প্রেমকাহিনি

উপন্যাস ১

বিবি সাজদা ও আশিক আকবর

প্রকাশিত : জানুয়ারি ০৭, ২০২১

আমার স্বামী যেদিন যুগপৎ দুই বেশ্যার সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হলো, আর আমাকে তা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে হলো, তখন মোটেও অবাক হইনি। একজন রানীকে চারটা পাঁচটা বা তারও বেশি সতীনের সাথে কূটকচাল করে প্রাসাদে থাকতে হয়, এটা আমার জানা। আমার নিজ মাতাকেও দেখেছি সারাদিন পোশাক পাল্টানো এবং খাবার খাওয়ার সাথে সাথে নিজ সতীনদের নিয়ে চক্রান্ত করতে।

কিন্তু আমি যেহেতু ফোকাইয়া রাজ্যের প্রথমা রানী, তাই আশা ছিল রাজা দামহুরিয়াত হয়তো কিছুদিন সবুর করবেন দ্বিতীয় বিবাহ বা অন্য যৌনসঙ্গী নির্বাচনে। পাশাপাশি আমার রূপেরও খ্যাতি ছিল। রপটাকে আমি ভেবেছিলাম কিছুদিন দাম্পত্য সম্পর্কটাকে শান্তিতে রাখার ঢাল হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু মাত্র তিন মাসের ব্যবধানেই রাজা দামহুরিয়াত দুজন বেশ্যাকে একসাথে তার বিছানায় নিলেন।

যেহেতু আমরা পথিমধ্যে ছিলাম তাই আরারাত পর্বতের ধার ঘেঁষে তাঁবু ফেলা হয়েছিল, গন্তব্য সিনাই। সিনাইয়ের রাজা আমাদের নিমন্ত্রণ করেছিলেন দামহুরিয়াতের বিবাহ পরবর্তী শুভেচ্ছা জানাতে। আমি দেখলাম, আমার নিরাপত্তায় নিয়োজিত মিসরীয় যুবক শাহ সুলতান দামহুরিয়াতের আদেশে নিজে থেকে ওই বেশ্যা দুটোকে জোগাড় করে রাজার খেদমতে পেশ করলো।

এখানে সুলতানের দোষ দেয়া অনুচিত। সে আদেশের দাসমাত্র। পাশাপাশি তাঁবু হওয়ায় আমাকে রাতভর রাজার আদুরে বিড়ালের মতো গরগর, বেশ্যা দুটোর শীৎকার শুনতে হলো। ঘুম হলো না সে রাতে। প্রভাতে আমি একটি কালো রংয়ের ঘোড়ায় উঠে বসলাম, এলাকাটা একটু ঘুরে দেখার জন্য। আমার দেখাশুনায় নিয়োজিত সুলতান ঘোড়ার শিকল টেনে টেনে এগিয়ে চললো।

অনেক দূর যাবার পর এক জঙ্গলে একটি জলাশয় দেখলাম। প্রচুর গরমে তখন আমরা দুজনই ক্লান্ত। আমি সুলতানকে বললাম গোসল করবো, সে যেন জলাশয়ের পাড়ে দাঁড়ায়। গোসল শেষে তাকে বললাম আমার ভিজে বস্ত্রগুলি পানিতে ভালো করে ধুয়ে দিতে। আমি জলাশয়ের পাড়ে বসে সুলতানকে প্রশ্ন করলাম, আমি ছাড়া অন্য কোনো নারীর বস্ত্র সে ধুয়ে দিত কিনা।

সে সম্মানের সাথে উত্তর দিল, আমি তার মালকীন বলেই সে আমার আদেশ শুনতে বাধ্য। এছাড়াও সে মায়ের পোশাক ধুয়ে দিত। আল্লাহ যদি ভাগ্যে রাখে তবে বিবাহ হবে তার, তখন প্রয়োজনে স্ত্রীর কাপড়ও সে ধুয়ে দেবে। সুলতান ছিল খুব আকর্ষণীয় চেহারার এবং খুবই শক্তিশালী যুবক। ভাগ্যান্বেষণে সে মিশর ছেড়ে তুরস্কে এসেছিল এবং নামকরা তীরন্দাজ হওয়ায় আমার স্বামীর অধীনে চাকরি পায়।

তার সুন্দর শরীর থেকে আমার মনে হলো একমাত্র তাকে দিয়েই সম্ভব আমার অপমানের বদলা নেবার। আমি ওকেই কাজে লাগাবো। আমি সুলতানকে বললাম, আমার খুব ঘুম পাচ্ছে, সে যেন কোনো আশ্রয়স্থল খুঁজে বের করে। অনেক খুঁজে সুলতান পাহাড়ের উপর একটা গাছের নিচে আমার ঘুমানোর জায়গা বের করলো। আমি সারাদিন অলস ভঙ্গিতে শুয়েবসে কাটালাম।

আমার দরকার ছিল সন্ধ্যাবেলা। ঠিক সন্ধ্যা নামার সময়ে আমি সুলতানকে ডেকে নিজের পাশে বসালাম। তারপর তাকে প্ররোচিত করতে থাকলাম, তবুও তাকে বশে আনতে আমার অনেক সময় ব্যয় হলো। আমার কার্যসিদ্ধি হলো। ফেরার পথে মশালের আলোতে সুলতানকে খুব উৎফুল্ল দেখালো। একজন রানী ও নামকরা সুন্দরীর ভালোবাসা পেয়েছে সে, কিন্তু জানে না সামনে তার জন্য কি অপেক্ষা করছে।

আমার স্বামীও জানে না, তাকে আমি কেমন চরম শিক্ষা দিতে চলেছি, এবং আমি নিজেও জানি না এরজন্য আমার কি কঠিন শাস্তি হতে পারে! চলবে