নাটক ও নাট্যকলা: দীর্ঘ পথ চলা

পর্ব ৮

রহমান চৌধুরী

প্রকাশিত : জুলাই ২৭, ২০২০

প্রাচীন গ্রীক নাটকে বক্তব্য দেয়া যত সহজ ছিল, শেক্সপিয়ারের যুগে তা ছিল না। গ্রীক নাটক প্রদর্শিত হতো রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় নাগরিকদের জন্য। গ্রীক রাষ্ট্রে শুধুমাত্র সুবিধাভোগীরা ছিল নাগরিক অধিকার প্রাপ্ত, এরা ছিল কমবেশি রাজনীতি সচেতন এবং বোদ্ধা দর্শক। সেজন্য প্রাচীন গ্রীসের নাটকে রাষ্ট্র ও সমাজ সম্পর্কিত গুরুগম্ভীর বক্তব্য দেয়াটা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। কিন্তু শেকসপিয়ারের যুগে তা সম্ভব ছিল না, কারণ নাটক দেখার জন্য কোনো বিশেষ ধরনের বোদ্ধা দর্শকরাই সেখানে থাকতো না, নানা ধরনের দর্শকদের উপস্থিতি ছিল। শিক্ষিত-মূর্খ সকলেরই নাটক দেখার অধিকার ছিল এবং নিজের পকেটের কড়ি খরচ করে বিভিন্ন ধরনের লোক নাটক দেখতে ভিড় জমাতো। রাষ্ট্রের নয়, নিজের খরচ করা কড়ির বিনিময়ে শেক্সপিয়ারের দর্শকরা নাটকে কিছুটা প্রমোদ আশা করতো। সেজন্য দর্শকদের খুশি রাখার লক্ষ্যে নাটকে বহু কিছুর মিশ্রণ ঘটতো। দর্শকদের খেলো রুচিকে যেমন তৃপ্ত করতে হতো, তেমনি সত্যিকারের জ্ঞানীগুণী মার্জিত রুচির দর্শকদের মনের খোরাক জোগাতে হতো। শেক্সপিয়ার সেটা খুব সফলভাবে করতে পেরেছিলেন বলেই তিনি সমকালীন দর্শকদের চিত্তকে জয় করতে পেরেছেন। নাটক সেদিনও উদ্দেশ্যহীন ছিল না, শুধুমাত্র বিনোদনও ছিল না। বিনোদনের পাশাপাশি শেক্সপিয়ার বিশাল সব তত্ত্ব আর উদ্দেশ্য তার নাটকে প্রচার করে গেছেন। লোককে বিনোদন দিতে তিনি যেমন কার্পণ্য করেননি, তেমনি চিন্তারও খোরাক যুগিয়েছেন। শুধু শেক্সপিয়ার নন, তার সমসাময়িক সকল মহৎ নাট্যকাররাই তাই করেছেন। যারা শুধু বিনোদন বিলিয়েছেন তারা টিকে থাকতে পারেননি পরবর্তীকালে, ইতিহাসের গর্ভে হারিয়ে গেছেন। ইতিহাসের আলোকে সত্যিকারের নাটক তাই, যার উদ্দেশ্য ছিল এবং যে নাটক ইতিহাসের পক্ষে কথা বলে গেছে। ইতিহাসের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দাঁড় করাতে চেষ্টা করেছে।

