পাপিয়া জেরীনের গল্প ‘আগত’
প্রকাশিত : এপ্রিল ২৬, ২০১৯
এইটা পিউর বড় আব্বার ভাই নাজিমুদ্দিন সাহেবের বাড়ি, প্রায় একশো বছরের পুরানো। এই বাড়িতে সে শেষ কবে আসছিলো তা ঠিক মনে নাই, সম্ভবত বিশ বছর বা আরো বেশী হইতে পারে। সেইদিনটা পিউ ভুলতে পারেনা, একটা অপঘাতে মৃত্যুর দিন। এই বাড়ির পিছনে পাকা বেদীর মাঝখানে ছিলো সেই কদবেল গাছটা। সবাই বলতেছিলো শিখা আপা নাকি কদবেল গাছে উঠছিলো, তারপর সেই গাছ থেকে পড়ে মাথা দুইভাগ। পিউর বয়স তখন ছয় বছর, মায়ের হাত ধরে লাশের গোসল, সুরমা আর কাফন পরানো দেখছিলো সে। তার মনে আছে, সবাই শুধু কদবেল গাছটার দিকে ইশারা করতেছিলো। একজন মহিলা বলতেছিলো --এক রঙ্গা শরীর, আছরের ওয়াক্ত,শয়তানে ধাক্কা দিছে।
এতো বছর হয়ে গেছে, পিউ এখনো ভুলতে পারেনা শিখা আপার মুখ।কপালে একটা কালো তিল, পাতলা ঠোঁট-- এতো সুন্দর! শিখা আপার বয়স তখন পনের বছর, মাথার চুল সম্পূর্ণ ছাঁচা ছিলো। পিউর মাথায় আসেনা, তখন এতো বড় একটা মেয়ের চুল কাটা হইছিলো কেন! এছাড়া যেই কদবেল গাছটা থেকে পড়ে মরার কথা বলা হইতেছিলো, সেইটা খুব বেশী হইলে ছয়সাত হাত লম্বা। এমন একটা গাছ থেকে যদি পড়েও, খুব বেশী হইলে হাত পা ভাঙ্গার কথা। পিউর এখনও মনে আছে, মাথাটা দুইভাগ হয়ে হা করা, রক্ত জমে মনে হইতেছিলো পাকা ডালিম ফেটে আছে।
এ বাড়িতে ঢুকতে একটুও ভালো লাগতেছে না তার। কিন্তু ছোটো বোনের জন্য কয়েকটা ছবি নিতে হবে । আপ্সারা থাকে মেলবোর্নে, ওর নাকি একশো বছরের একটা পুরানো বাড়ির ছবি লাগবে। আর এই বাড়িটা নাকি তার জন্য পার্ফেক্ট। পিউ সাথে করে বুয়াকে নিয়ে আসছে। এর দুইটা কারণ, এক --এই বাড়ির বর্তমান পরিস্থিতি সে জানেনা, তাই একলা যাইতে ভয় আছে। আর দুই-- তিতলী, তিতলী খুবই চঞ্চল। ছবি তুলতে গেলে তিতলী কোন দিকে যে দৌড় দিবে তার কোনো ঠিক নাই।
বাড়ির পুরানা ফটক দিয়া ঢুকতেই তিতলী পাখীর মতো কিচিরমিচির শুরু করলো। তিতলীর বয়স আড়াই বছর, কিন্তু মুখের কথা এখনও স্পষ্ট না। বাড়ির সামনের উঠানে বৃষ্টির পানি জমে আছে, সামনের দিকের রুমগুলিও তালা দেওয়া। বাড়িটার পেছনে যাইতেই সেই বেদীটা চোখে পড়লো। নাহ্ সেই কদবেল গাছটা নাই। ইটের ফাঁকে শ্যাওলা আর নয়নতারার বিশাল ঝোপ। পিউ কী করবে বুঝতে পারতেছেনা, এইদিকটায় ছাদে ওঠার সিড়ি। তিতলী হাত ঝাড়া দিয়ে সিড়ি দিয়ে উঠতে শুরু করলো। বুয়া দৌড়ায়ে যায়, কিন্তু তিতলী ততক্ষণে চারপাঁচ সিড়ি ডিঙ্গায়ে গুনগুন গান গাইতেছে। পিউ তার মেয়ের সাহস দেখে হাসতে থাকে। বাড়িতে কারো অনুমতি না নিয়া এইভাবে ঢোকাটা ঠিক না, তারপরও কী আর করা। অন্ধকার সিড়ির দেয়ালের খোপে খোপে কাঠের জানালা, বিকালের তেছরা রোদ ঢুকতেছে। পিউর আর আগের মতো ভয় বা অস্বস্তি লাগতেছেনা। তিতলীর অস্পষ্ট গলার গান, বুয়ার বকবকানির পাশাপাশি আরেকটা অস্পষ্ট আওয়াজ সে পাইতেছে। তার মনে হইলো অনেকগুলি কন্ঠস্বর একসাথে বলতেছে--আসছে, আসছে... সইরা দাড়াও!
