সংগৃহিত

সংগৃহিত

নীতিশিক্ষা বিবর্জিত উন্নয়ন ও আমাদের আন্দোলন

মারিয়া সালাম

প্রকাশিত : মার্চ ২০, ২০১৯

অশিক্ষিত, মূর্খলোকের হাতে অনেক টাকা আসলে সে বেপরোয়া হয়ে উঠে। টাকা দিয়ে দামি কাপড় কিনে, দামি হোটেলে খায়, আলিশান বাড়ি বানায়। কিন্তু, তার আচরণের কোন পরিবর্তন হয় না, যে ছোটলোক সেই ছোটলোকই থাকে, কারণ তার শিক্ষাদিক্ষা নাই, অন্তরে জ্ঞানের আলো নাই। আর নাই বলেই নিজের প্রতিও সম্মানবোধ নাই। যে নিজেকেই সম্মান দিতে শিখেনি তার কাছে আপনি আমি কি আশা করতে পারি? সে সব কুকর্ম করতে পারে।
 
 
সেভাবে, একটা দেশে শিশুদের সঠিক শিক্ষার দিকে গুরুত্ব না দিয়ে, মানুষকে মানবতার চর্চা না শিখিয়ে, অভ্যন্তরীণ নানা বিষয়ে আধুনিক নিয়ম কানুন প্রবর্তন না করে, অন্তরের শুদ্ধিকরণের বিষয়কে পাশ কাটিয়ে গিয়ে, আপনি যতই রাস্তাঘাট বানান, বড় বড় বিল্ডিং বানান আর মাথাপিছু আয় যতই বেড়ে যাক, যা লাউ তাই কদু থেকে যাবে।
 
 
অজ্ঞান জাতির টাকা হলে কি হয় তার উদাহরণ আমার দিতে হবে না, সবাই সেটা টের পাচ্ছে। অন্তত আমাদের প্রতিবেশী দেশের দিকে তাকালেই খুব বোঝা যাবে, তাদের অনেক টাকা তবু তারা খোলা স্থানে মলত্যাগ করে এই যুগেও। আমরা এখনও ছোটলোকির জায়গা থেকে সে জায়গায় যেতে পারি নি, তবে সঠিক জ্ঞানের চর্চা না হলে সে দিন আর বেশি দূরে নাই। আজ আমরা অর্থনীতি, তথ্যপ্রযুক্তি, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি অনেক দিকে এগিয়ে গেলেও, অজ্ঞতা আর দূর্নীতি আমাদের পিছে টেনে রেখেছে।
 
 
আজ আমাদের অনেকগুলো চাওয়ার মধ্যে অন্যতম হলো, সড়কে শৃঙ্খলা। সড়ক পরিবহন খাতে দূর্নীতি রুখে দিতে পারলেই, এই অরাজক অবস্থার পরিবর্তন দ্রুততম সময়েই সম্ভব। কিন্তু, আমি যে দূর্নীতিকে না বলবো সেই জন্য যে জ্ঞান চর্চার প্রয়োজন, তা আমাকে শিখতে হবে। আমাদের সন্তানদের অল্পতেই তুষ্ট হতে শিখাতে হবে। তারজন্য আমাদের নিজেদের আগে লোভ ত্যাগ করতে হবে।
 
 
আজকাল আমাদের তরুণেরা খালি মোটিভেশনাল স্পিচ শুনে। কল্পনা করতে পারেন, কি পরিমাণ হতাশায় ডুবে গেলে তরুণেরা শিল্প, সাহিত্যের বই না কিনে মোটিভেশনাল বই কিনে। বেশিরভাগ মোটিভেশনাল স্পিকারের মূল কথা, আমি গরীব ছিলাম, এই এই কূটপ্যাচালী করে অতি দ্রুত সময়ে গাড়ি, বাড়ি করেছি, বছরে দু`একবার বিদেশ যাচ্ছি, দামী কাপড় পড়ছি, আমি অনেক সফল। এরচেয়ে ফালতু চিন্তা আর কি হতে পারে। বাংলাদেশের মতো একটা দেশে জোচ্চুরি না করে অতি অল্প সময়ে মানুষ কিভাবে অনেক টাকা আয় করবে? হয় তাকে দূর্নীতি করতে হবে, নয়তো মানুষ ঠকাতে হবে। এই যে আপনার টাকা ইনকামের কথা শুনিয়ে শুনিয়ে আপনি মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে গাড়ি বাড়ি করছেন, আপনি কি দূর্নীতি করছেন না?
 
 
একবার ভাবতে হবে, দেশের প্রত্যেক তরুণ যদি আপনাদের ভাষায় সফল হতে চায়, তারা সবাই সবাইকে ঠকানোর বিদ্যা শিখতে চায়, দেশের অবস্থা কি হবে। ঐযে ছোটলোকের হাতে টাকা আসলে যা হয়, তাই হবে।
 
 
আমাদের পিতামাতা আমাদের শোনাতেন কিভাবে ক্ষুদিরাম দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছিল, কিভাবে বঙ্গবন্ধু একটা স্বাধীন দেশের জন্য নিজের জীবনের বহুবছর জেলে কাটিয়ে দিয়েছিলেন। আপনাদের মতো তিনি যদি গাড়ি বাড়ির পিছে ছুটতেন, আপনাদের আর স্বাধীন দেশে গাড়ি হাকিয়ে ঘুরে বেড়াতে হতো না, আপনারা পাকিস্তান নামক একটা অকার্যকর দেশের নিম্ন আয়ের নাগরিক থেকে যেতেন। আমাদের বড় ব্যর্থতা আমরা আর আমাদের অগ্রজদের ত্যাগের গল্প শুনি না, আমরা অলিক, অবাস্তব প্রলাপ শুনি। তাই, আমরা আজ তাদের আদর্শ থেকে অনেক মাইল দূরে সরে গিয়ে কেবল টাকার মালিক হচ্ছি, কিন্তু সভ্য হচ্ছি না।
 
 
আর হচ্ছি না বলেই, আজ এক বাংলাদেশিকে আরেক বাংলাদেশির অরাজকতার বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে হয়। আমাদের সবাইকে আবার নতুন করে চিন্তা করতে হবে, নতুনভাবে শুরু করতে হবে। আমাদের কিশোর-তরুণেরা সড়কে নিজেদের নিরাপত্তা চেয়ে দুইদিন পরপর রাস্তায় নামলে, সেটা আমাদের সবার ব্যর্থতা। আমাদের এই উন্নয়নের গৌরব তাতে কেবলই খাট হয়ে যায়, কাজের কাজ কিছু হয় না।