গ্রীক নাটকের পর শেক্সপিয়ার বা তার সময়কালটাই নাটকের আর একটি প্রধান ধারা হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আছে। নাটক মঞ্চায়ন থেকে শুরু করে নাটকের মূল উপাদান, নাটকীয় সংঘাত, সংলাপের চাতুর্য, দার্শনিক চিন্তা সবকিছু এলিজাবেথের যুগেই নাট্যকাররা উদ্ভাবন করেছিলেন। গ্রীক নাটকের মঞ্চয়নরীতি এবং দেবদেবীদের নিয়ে নাট্যরচনার পরিকাঠামো ভেঙে দেন এ যুগের নাট্যকাররা। স্মরণ রাখতে হবে এলিজাবেথের যুগে নাটকের উত্তরণ হঠাৎ হয়নি, এর ক্রমপর্যায় ছিল। প্রাথমিক স্তরে টমাস সাকভিল ‘গোরবডাক’ নামে যে বিয়োগান্ত নাটক রচনা করেছিলেন সেটির মান বিশেষ উন্নত ছিল না। নাটক হিসেবে গোরবডাক নাম কিনলেও মঞ্চস্থ করার উপযোগী হতে পারেনি। সাকভিল পরবর্তী নাট্যকার জোকস্তাও বিয়োগান্ত নাটক রচনা করেছিলেন। জর্জ গ্যাসকারেনের রচিত ব্যঙ্গধর্মী নাটক ‘সাপোজেস’ মঞ্চ সফল প্রযোজনা ছিল। নাট্যকার কিড মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে জাতির দৈনন্দিন জীবনের সুখ-দুঃখ-সংঘাতের কাহিনীকে তার নাটকগুলিতে রূপায়িত করতেন। কিন্তু জনপ্রিয়তা ও প্রতিভার মাপকাঠিতে শেক্সপিয়ারের পূর্ব সময়ের ক্রিস্টোফার মার্লো শ্রেষ্ঠ নাট্যকার ছিলেন। মার্লোর নাটকের চরিত্রগুলির সংলাপ দর্শকদের মনের কথা উচ্চারণ করতো। ফলে তার নাটকগুলির জনপ্রিয়তার ঘাটতি ছিল না। নাটকের সংলাপ দর্শকদের যে উদ্দীপ্ত করে, নাটক রচনায় সংলাপের গুরুত্ব কতোটা এ থেকে বোঝা যায়। চমৎকার চমৎকার সংলাপ এবং উত্তেজনাপূর্ণ আখ্যানের জন্যই শেক্সপিয়ারও মার্লোর পরবর্তীকালে জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন।

নাট্যকার হিসাবে শেক্সপিয়ারের আবির্ভাব অন্যসব নাট্যকারদের কীর্তিকে ম্লান করে দিয়েছিল। তার পুরো নাম উইলিয়াম শেক্সপিয়ার, তিনি গ্রামের বিদ্যালয়ে পড়াশুনার পাঠ চুকিয়ে কম বয়সেই নাট্যদলে চাকরি নেন। তিনি প্রথম জীবনে ছিলেন নাট্যদলের সহিস; যেসব দর্শকরা নাটক দেখতে আসতো তাদের ঘোড়াগুলি দেখাভাল করার দায়িত্ব ছিল তার। পরে তিনি নাট্যকার হিসেবে দলে জায়গা করে নেন। শেক্সপিয়ারের সময়কালটা ছিল ইংল্যান্ডে জাতীয়তাবাদের উন্মেষের যুগ। যখন সংসদের অধিকার আদায় নিয়ে স্বৈরশাসনের সঙ্গে চলছিল সংগ্রাম, যখন খ্রীস্টধর্ম প্রতিপত্তির চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার পর ধর্মের বন্ধন খর্ব করার জন্য মধ্যবিত্ত শ্রেণি লড়াইয়ে নেমেছিল, যখন নবজাগরণের যুগের অন্যতম শর্ত ছিল যুক্তিবাদ; নাট্যকার শেক্সপিয়ার সেই যুগে লিখতে আরম্ভ করেন তার কালজয়ী নাটকগুলো। তার নাটকগুলো যুক্তিবাদের ধারক হলেও সর্বক্ষেত্রে ত্রুটিমুক্ত ছিল না। তিনি নাটকে ভুতপ্রেত, কুসংস্কারাচ্ছন্ন চিন্তাধারাও আমদানি করেছিলেন। কিন্তু পাশাপাশি আবার তার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন চিন্তাজগতের গভীরতা এবং রচনাগুলোতে অভূতপূর্ব নাট্যসংলাপ সৃষ্টির দক্ষতা নজরে পড়ে। নানা গুণাবলির মিশ্রণে একসুরে বাঁধা তার প্রতিভাকে বিশ্ববাসী আজও নতশিরে অভিনন্দন জানায়। সন্দেহ নেই, শেক্সপিয়ার জগত মাতানো এক নাট্যধারার জন্ম দিয়েছিলেন। নাটকের শক্তিকে সপ্রকাশ করেছিলেন।

নাট্যচর্চার মূলধারা নানা প্রশ্নবোধক চিহ্নসহ শুধু এগিয়ে গেছে মানব সভ্যতার বিভিন্নকালে। যা টিকবার ছিল না ঝরে গেছে। দর্শকদের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রশ্নে নাট্যচর্চা বারবার গতি পথ পরির্বতন করেছে। ক্রিস্টোফার কডওয়েল মনে করতেন, মানব ইতিহাসে কোনো কালই এত বিচিত্র ও গতিশীল ছিল না যেমন দেখা যায় এলিজাবেথীয় যুগ থেকে প্রসারিত আজকের যুগটি। বুর্জোয়া যুগ সম্পর্কেই তিনি এ কথা বলেছিলেন। বুর্জোয়া অর্থনীতি অনবরত আনয়ন করে নিজের উৎপাদনের উপকরণে পরিবর্তন। বিচিত্র গতিই বুর্জোয়া শিল্পকলাকে বারবার নতুন চেহারা দিয়েছে, স্থির হয়ে দাঁড়াতে দেয়নি ক্ষণিকের জন্য। এলিজাবেথীয় যুগের পর থেকে নাটকের ক্ষেত্রেও বারবার তাই দেখতে পাওয়া যাবে। রানী এলিজাবেথের যুগ বা শেক্সপিয়ারের যুগ ছিল বুর্জোয়া উত্থানের যুগ। বুর্জোয়া বিপ্লব মানুষকে এই মর্যাদাটাই দিতে চেয়েছিল মানুষ নিজের পরিচয়ে নিজেকে মেলে ধরবে, সে মাথা উঁচু করে সমাজের সামনে দাঁড়াবে। জমিদারদের ভূমিদাস হিসাবে তারা মানবিক ইন্দ্রিয়ের সুখ দমিত করে পশুর স্তরে নেমে যাবে না। চক্ষু, কর্ণ-রসনা প্রভৃতি ইন্দ্রিয়কে সামন্তযুগ ভোঁতা করে তুলেছিল, বুর্জোয়া বিপ্লব ইউরোপের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে তাদের ইন্দ্রিয়গুলি মার্জিত করে তোলার অধিকার এনে দিলো। নিশ্চয় নানা বৈপরীত্যের ভিতর দিয়ে আর অবশ্যই টাকার বিনিময়ে। কার পিতা কে, কার কোন্ বংশ, কোন্ কুলে কার জন্ম সেটা সেখানে কখনই প্রাধান্য পায়নি। প্রাধান্য পেয়েছিল নগদ কড়ি। কিনবার মতো কড়ি আছে কি না সেটাই প্রধান বিবেচ্য ছিল সমাজে। ইউরোপীয় জাতপাতের, বর্ণভেদের অন্তিম ঘোষণা করেছিল বুর্জোয়া বিপ্লব।

বুর্জোয়া উত্থানপর্বে যেমন বণিকদের প্রয়োজনে গড়ে উঠলো শিল্প কারখানা, তেমনি প্রয়োজন পড়লো কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য নিত্য নতুন অঞ্চল। পণ্যের জন্য নতুন নতুন বাজারের সন্ধান চললো। সেজন্যই দেখা যায় নতুন ভূখণ্ড আবিষ্কারে ইউরোপীয় অভিযাত্রীদের দুঃসাহসিক প্রয়াস। ব্রিটিশ, ফরাসী, স্পেনিশ ও পর্তুগীজরা নতুন নতুন ভূখণ্ডে নিজেদের দখল প্রতিষ্ঠার জন্য পরস্পরের সাথে দীর্ঘমেয়াদী সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। শক্তিশালী নৌবহরের সাহায্যে স্পেনের মতো শক্তিকে ইল্যান্ড সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত করে দেয়, সেই আধুনিক সজ্জায় সজ্জিত নৌবহরের এবং সমরোপকরণের যোগান দিয়েছিল এই বণিক শ্রেণি। স্যার ফ্রান্সিস বেকনের মতো দার্শনিকও যুদ্ধকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। নতুন দেশ আবিষ্কারের মধ্যে তিনি দেখেছেন ইংল্যান্ডের বণিক শ্রেণির অফুরন্ত সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত। সে যুগে বণিকদের পৃষ্ঠপোষকতায় কলম্বাস পৌঁছলেন আমেরিকায়, নাবিক ভাস্কো-ডা-গামা ভারতে। ফ্রান্সিস ড্রেক সমূদ্রপথে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করলেন। ফার্ডিনান্ড ম্যাগেলান প্রশান্ত মহাসাগর আবিষ্কার করে সমুদ্র ঘুরে ঘুরে পৌঁছুলেন ফিলিপাইনে।