রেহনুমা খুব চিন্তায় পড়ে গেছে। পরু মিয়ার কাছে কেমনে বলবে কথাটা। আজকে তার শ্বশুর বড় রাস্তায় পড়ে গিয়ে কনুই ছিলে ফেলছে। তার শ্বশুর নাজিমুদ্দিনের বয়স আশি বছর, কিন্তু সে তার বয়স বা শরীর নিয়া কোনোভাবেই বিচলিত না।
তারে যতই বলা হোক-- বাবা, আপনার শরীরটা দুর্বল আপনি একা বের হবেন না। সাথে কাউকে নেবেন।
কিন্তু কে শুনে কার কথা! তাছাড়া তার কিছু মতিভ্রমও টের পাওয়া যাইতেছে। সেদিন বলতেছিলো---
বউমা, দেখোতো! কিছু অদ্ভুত পাজামা পরা ছেলে মেয়ের দল আমাদের বাড়ির চারপাশে ঘুরতেছে। ওদের হাতে পানের বাটার মত একটা যন্ত্র, যেটার থেকে জোনাকিপোকার আলোর মত কিছু একটা বের হইতেছে।
আজকাল প্রায়ই নাজিমুদ্দিন চিৎকার দিয়ে ওঠে, এরা কারা! এরা কারা!
রেহনুমা যতবার তার স্বামীর কাছে শ্বশুর সাহেবের এইসব কথা বলতে গেছে, ততবারই পরু মিয়া গম্ভীর হয়ে বলছে...
দেখো রেহনুমা, আমার বাবারে ব্রিটিশরা খান বাহাদুর উপাধি দিয়ে গেছে। তিনি এই পুরাটা তল্লাট ঘোড়শাওয়ারী করছেন একলা। তুমি কী জানো তার বিষয়ে! এই যে আমাদের বাড়ি দেখতেছো, এই যে সিলিং এর কাঠের পিলার-- এইগুলি উনি আনছেন জাহাজে করে বার্মা থেকে। কলকাতা থেকে মিস্ত্রী এনে তিনি এই বাড়িটা করছেন। আর এই যে মেঝেতে মার্বেল পাথর দেখতছো...
রেহনুমা তার স্বামীকে কোনোভাবেই বুঝাইতে পারেনা। পরু মিয়া হলো আরেক অদ্ভুত। এতো খানদানী বংশের ছেলে অথচ, তার চলাচল নীচা শ্রেণীর লোকদের সাথে। গত বছর নাম পরিচয়হীন একটা ছেলেকে বাড়িতে ঢুকাইছে। ছেলেটার নাম জসীম। খায়দায় ঘুমায় আর ছাদে বসে বসে মোটা মোটা সব বই পড়ে। এই ছেলেটার জন্য ছাদেও যাইতে পারেনা রেহনুমা। বাড়িতে একটা অপরিচিত ছেলে যেখানে সেখানে দাড়ায়ে চশমার ফাঁক দিয়ে তাকায় থাকে। এসব উটকো ঝামেলা ভালো লাগেনা রেহনুমার। তারপর ছেলেটারে কোনো উপদেশ অনুরোধ করলেও না শোনার ভঙ্গি করে ঠেশ্ দিয়া দাড়ায় থাকে। আজ সকালে তারে কতোবার বলা হইলো বাবার পেছনে পেছনে যাইতে। সে যদি যাইতো, তাইলে কি বাবা এত বড় ব্যাথাটা পাইতো?
