নিজার কাব্বানি
নিজার কাব্বানির কবিতা ‘আমার কোনো ক্ষমতা নেই’
বাঙ্লায়ন: রথো রাফিপ্রকাশিত : এপ্রিল ০৮, ২০২২
কোনো ক্ষমতা নেই আমার তোমাকে বদলে দেবার
কিংবা তোমার মতো করে ব্যাখ্যা করার
কখনো বিশ্বাস করো না, কোনো পুরুষ মেয়েকে বদলে দিতে পারে
যেসব লোক তোমাকে বিশ্বাস করাতে চায়
ভাবে যারা
মেয়েদের তারা সৃষ্টি করেছে
তাদের পাঁজরের এক হাড় থেকে
পুরুষের পাঁজরার হাড় থেকে আবির্ভূত হয় না মেয়েরা, নাহ কখনোই না,
ও তো নিজেরই গর্ভের সৃষ্টি
যেমন জলের গভীর থেকে জেগে ওঠে মাছ
আর যেমন স্রোত নদী থেকে শাখার মতো আলাদা হয়ে পড়ে
আর পুরুষইতো মেয়েদের চোখের সূর্য ঘিরে পাক খায়
আর ভাবে, সে একটা জায়গায় গেড়ে বসতে পেরেছে
আমার কোনো ক্ষমতা নেই তোমাকে মানানোর
কিংবা তোমাকে নিয়ন্ত্রণ করার
কিংবা তোমার আদিম প্রবৃত্তিকে খাটো করে দেখার
আর অসম্ভব এ কাজ
তোমার ওপর যাচাই করেছি বিবেকবুদ্ধি আমার
যাচাই করেছি আমার বধিরতাকেও
না কোনো নির্দেশ, না কোনো মোহ
তোমার ওপর প্রভাব ফেলে না কিছুই,
আদিমই থাকো তুমি আছো যেমন
আমার ক্ষমতা নেই তোমার অভ্যাসগুলোকে ভেঙে ফেলার
ত্রিশটা বছর তুমি পছন্দ করে আসছো এসবই
তিনশো বছর ধরে
একটা ঝড়কে
পুরে রেখেছো বোতলেই
এক শরীর যা প্রাকৃতিকভাবেই চেনে পুরুষের গন্ধকে
একে আঘাত করে প্রাকৃতিকভাবেই
জিতে যায় এর ওপর প্রাকৃতিকভাবেই
পুরুষ নিজেকে নিয়ে যা বলে বিশ্বাস করো না তা কখনোই
বিশ্বাস করো না যে, সে এমন কেউ যে কবিতা সৃষ্টি করেছে,
সৃষ্টি করেছে সন্তান
মেয়েরাই তো সৃষ্টি করেছে কবিতা
আর পুরুষেরা তো তাদের গায়ে স্বাক্ষরই করেছে শুধু
মেয়েরাই তো জন্ম দিয়েছে শিশুদের
আর পুরুষতো মাতৃসদনে স্বাক্ষর করে জানায়
সে-ই পিতা
তোমার স্বভাব বদলানোর ক্ষমতা আমার নেই
তোমার কোনো কাজেই আসছে না আমার বইগুলো
আর আমার আশ্বাস তোমাকে কোনো আশ্বাসই যোগায় না
না, আমার পিতৃসুলভ পরামর্শ কোনো মঙ্গলই করবে না তোমার
নৈরাজ্যের, পাগলামির, কারো অধিকারে
না থাকার রানি হলে তুমি
থাকো এভাবেই
তমসা ফুঁড়ে বেড়ে ওঠা নারীত্বের বৃক্ষ হলে তুমি
দরকার নেই আলো বা জলের
তুমি হলে সাগর-কুমারী যে সমস্ত পুরুষকেই ভালবাসতো
আর ভালবাসতো না কাউকেই।
সমস্ত পুরুষের সাথেই ঘুমোতো... আর ঘুমোতো না কারো সাথেই
তুমিই যাযাবর রমণী যে গমন করতো সকল গোষ্ঠীর সাথেই
আর কুমারী হিসেবেই আসতো ফিরে
থাকো-না সেভাবেই।
কবি পরিচিতি: নিজার কাব্বানির জন্ম সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে। মা ফাইজা আকবিক তুর্কি বংশোদ্ভূত। মিঠনাহ আল-শাহম নামে দামেস্কের একটি পাড়াতে কাব্বানী বেড়ে ওঠেন এবং ১৯৩০ থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত দামেস্কের ন্যাশনাল সায়েন্টিফিক কলেজ স্কুলে পড়াশোনা করেন। স্কুলটি ছিল তার বাবার বন্ধু আহমদ মুনিফ আল-এইদির মালিকানাধীন এবং পরিচালিত। পরে তিনি দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন এবং ১৯৪৫ সালে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
কলেজে ছাত্র থাকাকালীন তিনি দ্য ব্রুনেট টোল্ড মি নামে তার প্রথম কবিতা সংকলন লিখেছিলেন, যা তিনি ১৯৪২ সালে প্রকাশ করেন।। এটি ছিল রোমান্টিক শ্লোকের সংকলন যা দামেস্কের রক্ষণশীল সমাজ জুড়ে আলোড়ন তোলে। এটিকে আরো গ্রহণযোগ্য করার জন্য কাব্বানী এটি মুনির আল-আজলানিকে (আল-আজলানি তৎকালীন সিরিয়ার শিক্ষামন্ত্রী এবং শীর্ষস্থানীয় জাতীয়তাবাদী নেতা) দেখিয়েছিলেন, আজলানি কবিতাগুলি পছন্দ করেন এবং নিজারের প্রথম বইয়ের প্রস্তাবনা লিখে তাকে সমর্থন করেন।
আইন বিষয়ে স্নাতক হওয়ার পর কাব্বানি সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য কাজ করেন। বৈরুত, কায়রো, ইস্তাম্বুল, মাদ্রিদ ও লন্ডনসহ বেশ কয়েকটি রাজধানী শহরে সাংস্কৃতিক দূত হিসাবে কাজ করেন। ১৯৫৯ সালে যখন সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়, কাব্বানী চীনের দূতাবাসে ভাইস-সেক্রেটারি নিযুক্ত হন। তিনি এই বছরগুলিতে প্রচুর লিখেছিলেন এবং এই সময়ের কবিতাগুলি তার সেরা কবিতা ছিল। তিনি ১৯৬৬ সালে পদত্যাগ না করা পর্যন্ত কূটনৈতিক কাজ চালিয়ে যান। তখন তিনি বৈরুতে তার নিজের নামে একটি প্রকাশনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
কাব্বানীর দুই বোন ছিল, উইসাল ও হাইফা। তার তিন ভাই ছিল: মুতাজ, রশিদ ও সাবাহ। সাবাহ কাব্বানি ১৯৬০ সালে সিরিয়ান রেডিও এবং টিভির পরিচালক এবং ১৯৮০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে সিরিয়ার রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হন।