিক্ষার উপযোগী মনে করেছিলেন। বাংলা ভাষায় শিক্ষাদানের কথা বললেও তিনি বিদ্যালয়ে বা পাঠশালায় ইংরেজী শিক্ষাদানের ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, বিদ্যাসাগর শিক্ষাখাতে সরকারী বরাদ্দকে শুধুমাত্র উচ্চশ্রেণীর শিক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেন। পাঠশালায় যেখানে একেবারে উপরের স্তরে শিক্ষার্থীদের চিঠিপত্র, দলিল বা চুক্তিপত্র লিখতে শেখানো হতো, শুধু সেখানে কিছুটা সংস্কার সাধন করে সমকালীন প্রয়োজনে ভিন্ন দু-একটা বিষয় যুক্ত করে পাঠশালা শিক্ষায় নতুন গতি সঞ্চার করা যেতো। কিন্তু তা না করে শিশুদের বয়সের তুলনায় অধিক বিষয় ঢুকিয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হলো।
বিনয় ঘোষ দেখাচ্ছেন, হার্ডিঞ্জের মতো গরীবদের শিক্ষার জন্য টাকা খরচের ব্যাপারে ঈশ্বরচন্দ্রও আপত্তি তুলেছিলেন। তিনি মত প্রকাশ করেছিলেন, বাংলায় শিক্ষা বিস্তারের একমাত্র পথ না হলেও, সবচাইতে সেরা পথ হচ্ছে সরকারী প্রচেষ্টাকে উঁচুশ্রেণীর লোকের সামগ্রিক শিক্ষার চৌহদ্দিতে আটকে রাখা। সরকারের দায়িত্ব ও কাজের পরিধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারী চাকরি লাভে যোগ্যতার বিষয়টি চলে আসে। বাংলার বাবুরা ইংরেজী শিক্ষা লাভে আরো মনোনিবেশ করতে থাকেন। ঈশ্বরচন্দ্রের দেয়া শিক্ষা প্রস্তাবনা এসব কারণে নানারকম সুবিধা পেতে থাকে। তিনি আঠারশো চুয়ান্ন সালে হিন্দু কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। হিন্দু কলেজের সঙ্গে যুক্ত যে বাংলা পাঠশালাটি ছিল, সেখানে বেতন ছিল মাসে আট আনা। সত্যিকার অর্থে আটাআনা তখন অনেক বেতন। কিন্তু ইশ্বরচন্দ্র জানতেন নব্য ধনীদের কাছে এ টাকা কোনো টাকাই না, বিশেষ করে যারা ইংরেজী শিক্ষার পক্ষপাতী। ফলে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সময় পাঠশালাটির বেতন বেড়ে দাঁড়ায় বারো আনা। বিদ্যাসাগর অভিভাবকদের মত নিয়ে বাংলা পাঠশালায় ইংরেজী পড়ানো শুরু করেন। হিন্দু কলেজের এই পাঠশালাটিকেই পরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আদর্শ হিসেবে ধরা হয়েছিল। হিন্দু কলেজের পাঠশালায় সবচেয়ে সম্ভ্রান্তদের সন্তানরাই পড়ার সুযোগ পেতো। ইশ্বরচন্দ্র প্রাথমিক স্তরে যে উচ্চমানের শিক্ষাসূচির প্রস্তাব দিয়েছিলেন তা এমনকি পাশ্চাত্যেও প্রচলিত ছিল না। শিশুদের উপর নানারকম পাঠক্রম বা বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দেয়ার কথা বলেছিলেন ভদ্রলোকদের অনেকেই। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর সেই দলেই ছিলেন।
ঈশ্বরচন্দ্র নিজে ছেলেবেলায় সংস্কৃত কলেজ ভর্তি হন। সংস্কৃত কলেজের ছাত্রদের তখন ইংরেজী শিক্ষা লাভেরও সুযোগ ছিল। সে কারণে বিদ্যাসাগর ইংরেজী কমবেশি জানার সুযোগ পেলেন। ইংরেজী জানার সুযোগে এবং নিজ মেধাবলে তিনি নিজের ভাগ্য সুপ্রসন্ন করে তুললেন। তিনি ল কমিটির পরীক্ষায় কৃতকার্য হবার পর সেই কমিটির দেয়া সনদপত্রে তাঁকে ঈশ্বরচন্দ্র নামের সাথে ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি দেওয়া হলো। ঈশ্বরচন্দ্র শুরুতে পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করলেও তিনি কিন্তু পাঠশালা সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্যই করেছিলেন। তিনি দেশীয় পাঠশালাগুলির সংস্কার চেয়েছিলেন এবং সে সম্পর্কে নিজের পরিকল্পনা লিখে ইংরেজ কর্মকর্তাদের দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে বাংলার ছোটো লাট হ্যালিডে বিদ্যাসাগরের পরিকল্পনার