নিজে নিজেকে খাওয়া

প্রাচ্য তাহের

প্রকাশিত : মে ০৯, ২০১৯

হিন্দু বা বৌদ্ধরা না খেয়ে থাকলে তাকে বলা হয়, উপবাস। মুসলিমরা রোজা রাখলে তাকে বলা হয়, সিয়াম। খ্রিস্টানরা না খেয়ে থাকলে তাকে বলা হয়, ফাস্টিং। বিপ্লবীরা না খেয়ে থাকলে তাকে বলা হয়, অনশন। আর চিকিৎসা বিজ্ঞানে উপবাস করলে তাকে বলা হয়, অটোফেজি।

২০১৬ সালে নোবেল কমিটি জাপানের চিকিৎসক ওশিনরি ওসুমিকে অটোফেজি আবিষ্কারের জন্যে পুরষ্কার দেয়। এরপর থেকে আধুনিক মানুষেরা ব্যাপকভাবে উপবাস করতে শুরু করে। Autophagy শব্দটি গ্রিক শব্দ। Auto অর্থ নিজে নিজে, এবং Phagy অর্থ খাওয়া। সুতরাং অটোফেজি মানে নিজে নিজেকে খাওয়া। অটোফেজির এই মানে অনেকেই এ অর্থে নিতে পারে, যে, চিকিৎসা বিজ্ঞান নিজের মাংস নিজেকেই বুঝি খেতে বলছে।

আসলে তা কিন্তু মোটেও নয়। শরীরের কোষগুলো বাইরে থেকে কোনো খাবার না পেয়ে নিজেই যখন নিজের অসুস্থ কোষগুলো খেতে শুরু করে, তখন চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় তাকেই বলে অটোফেজি, বা নিজেই নিজেকে খাওয়া।

আমাদের ঘরে যেমন ডাস্টবিন থাকে অথবা আমাদের কম্পিউটারে যেমন রিসাইকেল বিন থাকে, তেমনি আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষের মাঝেও একটি করে ডাস্টবিন আছে। সারা বছর শরীরের কোষগুলো খুব ব্যস্ত থাকার কারণে ডাস্টবিন পরিষ্কার করার সময় পায় না। ফলে কোষগুলোতে অনেক আবর্জনা ও ময়লা জমে যায়। শরীরের কোষগুলো যদি নিয়মিত তাদের ডাস্টবিন পরিষ্কার করতে না পারে তাহলে কোষগুলো একসময় নিষ্ক্রিয় হয়ে শরীরে বিভিন্ন প্রকারের রোগের উৎপন্ন করে।

ক্যান্সার বা ডায়াবেটিসের মতো অনেক বড় বড় রোগের শুরু হয় এখান থেকেই। মানুষ যখন খালি পেটে থাকে তখন শরীরের কোষগুলো অনেকটা বেকার হয়ে পড়ে। কিন্তু তারা তো আর আমাদের মতো অলস হয়ে বসে থাকে না। তাই প্রতিটি কোষ তার ভিতরের আবর্জনা ও ময়লাগুলো পরিষ্কার করতে শুরু করে দেয়। কোষগুলোর আমাদের মতো আবর্জনা ফেলার জায়গা নেই বলে তারা নিজের আবর্জনা নিজেই খেয়ে ফেলে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই পদ্ধতিকে বলা হয় অটোফেজি। শুধুমাত্র এই জিনিসটা আবিষ্কার করেই জাপানের ওশিনরি ওসুমি (Yoshinori Ohsumi) ২০১৬ সালে নোবেল পুরস্কারের সম্মানিত হলেন।