কে? কে বাইরে?
আপা, আমি জসীম। ডেকে পাঠাইছিলেন আমাকে?
ও, শোনো জসীম। নীচে বৈঠকখানা থেকে হুক্কাটা ছাদে নিয়ে যাও। আর শরাফতরে বলো বাবার জন্য ছাদে একটা তোষক বিছায়ে আসন পেতে দিতে। এই মখমলের চাদর ওখানে বিছায়ে দিবা।
জ্বী আপা।কিন্তু, এতো আয়োজন কী জন্যে? মেহমান আসবে বুঝি?
না, আসবেনা। প্রতি সকাল বিকাল বাবা উপরে গিয়া বসবে। তুমি তারে ধরে নিয়া যাবা, ছাদে খেয়াল রাখবা আবার নামায়ে নিয়া আসবা।
আপা, সেইটার আর প্রয়োজন হবেনা। দাদাভাই যথেষ্ট শক্তসামর্থ্য। তিনি দৌড়ায়ে সিঁড়ি ভাঙতে পারবেন।
জসীম, তোমাকে যা বলছি সেইটা কর। আর বুঝলাম না, আমি `আপা` হইলে আমার শ্বশুর তোমার দাদা হয় কেমনে? যাও, নীচে যাও।
জসীম একটুও বুঝতে পারেনা, রেহনুৃমা আপা তার সাথে এমন ব্যবহার করে কেন। অথচ পরু মিয়া তারে কতো ভালোবাসে।বয়সে খুব বেশী হইলে দশ বছরের বড়, তারপরও সে জসীমরে সন্তানের মতো দেখে-- বাবা বাবা বলে ডাকে। সেই হিসাব অনুযায়ী সে প্রথমবার রেহনুমা আপারে ` খালাম্মা` বলে ডাকছিলো। আপা তখনই চেইতা মেইতা একশেষ। এখন পুরা রিস্তায় গন্ডগোল। পরুমিয়ারে বাবা, আর তার বউরে আপা ডাকতে হয়। জসীম অনেক চেষ্টা করে আপার মন জোগাড় করে চলতে, কিন্তু ভালো কোনো ব্যবহার আজ পর্যন্ত সে পায় নাই। অথচ বাড়ির মালিক নাজিমুদ্দিন সাহেব তার সাথে অমায়িক ব্যবহার করেন। এইযে ছাদে উঠার সময়ও তিনি পিঠে হাত দিয়া পড়াশুনার খবর নিলেন, খাওয়াদাওয়া ঠিকমতো হইতেছে কীনা জিজ্ঞাস করলেন।
জসীম! তুমি কি পদার্থবিদ্য নিয়া কোনো পড়াশুনা কর? কিংবা শক্তি নিয়া।
জ্বী দাদাভাই, এ বিষয়ে আগ্রহ আছে।
সময় নিয়া কোনো ধারণা আছে তোমার?
দাদা, সময় নিয়া তো বেশী কিছু জানি না।
শোন জসীম, এই যে বাড়িটা বানাইছি--এই জায়গাটায় ছিলো ঘন বাঁশ বন। এই বাঁশ বনের পাশ দিয়া হেটে যাওয়ার সময় আমি একদিন দেখলাম, এইটা আসলে কোনো বনটন না। এইখানে একটা বিশাল দোতালা বাড়ি। দৃশ্যটা কয়েক মুহূর্তের।
তোমার কাছে মনে হইতে পারে যে, এই জায়গাটা আমি বাড়ি বানানোর জন্য পছন্দ করার পর এমন একটা বাড়ির কথা ভাবছি। আসলে তা না।
তাহলে কী দাদাভাই?
আমি সেদিন একটা পুরানো দোতলা বাড়ি দেখছিলাম।আর সেই আদলেই আমি এই বাড়িটা বানাইছি। আমি অনেক কিছু আগে দেখতাম, দেখার পর ভয় পাইতাম। রাস্তাঘাটও অন্যরকম দেখতাম।
গতকাল আমি ইদ্রাকপুর দুর্গ পর্যন্ত গেলাম, হঠাৎ দেখলাম পূর্বপাশের খালটা নাই। সেইখানে একটা রাস্তা। আজকাল এইসব দৃশ্য দেখলে আমার শরীর কাঁপতে থাকে। রাস্তার লোকজন ভাবতেছিলো আমার মৃগীরোগ।
আপনি কী বলতেছেন দাদাভাই। আমি বুঝতেছিনা।
জসীম, আমার বয়েস হইছে। মনে হয় কথাবার্তা এলোমেলো হয়ে যায়।
আচ্ছা বাদ দেও, তুমি ভূতে বিশ্বাস কর?
