প্রাণের আরাম
বৈশাখী সিংহপ্রকাশিত : নভেম্বর ২৮, ২০১৮
তিনি আমার প্রাণের আরাম, মনের আনন্দ ও আত্মার শান্তি
শান্তিনিকেতনে যারা ঘুরতে গেছেন, ওপরের লাইন তাদের কাছে অতি পরিচিত। যে ছাতিমতলায় বসে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম শান্তিনিকেতন আশ্রম প্রতিষ্ঠার কথা ভেবেছিলেন, তারই দক্ষিণ দিকের গেটে এ লাইনগুলি উৎকীর্ণ করা আছে। এখানেই মহর্ষি খুঁজে পেয়েছিলেন তার মননকে।
আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই এমন কিছু জায়গা থাকে, যেখানে আমরা মহর্ষির মতনই প্রাণের আরাম, মনের আনন্দ ও আত্মার শান্তির আস্বাদ পাই। সুখের খবর, আমার জীবনে এমন স্থান একের বেশি। তেমনি এক জায়গা রাইপুর। না না, মধ্যপ্রদেশ যেতে হবে না। রবি ঠাকুর আর আমাদের গন্তব্য প্রায় একই। বোলপুর থেকে আধ ঘণ্টার দূরত্বে। এক বর্ধিষ্ণু গ্রাম রাইপুর বা চলিত ভাষায় রায়পুর। কাকতালীয় যেটুকু তা হলো, এই রায়পুরের জমিদারের কাছ থেকেই মহর্ষি শান্তিনিকেতনের জমিখানি এক টাকা মূল্যে কিনেছিলেন। ব্যক্তিগত বক্তব্য। যদি ছাতিমতলায় বিশ্রাম নেয়ার আগে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গ্রামে আসতেন, তবে শান্তিনিকেতনের ইতিহাস হয়তো একটু অন্য রকম হতো।
জ্ঞান হওয়া ইস্তক, সুজলা সুফলা বাঙলার বলতে আমার চোখের সামনে যা ভেসে ওঠে তা হলো, রায়পুর। ভাগ্যক্রমে পিতৃদেবের মাতুলালয়। সেই সুবাদে আমার রাঙাদাদুর বাড়ি। অজয় নদীর তীরে এই গ্রাম। পত্তন করেন জিতেরাম চৌধুরী নামে জনৈক ব্যবসায়ী। তারপর অজয় দিয়ে বয়ে গেছে বহু জল। কলেবরের দিক দিয়ে গ্রামের বৃদ্ধি ঘটেছে। কিন্তু তার মূল সুরটি এখনো একই তারে বাঁধা।
রায়পুরের বর্ণনা ঠিক কোথা থেকে শুরু করে কোথায় শেষ করব জানি না। শুধু মনে পড়ে, জীবনের কিছু শ্রেষ্ঠ মুহূর্তের সাথে এই নামটা জড়িয়ে। শীতের দুপুরে কুলের আচার, খড়ের গাদায় গল্পের বই, অজয়ের পাড়ে ঝিনুক খোঁজা, এলোমেলো আলে হাঁটতে হাঁটতে পাশের মাঠে কড়াইশুঁটি ভাগ্য নির্ধারণ, ঝিঁঝি পোকার ডাক ভরা রাত, নিকষ কালো উঠানে বসে তারা গোনা, নতুন করে চিনে নেয়া কালপুরুষ, সপ্তর্ষি মণ্ডল অথবা রঘুনাথজিউর মন্দিরে কীর্তনের একটানা সুরে হারিয়ে যাওয়া।
অমূল্য অভিজ্ঞতা, অসামান্য স্মৃতি। সবকিছু পাওয়া এখানেই। সাথে উপড়ি পাওনা বাড়ির তাজা শাকসব্জি, মাছ আর ঘরে তৈরি ক্ষীর। প্রতি বছর এই অভিজ্ঞতারাই নতুন রূপে ফিরে ফিরে আসে। এক থাকে ভালোবাসাগুলো। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। শুধু আমারই বয়সটা একটু বেড়ে গেছে...