সকল সমুদ্র যাত্রার মূল লক্ষ্যটাই ছিলো ভিন্ন দেশ জয় করা এবং অন্যের সম্পদ লুটপাট। সেইজন্য তৎকালীন রচনায় আমরা দেখতে পাই বণিক, বণিকবৃত্তি, সমূদ্র পাড়ি, ভৌগোলিক অভিযানের অবিচ্ছিন্ন জয়গান। লুটপাটকারী, অন্যের দেশ দখলকারীরা হয়ে উঠছে সাহিত্যের নায়ক। টিউডর যুগের সাহিত্যে ছড়িয়ে আছে এর অসংখ্য উদাহরণ। টমাস করিয়ট তার লেখনি চালনা করেছেন নৌযাত্রাকে প্রলুব্ধ করতে। হ্যালিউট তার পুরো গ্রন্থ কাজে লাগিয়েছেন দূঃসাহসিক নৌযাত্রার বর্ণনায়। হ্যাসলটন ও মান্ডে তাদের বিদেশযাত্রার কাহিনি লিখে নাবিক জীবনের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের চেষ্টা করেছেন। সমুদ্রপথে অজানার সন্ধানে পাড়ি দেয়ার উদ্যোগে সাহিত্যের ভূমিকা ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য। থর্ন, ইডেন এবং গিলবার্ট সমুদ্র অভিযানভিত্তিক কাহিনি রচনায় অগ্রণী ছিলেন। ইংরেজ নাবিকদের নানা অভিযানের উপর প্রামাণ্য গ্রন্থ ‘ভয়েজেস’. ‘প্রিন্সিপ্যাল নেভিগেশন’, ‘ডিসকভারি অব দি ইংলিশ নেশান’ খুবই সমাদর লাভ করে। সে সময়ের রচনায় আর এসেছে মুনাফার জয়গান, প্রোটেস্টান্ট ধর্মের জয়গান। নিজ যুগের চেতনা সেখানে প্রতিফলিত। কারণ শাসক শ্রেণি শিল্প-সাহিত্যকে নিয়ন্ত্রণ করে। শেক্সপিয়ার সেখানে ব্যতিক্রম। একই সাথে তিনি নিজ যুগের প্রচারক, আবার সমালোচক। নাট্য ইতিহাসের গতি প্রকৃতিতে সবসময়ই এই সত্য পর্যবেক্ষণ করা যাবে। নাটক কখনই সম্পূর্ণ কাল ধরে শুধু বিনোদন ছিল না, নিজ যুগের দাবি তাকে মেটাতেই হয়েছে, পুরানো চিন্তার বিরুদ্ধেও তাকে দাঁড়াতে হয়েছে। আবার সমকালের অন্যায়ের বিরুদ্ধেও তার প্রতিবাদ ঘোষিত হয়েছে। সেজন্য প্রাচীন গ্রীস যুগের মতো শেক্সপিয়ারের যুগেও নাটক শিল্পের জন্য শিল্প ছিল না। ছিল নতুন নতুন চিন্তার প্রচার।

