ফাইল ছবি
বঙ্গবন্ধুর নাম বেচে অপকর্ম করছে ছাত্রলীগ
শাহরিয়ার নাসেরপ্রকাশিত : অক্টোবর ১০, ২০১৯
ভার্সিটি পড়ুয়া একটা ছেলে কেন ছাত্রলীগে যোগদান করবে? ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আছে? বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর সংখ্যা খুবই নগণ্য। আমি বঙ্গবন্ধুর একজন আদর্শের সৈনিক হিসেবে হলফ করে বলতে পারি, ৮৫-৯০ ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রলীগকে দেখতে পারে না। এখন সবার মনে প্রশ্ন জাগবে, কেন দেখতে পারে না? দেখতে না পারার কারণ ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক যত অপকর্ম আছে প্রায় সবগুলোর সাথে জড়িত ছাত্রলীগ। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ছিনতাই, মাদকবাণিজ্য, ভর্তিবাণিজ্য, শিক্ষক লাঞ্ছনা, নিয়োগ বাণিজ্য, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর, রামদা, ছুরি, চাপাতি হলে রাখা, গণমাধ্যম কর্মীদের মারধর, ক্যাম্পাস ভাঙচুর, হল ভাঙচুর, হল থেকে মোবাইল, ল্যাপটপ চুরি, জুয়া, ক্যাম্পাস থেকে বিভিন্ন জিনিস চুরি থেকে শুরু করে সব ন্যাক্কারজনক কাজের সাথে জড়িয়ে পড়েছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
আমি এদের ছাত্রলীগ নেতা কর্মী বলবো না। কারণ ছাত্রলীগের নীতি আদর্শ এগুলা না। এরা ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসলীগ, চাঁদাবাজলীগ। প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর অবস্থা এতটা বাজে যে, হলে থাকার মতো কোনও পরিবেশ নেই। হলগুলো ওয়ান কাইন্ড অব বস্তি। হলে সিট দেবে প্রশাসন আর সিটের জন্য দৌড়াতে হয় ছাত্রলীগ নেতার পিছে। এ যেন এক দাসপ্রথা। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ক্যান্টিন নেই। কারণ ক্যান্টিনে খেয়ে টাকা দেয় না, ভয় দেখায়, বলে, আমি ছাত্রলীগ করি। ডাইনিং চলে না। কারণ বাকি খেয়ে টাকা দেয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা কাজে ভাগ না পেলেই ভিসি ঘেরাও, শিক্ষকের সামনে অকথ্য ভাষায় গালাগালি এটা ওটা সব করে নামধারী ছাত্রলীগ। এদের দেখলে শিক্ষার্থীরা ভয় পায়। বিল্ডিং করলেও ভাগ দিতে হয় তাদের। না হলে কাজ বন্ধ করে দেবে। সাধারণ ছাত্ররা ভয়ে এদের কাছে যাওয়ার সাহসও পায় না।
এসব কি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ? বঙ্গবন্ধু এদেশের জন্য এত নিপীড়ন সহ্য করেছেন, জেল খেটেছেন আর আজ ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর মতো একজন মহান নেতার নাম বিক্রি করে অপকর্ম করছে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ছাত্রদের ব্রেইন ওয়াশ করে দিব্যি শিবির বানিয়ে ফেলছে একাত্তরের ঘাতকদের সহযোগী দল ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা।
হলগুলোতে দেখবেন শিবিরের অসংখ্য পোলাপান ছাত্রলীগ হয়ে হলে থাকে। কারণ ভাইলীগ করলে এভরিথিং ওকে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ব্রেইন ওয়াশ করতে পারে না? আর ব্রেইন ওয়াশ করার সুযোগও তো এদের নেই। কেমনে থাকবে? ভালো কয়টা কাজের সাথে এরা আছে? ছাত্রলীগ ব্রেইন ওয়াশ করে হাতে মাদক দিয়ে। আর যে কয়টা ভালো কাজ করে সেগুলোও চাঁদাবাজির টাকা দিয়ে করে। সংগঠনে চেইন অব কমান্ড নাই। কেউ কাউকে কেয়ার করে না। ছাত্রলীগ নেতা হওয়া মানে টাকার বিছানা পাওয়া, বিশাল ক্ষমতা পাওয়া। জুনিয়র কর্মী কিভাবে বেয়াদবি করবে সিনিয়রদের সাথে সেটা শেখায় ছাত্রলীগের অধিকাংশ নেতারা। প্রথম বর্ষের ছেলে মাস্টার্সের ছেলের গায়ে হাত তোলে। এটা কি রাজনীতি? আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের অনেকের অনেক টাকা। এরা ছাত্রলীগকে টাকা ডোনেট করতে পারে না? ছাত্রলীগ কেন ক্যাম্পাসে চাঁদাবাজি করে? কেন বাজেটের টাকায় ভাগ চায়?
ছাত্রলীগ কর্মীদের জোর করে প্রোগ্রামে আনতে হয়। পোলাপান কি মন থেকে প্রোগ্রামে আসে? আজ কেন জোর করে ছাত্রলীগ কর্মী বানাতে হয়? বারবার ফোন দিয়েও প্রোগ্রামে আনা যায়না। শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগে যোগ দেবে নেতাদের আদর্শ দেখে। আদর্শ আছে?
দালাল, দুর্নীতিবাজমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বহু প্রাণের বিনিয়মে আমরা স্বাধীন হয়েছি পাকিস্তানিদের কাছ থেকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বিনীত অনুরোধ থাকবে ছাত্রলীগে শুদ্ধি অভিযান চালানোর জন্য। আর শাখা কমিটিগুলো দেয়ার সময় সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদের বাছাই করে কমিটিতে স্থান দেয়ার জন্য। প্রতি মাসে অন্তত ছয়টি ভালো কাজ করতে হবে সকল শাখা কমিটিকে। কোনও অনিয়ম ও চাঁদাবাজির অভিযোগ পেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিতে হবে। আর সহ্য হচ্ছে না। দালাল, দুর্নীতিবাজ, কুলাঙ্গারমুক্ত বাংলাদেশ চাই। এসব আর দেখতে চাই না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামীলীগ চাই।
শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যম কর্মী
৯.১০.১৯
নীলক্ষেত, ঢাকা।