না, দাদাভাই। ভূত আসলে কিছুই না। চোখের ধান্দা।
জসীম, আমার কাছে কি মনে হয় জানো? ভূত বলে যেইটা আমরা বুঝি সেইটা আসলে ভবিষ্যৎ থেকে আগত কিছু। তারা সত্য, কিন্তু তাদের সময় ভিন্ন।এই যে আমরা ভাবি, ভূত উইড়া যাওয়ার ক্ষমতা রাখে অথবা তারা নানান রূপ নিতে পারে... তাইনা?
জ্বী জ্বী!
আসলে ভবিষ্যতের মানুষেরা এই সব ক্ষমতা অর্জন করছে।`করছে` বলাতে অবাক হয়ো না। সময়ের কোনো অতীত বা আগামী বইলা কিছু নাই। এই যে ছাদের একখন্ড মোজাইকের মত স্হির হয়ে আছে সময়। আর আমরা এইটাতে ছাপ ফেলি, আমরা বইয়া যাই।
দাদা ভাই, আপনি এমন করে কেমনে ভাবেন? এত সুন্দর গোছায়ে!
কে! কে ঐখানে? জসীম দেখোতো। সিড়ির ভেতর দিয়া কে জানি গুনগুন করতেছে।
কই দাদাভাই? কেউ নাই তো!
চিলাকোঠা পর্যন্ত আসার পর পিউর আর ছাদের দিকে যাইতে ইচ্ছা করতেছেনা। ছাদ থেকে তামাকের কড়া গন্ধ আসতেছে।যেইসব পুরান ভাঙ্গা বাড়িতে কেউ থাকেনা, সেইখানে গুন্ডাপান্ডারা আস্তানা বানায়। তবুও ছাদের দরজা দিয়ে একবার উঁকি মারে পিউ, পুরাটা ছাদ খালি।পিউর হাত ছেড়ে দিয়ে তিতলী আগায়ে যায়, চিৎকার করতে থাকে...দাদা! দাদা! পিউ বলে, মা এইটা `ছাদ`--- দাদা না।বলো বলো.... ছা---আ---দ। ছাদ বলো!
কে শুনে কার কথা, তিতলী দ্বিগুণ উৎসাহে বলতে থাকে দা-----আ---দা।
বুয়া, আপনি তিতলীকে শক্ত করে ধরেন। রেলিং তো অনেক পুরানো। ছাদের মাঝামাঝি থাকেন।
আপনার মাইয়ারে কোলে রাখন সম্ভব না। খালি কুত্তা দেখলে কোলে আইতে পারে, এ্যর আগে না।
হাতটা অন্তত টাইট করে ধরেন।আমার তো ছবি তুলতে হবে, বুয়া!
বুয়া অসহায় চোখে তাকায়ে আছে। তিতলী ও তার অবস্থা অনেকটা দাড়িয়াবান্ধা খেলার মত।
পিউর খুব হাসি পাইতেছে কেন জানি। ছবি তুলতে তুলতে সে খেয়াল করলো, এই ছাদটায় তামাকের গন্ধের পাশাপাশি অন্য একটা সুন্দর ফুলের গন্ধ।
মনে হয় কামিনী ফুলের গাছ আছেপাশে।
নাজিমুদ্দিন সাহেবের কথা মনে পড়তেছে, তিনি হয়তো এই সিড়ি পার হয়ে এসে, এই রেলিং এ কনুই ভর করে দাড়াইতেন। কামিনীর গন্ধে বিভোর হয়ে পায়চারি করতেন। হাঁটতে হাঁটতে কি তিনি এমন করে ভাবছেন কোনোদিন-- যে তারই রক্তের একটা ভাগবিন্দু একদেড়শো বছর পরে এই বাড়িতে এসে তার কথাই চিন্তা করবে! অবাক লাগে পিউর, সব কিছু ধুলা হয়ে যায়। স্মৃতি ধরে রাখার মতোও কিছু নাই।
পিউ খেয়াল করে, তিতলী ছাদের ঠিক মাঝখানে একটা দূরত্ব মেইনটেইন করে গোল গোল ঘুরতেছে। বাচ্চাদের যতো আজব খেয়াল আরকি। বুয়া বেচারী ক্লান্ত হয়ে ধপ করে সামনে বসে পড়ছে, সে বারবার বলতেছে --তিতলী আম্মা! থামেন এইবার। মাতা গুরাইয়া পইড়া যাইবেন কৈল!