উপর নির্ভর করেই পাঠশালা শিক্ষার স্থানে ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়’ চালু করার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে গুরু মহাশয়েরা এদেশের যে পাঠশালাগুলি চালাচ্ছেন সেগুলি কোনো কাজের নয়। যে কাজে তাঁদের যোগত্যা নেই, সেই কাজে তাঁদের নিযুক্ত করাতে পাঠশালাগুলির অবস্থা শোচনীয় হয়েছে। পরিদর্শকদের কাজ হবে এইসব পাঠশালা দেখাশুনা করা এবং শিক্ষণ-রীতি সম্বন্ধে তাঁদের উপদেশাদি দিয়ে যথাসাধ্য সাহায্য করা। আগে যেসব পাঠ্যপুস্তকের কথা উল্লেখ করেছি, ক্রমে সেগুলিকে বিদ্যালয়ের পাঠ্য করাও তাঁদের অন্যতম কর্তব্য হবে।’ তিনি বলেন, বিদেশী মিশনারীদের স্থাপিত ভালো ভালো যেসব বিদ্যালয় আছে সেগুলিকেও সাহায্য করা এবং উৎসাহ দেওয়া প্রয়োজন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নিজে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির প্রধান পরিদর্শক হবার প্রস্তাব রাখেন ছোটলাট হ্যালিডের কাছে এবং সরকারকে দেওয়া শিক্ষা-প্রস্তাবে তিনি বলেন, ‘গ্রন্থ রচনা, পুস্তক ও শিক্ষক নির্বাচনের ভার থাকবে প্রধান পরিদর্শকের হাতে’। তিনি আরো মন্তব্য করেন, শিক্ষকদের শিক্ষাদান, শিক্ষক নির্বাচন, পাঠ্যবই রচনা ও গ্রহণ এবং সাধারণ পরিদর্শনের ভার যদি একজন যোগ্য ব্যক্তির উপর দেওয়া হয় তাহলে অনেক অসুবিধার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। তিনি তাঁর প্রস্তাবে আরো বলেন, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আদর্শে শহরের ও গ্রামে অধিবাসীরা যাতে নিজেদের এলাকায় বিদ্যালয় স্থাপন করতে অনুপ্রাণিত হয়, পরিদর্শকরা সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখবেন। ভারতবর্ষের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বেবী দত্ত, মধুমালা সেনগুপ্ত এবং দেবিকা গুহর লেখা গ্রন্থে বিদ্যাসাগর সম্পর্কে এসকল তথ্য পাওয়া যায়। বিদ্যাসাগর শুধু প্রাথমিক শিক্ষা কী হবে সে ব্যাপারে পরামর্শই দেননি, প্রধান পরিদর্শক হিসেবে নিজে এর সর্বময় কর্তৃত্ব গ্রহণ করতে চান। নিজের পরিকল্পনা মতো একটি শিক্ষা ব্যবস্থা দাঁড় করাবার পরামর্শ শুধু তিনি দেননি, প্রধান পরিদর্শক হিসেবে সকল নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইংরেজ সরকার তাঁকে প্রধান পরিদর্শক না করে দক্ষিণ বাংলার সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক করেছিলেন। প্রধান পরিদর্শক হিসেবে পুরো কর্তৃত্ব করার সুযোগ তিনি পেলেন ন। কিন্তু সে সুযোগ না পেলেও তিনি প্রথম সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক এবং পরে বিশেষ পরিদর্শক হিসাবে নানা ধরনের পাঠ্যবই বিদ্যালয়গুলিতে চাপিয়ে দেন এবং নিজে পুস্তক রচনা করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন।
বাংলার জনশিক্ষা সম্পর্কে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কিছু গুরুত্বপূর্ণ মত ব্যক্ত করেছিলেন তবে বোঝা যায় প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি স্বচ্ছ ছিল না। বাংলার ছোট লাট পীটার গ্রান্টকে আঠারশো উনষাট সালের আগস্ট মাসে লেখা এক পত্রে তিনি এদেশের জনশিক্ষা ও স্ত্রীশিক্ষা সম্পর্কে তাঁর নিজের অভিমত জানান। তিনি স্বীকার করে নেন, জনশিক্ষার উন্নতি ও প্রসারের সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে দেশীয় পাঠশালাগুলির উন্নতি বিধান এবং সেখানে নতুন বা আধুনিক চিন্তাভাবনাকে স্থান দেওয়া। তিনি আধুনিক চিন্তায় সনাতন হিন্দু ধর্মের বেদ বেদান্ত পাঠ বাদ দিতে বলেননি। তিনি বলেন, বঙ্গদেশে প্রাথমিক শিক্ষার উপযুক্ত পুস্তকের অভাব আছে এবং উপযুক্ত পুস্তকের অভাবের জন্যই দেশে জনশিক্ষা বিস্তার লাভ করতে পারছে না। এরজন্য যথোপযুক্ত পুস্তক রচনা প্রয়োজন। বিদ্যাসাগরের মতো দেবেন্দ্রনাথ পুস্তক রচনার ব্যাপারে বিশেষ জোর দেন। দীর্ঘদিন দেখা গেছে বাংলার পাঠশালা শিক্ষায় বইয়ের খুব গুরুত্ব ছিল না। বই ছাড়াই পাঠশালার ছাত্ররা দরকারী দলিলপত্র বা চিঠিপত্র লেখা এবং প্রয়োজনীয় অঙ্ক শিখতে পারতো যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। মিশনারী বিদ্যালয়ের প্রভাবে দেবেন্দ্রনাথের মতো অনেকই মনে করতেন প্রারম্ভিক শিক্ষার জন্য বই রচনা প্রয়োজন। মুদ্রণযন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর বই রচনা নিয়ে সমালোচনার কিছু নেই। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষায় বইয়ের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু বিবেচনা করার আছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কী পরিমাণ বই বা কী ধরনের পাঠ্যক্রম থাকা দরকার। প্রাথমিক শিক্ষাকে দেখতে হবে সাক্ষরতা লাভের প্রতিষ্ঠান হিসেবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, মাধ্যমিক বা উচ্চশিক্ষার জন্য বইয়ের গুরুত্ব অধিক। কিন্তু পাঠশালা শিক্ষার উদাহরণ টেনে বলা যায়, সেখানে খুব বেশি বইয়ের প্রয়োজন ছিল না। সামান্য কয়েকটি বই এবং শিক্ষকের সংখ্যা বাড়িয়ে পাঠশালাকে উন্নত করে সারাদেশে প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তার করা যেতো। কিন্তু দেবেন্দ্রনাথ ঈশ্বরচন্দ্রের মতোই পাঠশালায় ‘মাধ্যমিক সমমানের’ শিক্ষাক্রম চালু করতে চেয়েছিলেন।
বই রচনার প্রতি দেবেন্দ্রনাথ ও অন্যান্যদের উৎসাহকে সমালোচনা না করেও বলা যায়, প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রম তৈরির ব্যাপারে তাঁদের চিন্তা সঠিক ছিল না। প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রম তৈরির ব্যাপারে আরো অনেকের মতো দেবেন্দ্রনাথও ছিলেন অনেক বেশি উচ্চাকাঙক্ষী। তিনি বলছেন, পাঠশালার পাঠক্রমে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রয়োজন: পড়ালেখা ও বানান শেখা, সরল পাটিগণিত এবং ক্ষেত্র পরিমাপ বিদ্যা, পত্রলিখন, কৃষি ও ব্যবসা সম্পর্কিত হিসাব রক্ষা পদ্ধতি, প্রাথমিক কৃষি বিজ্ঞান, সম্পত্তি সম্পর্কিত আইনের প্রাথমিক জ্ঞান, প্রাথমিক ভূগোল, ইতিহাস এবং ব্যবহারিক নীতিজ্ঞান। সুখময় সেনগুপ্ত আমাদের এসব তথ্য দিচ্ছেন। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রাথমিক শিক্ষার জন্য যে-পাঠ্যক্রম দিয়েছিলেন তা উচ্চবর্গের সন্তানদের মস্তিস্কে ধারণ করার জন্য হয়তো কঠিন কিছু নয়, কারণ তাদের হাতে ছিল অফুরন্ত সময়। গৃহশিক্ষক রাখার সামর্থ্যও ছিল তাঁদের। কিন্তু গ্রামের দরিদ্র মানুষের সন্তানদের জন্য তা বাস্তবসম্মত ছিল না। কারণ পড়াশুনার পাশাপাশি তাদের নানা ধরনের সংসারের কাজে ব্যস্ত থাকতে হতো। এসব বিদ্যান বা সমাজ সংস্কারকরা নিজেদের সন্তানদের দিকে তাকিয়ে প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রম নির্বাচন করতেন। প্রাথমিক শিক্ষার সাথে সেটা সঙ্গতিপূর্ণ কিনা, সনাতন গুরুরা তা পড়াতে পারবেন কিনা সেটা তাঁরা বিবেচনায় নেননি। ইশ্বরচন্দ্রও তাই করেছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র নিজে অসম্ভব মেধাবী ছিলেন এবং ছাত্রজীবনে নানা কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। সব শিশুকে তিনি তেমনই ভাবতেন। চলবে