নারী হিসেবে আমি যেসব সুবিধা নিতে চাই না
মারিয়া সালামপ্রকাশিত : এপ্রিল ১২, ২০১৮
প্রথমে বার্নিং ইস্যু নিয়ে বলি। না, আমি কোটা সুবিধা নিয়ে চাকরিতে ঢুকতে চাই না। নিজের মেধার ওপরে আমার বিশ্বাস আছে। প্রতিযোগিতার বাজারে আমি যদি লিখিত পরীক্ষায় পাশ করতে পারি, মৌখিকে উতরে যাবার যোগ্যতাও আমার আছে। এতটুকু স্মার্টনেস না থাকলে আমি কোন সাহসে সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে বসতে চাই? শিক্ষাজীবনের পুরোটা আমি আমার যোগ্যতা দিয়ে পার করেছি। তাই আমি সত্যিই কোটা সুবিধা চাই না।
একজন সক্ষম নারী হিসেবে দেনমোহর নিয়ে বিয়ে বসা আমার জন্য অপমানজনক। নিজেকে পুরুষের কাতারে ভাবছি, অথচ আমার সমান একজন ব্যক্তির কাছে আমার নিরাপত্তা চেয়ে দেন-দরবার ও দর কষাকষি করছি, তাও আবার এমন একটা সময়ের কথা ভেবে, যখন আমি তার সাথে থাকব না। একটু ভেবে দেখেন, কী অবমাননাকর বিষয়! দেনমোহরের ধর্মীয় ব্যাখ্যা থাকতে পারে, সেটা আমার বিষয় না। আমি নিজেকে সেক্যুলার ভাবি। তাই ধর্ম বিষয়ক চিন্তা আমি করি না। তবে সামাজিক দিক থেকে দেনমোহরের একটা গুরুত্ব আছে। সেটা অন্য আলাপ, আমি এখানে কেবল সক্ষম নারীদের কথা বলছি, যারা নিজেদের পুরুষের সমকক্ষ ভাবে বা সে যোগ্যতা রাখে।
সংসারের অর্থনৈতিক দায়িত্ব থেকে মুক্তি আমি চাই না, বরং আমার উপার্জনের ওপর ভিত্তি করে খরচের মাত্রা নির্ধারণ করতে চাই। নিজেকে একজন পুরুষের সমান জায়গায় দেখতে হলে, সংসারে অবশ্যই আমার উপার্জনের মাত্রা অনুযায়ী আমার কন্ট্রিবিউশন থাকতে হবে। অনেককেই বলতে শুনেছি, আপনি আপনার বেতনের টাকা এভাবে খরচ করছেন সবার জন্য, আপনার ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই? এটাতো বাড়ির পুরুষদের দায়িত্ব। আমার কথা হলো, সব দায়িত্ব যদি পুরুষরাই নেবে, তবে আমাদের কাজ কি? কেনইবা আমরা পড়ালেখা শিখি? কেন চাকরি করি? নিজের আখের গোছাতে? আমরা এত স্বার্থপর? না মশাই, নারীরা মায়ের জাত। তারা স্বার্থপর না, হতেও পারে না। তাই এসব উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে তাদের নিজের অধীনস্থ করে রাখার পায়তারা আপনাকে এখানেই বন্ধ করতে হবে। নারীরা জেনে গেছে, বুঝে গেছে, অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ আর অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত স্বাধীনভাবে নিতে পারলেই কেবল তাদের অধীনস্থতা থেকে মুক্তি মিলবে। আর আমার বাবা, ভাই, পুরুষ অংশীদার কেবল খরচ করে যাবেন, তবে তাদের ভবিষ্যত নিরাপত্তা কি? আমার বাবা যদি মাছের মাথাটা আমার ভাইকে না দিয়ে আমাকে দেন, আমার উপরেই দায়িত্ব পরে তার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার দিকটা দেখার।
নারী হিসেবে কর্মক্ষেত্রে কোনও সুবিধা নিতে চাই না। নারী-পুরুষের বেতন বৈষম্য যেমন মেনে নেয়া যায় না, তেমন নারী বলে পুরুষ সহকর্মীর চেয়ে কম কাজ করবো, সেটাও মেনে নেয়া কঠিন। সমান অধিকার মানেই সমান দায়িত্ব পালন। আর একটা বিষয় আমি চাই না, বাসে নারী আসন। সত্যিই চাই না। কিন্তু এই জায়গাতেই আমি সত্যি অসহায় আর পুরুষের চেয়ে দুর্বল। কেন বলছি একথা? ভাবছেন আমার সব বাহাদুরি আর ফটরফটর এখানেই শেষ! নারে ভাই, যেসব নারীরা প্রতিদিন পাবলিক বাসে যাতায়াত করে আর যেসব ভাইদের পরিবারের নারী সদস্যরা বাসে নিয়মিত ওঠে, তারা আমাকে এখানে সঠিকভাবে বুঝবে আশা করি। আমি চাই, বাসে নারী আসন সেইদিন উঠে যাক, যেদিন বৃদ্ধা বা গর্ভবতী নারীকে দেখে আমরা (উভয় জেন্ডার) উঠে দাঁড়িয়ে তাকে বসতে দিতে পারার মতো সভ্য হয়ে উঠবো। সন্তানকোলে নারীদের নিজে উঠে বসতে দিব। পাশে বসা মেয়েটির অর্ধেক সিট দখল করে কোনও লোক বসবে না বা পাশে দাঁড়ানো মেয়েটির গায়ে ইচ্ছা করে বারবার পড়ে যাবে না।
লেখক: সংবাদকর্মী