জসীম তাকায়ে আছে নাজিমুদ্দিন আহমেদ এর দিকে। হুক্কার পাইপটা ঠোঁটে নিয়া আছেন তিনি, হাত সামান্য কাঁপতেছে তার। তার দৃষ্টি কিছুটা উদভ্রান্ত মনে হইতেছে। ডানে বামে পেছনে সামনে চক্রাকারে তিনি তাকায়া যাইতেছেন।জসীম আজ দুপুরে পরুমিয়াকে ডাক্তারের সাথে এপিলেপ্সি নিয়া কথা বলতে শুনছে।নাজিমুদ্দিন সাবের এই সমস্যা শুরু হইছে কীনা কে জানে!
দাদাভাই কী হইছে? আপনাকে তো খুব অস্থির দেখাইতেছে। রেহনুমা আপাকে ডাকবো?
জসীম, এই বাচ্চাটাকে তুমি দেখতে পাইতেছ? গোলাপী ফ্রক, বুকে ফড়িং আঁকা। এই দেখ আমার চারপাশে কেমন ঘুরতেছে?
দাদাভাই, আমি তো কিছুই দেখতে পাইতেছিনা। কোন বাচ্চা?
এই বাচ্চাটা আমার আত্মীয়। দাদা ডাকতেছে আমারে। কিন্তু বাচ্চাটা একা কেন? ছাদে সে একা ঘুরতেছে কেন?
দাদাভাই, চলেন নীচে যাই। আপনাকে বিছানে শোয়ায় দেই। আপনার সারাটা শরীর ভিজে চুপচুপা হয়ে আছে।আসেন আমার কাধে হাত রাখেন।
জসীম বসো, বসে দেখো। মাঝে মাঝে সময়মাত্রা ভেদ করে এরা আসে... দেখা দেয়।
দাদাভাই কিছুই বুঝতেছিনা আমি।
ভবিষ্যত থেকে আগত। তারা আসে এবং পরিবর্তন ঘটায়। আহা শিশুবাচ্চাটা আমারে জড়ায়ে ধরতেছে জসীম! ছোট ছোট হাত... তার মুখে এলাচীর সুবাস। জসীম সবচেয়ে অবাক বিষয়, আমি যেমন তারে দেখতে পাইতেছি--- সেও আমারে দেখতে পাইতেছে।
দাদাভাই কী হইছে আপনার!
জসীম চিৎকার করে রেহনুমাররে ডাকতেছে। জসীম ভয় নিয়া নাজিমুদ্দিন আহমেদের দিকে তাকায়ে আছে, সে জ্ঞানহারা অথচ মুখে প্রশান্তির হাসি।
পিউর ছবিতোলা সেশন মোটামুটি শেষ। এখন শুধু নীচে নেমে ফ্রন্ট থেকে কয়েকটা ছবি নেবে। তিতলী খুব কান্তেছে। আবার ছাদে ওঠার জন্য বলতেছে-- দাদা! দাদা! পুরানো গেইট দিয়ে বের হওয়ার সময়ও ছাদের দিকে হাত তুলে দিয়ে বলতেছে, দাদা!
পিউ তার মাথায় হাত বুলায়ে বলে, আম্মুরে ঐটা `দাদা` না `ছাদ`-- ছা-আদ্, বলো।
তিতলী চিৎকার দিয়ে বলে...দা--আ--দা----
পিউর মনটাই খারাপ হয়ে যায়। দুই বছরের বাচ্চারা চটাং চটাং কথা বলে, অথচ তিতলীর আড়াই বছর।কবে যে ও স্পষ্ট করে সব বলতে শিখবে!