পাঠ্যপুস্তক রচয়িতা প্যারীচরণ সরকারের আজ জন্মদিন
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
শিক্ষাবিদ, সমাজসংস্কারক ও ঊনিশ শতকের বাঙলার পাঠ্যপুস্তক রচয়িতা প্যারীচরণ সরকারের আজ মৃত্যুদিন। ১৮২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি তার জন্ম। মারা যান ১৮৭৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর।
প্যারীচরণ সরকার ডেভিড হেয়ারের পটলডাঙ্গার পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। ১৮৩৮ সালে হেয়ার সাহেবের স্কুল থেকে জুনিয়র স্কলারশিপ পরীক্ষায় মাসিক আট টাকা বৃত্তি লাভ করেন। এরপর হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। সেখানে সিনিয়র স্কলারশিপ পরীক্ষায় মাসিক চল্লিশ টাকা বৃত্তি লাভ করেন। ১৮৪৩ সালে তিনি হিন্দু কলেজের শিক্ষা শেষ করেন।
হিন্দু কলেজের শিক্ষা শেষ করে কিছুকাল হুগলী ব্যাংকে চাকরি করার পর হুগলী স্কুলে শিক্ষকতার কাজে যোগ দেন। কালীকৃষ্ণ মিত্র, নবীনকৃষ্ণ মিত্র প্রমুখদের সহায়তায় তিনি বারাসত শহরে মহিলাদের জন্যে প্রথম বিদ্যালয় স্থাপনের অন্যতম কারিগর ছিলেন। ১৮৪৬-১৮৫৪ বারাসত গভর্নমেন্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।
সেখানে কৃষি বিদ্যালয় স্থাপনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। কুলুটোলা ব্রাঞ্চ স্কুলের প্রধান শিক্ষকরূপে আট বছর দায়িত্ব পালন করেন। তার চেষ্টায় স্কুলটির নাম পরিবর্তিত হয়ে হেয়ার স্কুল হয়। ১৮৬৩ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজের অস্থায়ী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ১৮৬৭ সালে ওই পদে স্থায়ী হয়ে আমৃত্যু কাজ করেন।
বাংলার নবজাগরণে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল। স্ত্রীশিক্ষা প্রচারে একাধিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। বিধবাবিবাহ প্রচারেও বিদ্যাসাগরকে সাহায্য করেন। কৃষি বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান শিক্ষার সুষ্ঠু বন্দোবস্ত করেন। নারী শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য তিনি কারিগরি বিদ্যালয় স্থাপন করেন এবং বেথুন স্কুলে মেয়েদের পাঠানোর জন্য অভিভাবকদের প্রভাবিত করেন।
১৮৬৬ সালে সরকারি সংবাদপত্র `এডুকেশন গেজেট ও সাপ্তাহিক বার্তাবহ` এর সম্পাদনার ভার গ্রহণ করেন। তার পাঠ্যবইগুলো বাঙালির প্রজন্মকে ইংরেজি ভাষায় পরিচিত করেছে। এগুলো লাখ লাখ কপি বিক্রি হয়েছে এবং অধিকাংশ ভারতীয় ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
তিনি বাংলায় নারী শিক্ষার অগ্রদূত ছিলেন এবং এজন্য তাকে `প্রাচ্যের আর্নল্ড` বলা হতো। তিনি তার সময়কালে সুরাপান নিবারকরূপে সকলের দৃষ্টি ও শ্রদ্ধা আকর্ষণ করেছিলেন। বাঙালির ইংরেজি শেখার তৎকালীন প্রবণতায় তার রচিত `ফার্স্ট বুক` বইটি বাঙলার সামাজিক ইতিহাসে অক্ষয়-মূর্তি হয়ে আছে।