নবজাগৃতির পর্বে উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের পূর্বসূরীদের মধ্যে সর্বপ্রধান ছিলেন ক্রিস্টোফার মার্লো। বলা যায় তার পূর্বসূরীদের মধ্যে একমাত্র তিনিই ছিলেন যুগোত্তীর্ণ প্রতিভার অধিকারী। মাত্র ত্রিশ বছর বয়সে তিনি নিহত হন, যখন কেবলমাত্র চারখানা নাটক লিখেছেন। মার্লোর সঙ্গে একই বছরে জন্মেছিলেন শেক্সপিয়ার; তবে শেক্সপিয়ার তার নাট্যজীবন বেশ দেরিতেই শুরু করেছিলেন। মার্লোর প্রথম নাটক ‘টাম্বারলেইন দ্য গ্রেট’ এ তৈমুর লংয়ের বিশাল বিশ্বজয়ের পরিকল্পনা সে যুগের ইংরেজ জাতির মানসলোকেরই পরিচয় বহন করে। শেক্সপিয়ারের পূর্বে তিনিই নতুন যুগের আশা আকাঙ্ক্ষাকে দর্শকের সম্মুখে তুলে ধরেন। টাম্বারলেইন নাটক হিসাবে দর্শকদের মানোযোগ কেড়ে নিয়েছিল বর্ণোজ্জ্বল কথায়, বীরত্বময় কাহিনিতে এবং এর গুরুগাম্ভীর্যে। টাম্বারলেইনে রয়েছে এক বীরচরিত্রের পরপর জয় লাভের গাথা। মার্লো প্রমাণ করলেন ধর্মের বাণী নয়, মানুষের বীরত্ব ও চরিত্রের মাহাত্ম্য দর্শকদের অনেক বেশি আকর্ষণ করে। দর্শক বিস্ময়ে চকিত হয়ে এখানে দেখে একটি মানুষের কী ক্ষমতা, কতো সাধারণ জন্ম থেকে সে কতো উচ্চে উঠে আসতে পারে। ভাগ্য এখানে দৈবায়ত্ত নয়, মানুষের চিন্তা ও পরিশ্রমের ফসল। মার্লো প্রমাণ করলেন, চরিত্রের মুখে চমৎকার চমৎকার সংলাপ দর্শককে মুগ্ধ করে। গভীর অর্থবহ সংলাপ বলার মধ্য দিয়েই চরিত্র নিজেকে দর্শকের চোখে বিশাল করে তুলতে পারে।

মার্লোর দ্বিতীয় নাটক ‘দ্য ট্র্যাজিক্যাল হিস্ট্রি অব ডক্টর ফস্টাস’। ডক্টর ফস্টাস নাটকে দেখা গেল, তার অতি উচ্চাশাই হয়েছে তার পতনের কারণ। নায়ক চরিত্র ফস্টাস চারদিক থেকেই অন্যায়-বুদ্ধির জালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ডক্টর ফস্টাস একটি বিয়োগান্ত নাটক কিন্তু বিয়োগান্ত নাটকের নায়ককে যে প্রখ্যাত বংশের রাজা বা রাজপুরুষ হতে হবে এই প্রাচীন ধারণা ও প্রথাগত পন্থাকে মার্লো এ নাটকে ভেঙে দিয়েছেন। নাটকের প্রধান চরিত্র ফস্টাস এখানে কোনো রাজপুরুষ নয়, সে ছিল তার যুগের সমস্ত মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী। অসাধারণ পণ্ডিত হলেও সে সাধারণ রঙ্গমঞ্চের সাধারণ মানুষ। ডক্টর ফস্টাস রচনার পর থেকে নায়ক চরিত্রে বিপ্লব ঘটে গেল। রাজচরিত্রেই কেবল শোকগাথা সম্ভব নাট্যকাররা আর তা মনে করলেন না। মার্লো দেখালেন দীনতম চরিত্রের দ্বারাও শোকগাথার গভীরতম আবেগ সৃষ্টি করা সম্ভব। নাটকটির দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যপূর্ণ দিক হলো, শোকগাথার উপাদানকে ভাগ্য এবং দৈববাদের হাতে ছেড়ে না দিয়ে নীতিবাদের সাথে সংমিশ্রণ ঘটানো। নাটক এভাবেই দেবতা ও ধর্মীয় বিশ্বাসের হাত থেকে মানুষকে মুক্ত করতে আরম্ভ করে। চলবে